বাংলা৭১নিউজ, বাগেরহাট: বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলাধীন পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বনকর্মী ও ফায়ার সাভিসের কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর আগুনের তীব্রতা কমে গেলেও বিক্ষিপ্তভাবে বনের বেশ কিছু এলাকায় ধোয়া ও আগুন থাকায় মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা ও বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট একযোগে পানি ছিটানোর কাজ করছে।
এর আগে বুধবার বিকালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের তুলাতলা ও আন্দারমানিক নামকস্থানে নতুন করে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
গত দুদিনের আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় ১০ একর বনভূমি এমন দাবি আগুন নেভানোর কাছে সহয়তাকারী স্থানীয় জনগণের।
এদিকে বুধবার সুন্দরবনে নুতন করে আগুন লাগার ঘটনাকে নাশকতা উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে শরণখোলা থানায় জিডি হয়েছে। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বাদী হয়ে এই অভিযোগ করেন।
অপরদিকে, বনের প্রায় একই এলাকায় বার বার আগুন লাগার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করেছে বন বিভাগ। অতিরিক্ত সর্তকতা হিসেবে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় বৃহস্পতিবার থেকে অনদির্ষ্টকালের জন্য সব ধরনের পাশ পারমিট বন্ধ করা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ডিএফও মো. সাইদুল ইসলাম জানান, নতুন করে আগুন লাগার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির তিন সদস্য তদন্ত কাজ শুরু করেছে।
বুধবার বিকেলে নুতন করে সুন্দরবনে আগুন লাগার কারণ উৎঘাটনে চাঁদপাই রেঞ্জ সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম আরও জানান, নাশকতার উদ্দেশ্যেই বুধবার বিকেলে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের তুলাতলার উত্তর পাশে ও আন্দারমানিক এলাকায় নতুন করে আগুন দেয়া হয়েছে। চলতি মাসের ১৮ ও ১৩ এপ্রিল চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছিল। ওই ঘটনায় আসামিদের নাম উল্লেখ করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারাই পরিকল্পিতভাবে বনবিভাগের লোকজনকে হেনস্থা করতে সুন্দরবনে অবৈধ্যভাবে প্রবেশ করে আগুন দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আগুনে বনের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বনের ৪/৫ একর এলাকায় ধোয়া রয়েছে তা পুরোপুরি নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ও বনকর্মীরা কাজ করছে। আগুনের ব্যাপ্তি ছড়াতে না পারার জন্য ফায়ার লাইন কাটার পাশাপাশি আগুন পুরোপুরি নেভানোর পরই কি পরিমাণ বন আগুনে পুড়েছে তা নির্ণয় করা যাবে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে, নাশকতার অভিযোগে শরণখোলা থানায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে দায়ের করা দুটি মামলার এজাহার নামীয় কোনো আসামি এখনো আটক হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আসছে বর্ষা মৌসুমে বনের ওই এলাকায় মাছ শিকারের পথ সহজ করতেই একটি অসাদু চক্র পরিকল্পিতভাবে বনে আগুন ধরিয়ে দেয়। বর্ষা মৌসুমে বনের ওই এলাকায় শিং, মাগুর, কইসহ নানা প্রজাতির বিপুল পরিমাণ মাছ ধরতে ওই চক্রটি কতিপয় বনকর্তার সঙ্গে যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী এলাকায় আগুন লাগার ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে নাংলী ক্যাম্পের ওসিসহ তিন জনকে ২৩ এপ্রিল সাময়িক বহিষ্কার করেন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ডিএফও মো. সাইদুল ইসলাম। ওই সময়ে সাময়িক বহিস্কার হওয়া কর্মকতার মধ্যে ছিলেন নাংলী ক্যাম্পের ওসি নাসির উদ্দিন বোটম্যান মোবারেক হোসেন ও পলাশ মজুমদার।
এনিয়ে গত এক মাসে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলী স্টেশনের ধানসাগর ফরেস্ট ক্যাম্পের বন এলাকায় চার বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটল। এর আগে গত ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় প্রথমে সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের বনে আগুন লাগে। তারপর চলতি মাসের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সুন্দরবনের ওই এলাকায় আগুন লাগে।
আর গত ১৮ এপ্রিল সোমবার সকালে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলাধীন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী এলাকার আব্দুল্লার ছিলার শেষ প্রান্তে `ছলে বনে` আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।
বাংলা৭১নিউজ/এএফআর