বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের বিষয়ে আজ সোমবার প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেবে তথ্য মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, এই টিভি সম্পর্কে কিছু অভিযোগ আমাদের গোচরীভূত হয়েছে। এরই আলোকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে সরকার তার অবস্থান আরও স্পষ্ট করবে।
রোববার প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে টেলিভিশনের মালিক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকের শুরুতে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এ তথ্য জানান।
পিস টিভি প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই টিভি বহু ক্ষেত্রে মুসলমান সমাজের কোরান, সুন্নাহ, হাদিস, বাংলাদেশের সংবিধান, দেশজ সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না। এছাড়াও তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, বর্তমান গণতান্ত্রিক ও নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা করা হয়েছে। এগুলো পরিকল্পিত হামলা। এ হামলার পেছনে আর কারা জড়িত রয়েছে, তা বের করার জন্য তদন্ত হচ্ছে।
হামলার দুই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তথ্য মন্ত্রী বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা মোকাবিলা করতে সরকার সক্ষম। বর্তমানে সরকারের একটাই নীতি ওদের (জঙ্গিদের) ধ্বংস করে দেওয়া। শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গি দমনে এক পায়ে খাড়া। তিনি এসব ঘটনাকে ধর্মবিরোধী বলেও উল্লেখ করেন। তিনি জঙ্গিবাদ দমনে গণমাধ্যমের সাহায্য কামনা করে বলেন, জঙ্গিবাদ উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের শত্রু।
সোমবার থেকেই বাংলাদেশে পিস টিভি বন্ধ হচ্ছে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে হাসানুল হক ইনু বলেন, যেহেতু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার রয়েছে তাই আজ (রোববার) সময় নেই, কাল (সোমবার) সকাল থেকে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা নেব।
ভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গিবাদে উৎসাহ যোগানোর’ অভিযোগ ওঠার পর রোববার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশে তার পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের এই সিদ্ধান্ত হয়।
জাকির নায়েক পরিচালিত মুম্বাইভিত্তিক ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান হল এই পিস টিভি। এ টিভিতে ধর্ম নিয়ে আলোচনায় ইসলামের যে ব্যাখ্যা তিনি দেন, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
গত ১ জুলাই গুলশানে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম জঙ্গি হামলায় সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে অন্তত দুইজন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জাকির নায়েকের মত ইসলামী বক্তাদের নিয়মিত অনুসরণ করতেন। তার কথায় প্ররোচিত হয়ে ভারতের কয়েকজন তরুণ আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে বলেও খবর এসেছে।
এ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর জাকির নায়েকের বিষয়ে উদ্যোগী হয় ভারত সরকার। মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। মুম্বাইয়ে তার অফিস ঘিরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শনিবার রাত থেকে ভারতে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়।
ভারতে পিসটিভি বন্ধের ব্যপারে বিবিসি জানায়, বাংলাদেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে দিল্লী বিষয়টি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি এ ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশেও পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের দাবি জোরালো হয়ে উঠতে থাকে। বাংলাদেশ কেবল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর হোসেন আখতার বলেন, আমরা পুরো দেশেই চ্যানেলটি বন্ধ করে দিতে চাচ্ছি। তবে সরকারের কোনো নির্দেশনা না থাকায় এই মুহূর্তে তা সম্ভব হচ্ছে না।
কেবল অপারেটরদের অপর সংগঠন কেবল অপারেটার্স বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমাদের দেশটা শান্তিপ্রিয় দেশ। আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই পিস টিভির।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এই টিভিটি সম্পর্কে কিছু অভিযোগ আমাদের গোচরীভূত হয়েছে। এরই আলোকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে সরকার তার অবস্থান আনও স্পষ্ট করবে।
বাংলা৭১নিউজ/এম