কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। কিছু বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, কিছু বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল হয়েছে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে।
যেসব পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, সেগুলোর ফল কীভাবে নির্ধারণ করা হবে; তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টদের নিয়ে গঠিত কমিটি সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে কীভাবে ফল তৈরি করা যায়, তা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় তাতে অনুমোদন দিলে ফল তৈরির কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, তাতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল তৈরির কথা বলা হয়েছে। সেখানে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়নি, সেগুলো বা সেগুলোর কাছাকাছি বিষয়ের ওপর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ৭৫ শতাংশ নম্বর এবং জেএসসি ও সমমানের ২৫ শতাংশ নম্বর সমন্বয় করে ফল তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য ও কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে বোর্ড। তবে মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত অনুমোদন না দেওয়ায় সেটা নিয়েও কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা যেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি, সেটি একটি প্রস্তাব। মন্ত্রণালয় সেটা মূল্যায়ন করে যদি অনুমোদন দেয়, তাহলে সেভাবেই হবে। যদি তারা কোনো সংযোজন-বিয়োজন করে, সেটা করে ফল তৈরির কাজ শুরু হবে।’
প্রস্তাবে কীভাবে সাবজেক্ট ম্যাপিং করার কথা বলা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনুমোদন না হওয়ার আগেই এ নিয়ে কথা বলা অনুচিত। প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বিভ্রান্ত হবেন। আমরা যেভাবে প্রস্তাব করেছি, সেটার চেয়ে ভালো কিছুর পরামর্শও সরকারের পক্ষ থেকে আসতে পারে। সেজন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এখন এটা নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে তথ্য প্রচার হলে জটিলতা তৈরি হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, গত সপ্তাহে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে ফল প্রকাশ সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি গুরুত্ব সহকারে যাচাই-বাছাই চলছে। শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে মন্ত্রণালয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরু হলে ১৬ জুলাইয়ের পর এইচএসসির আর কোনো পরীক্ষা হয়নি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাকি ছিল, তা বাতিলের দাবি তোলেন পরীক্ষার্থীরা।
টানা এক সপ্তাহের আন্দোলনের পর তারা ২০ আগস্ট সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একপর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করে পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানান। তাদের আন্দোলনের মুখে বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়।
সে হিসাবে পরীক্ষা বাতিল ঘোষণার ২০ দিন পরও কীভাবে ফল তৈরি ও কবে প্রকাশ করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। শিক্ষা বোর্ডগুলো যে প্রস্তাবনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে, সেটাও এখনো অনুমোদন হয়নি।
গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। প্রথম দফায় প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।
সূচি অনুযায়ী, ১৩ দিনের মোট ৬১ বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি ছিল। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা স্থগিত এবং পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তা বাতিল করা হয়।
যদিও সব শিক্ষার্থীকে ১৩ বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে আবশ্যক বাংলা ও ইংরেজির চারটি বিষয় (প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র) এবং আইসিটি। বাকি ৮টি বিষয় ঐচ্ছিক (বিভাগভিত্তিক)।
সিলেট বোর্ড ছাড়া বাকি বোর্ডগুলোর আবশ্যক ছয়টি এবং কেউ কেউ বিভাগভিত্তিক একটি পরীক্ষাসহ ৭টি পরীক্ষা দিয়েছেন। ফলে কারও ছয়টি, কারও সাতটি পরীক্ষা বাতিল হয়েছে, যেগুলো সবই বিভাগভিত্তিক।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ