মাত্র সাত বছর বয়সে পবিত্র কোরআন হিফজ করেছেন ফিলিস্তিনি শিশু মাজিদ আবু আওদাহ। মাত্র এক বছরে পবিত্র কোরআন হিফজ করায় গাজা অঞ্চলের এ শিশুকে ফিলিস্তিনের সর্বকনিষ্ঠ হাফেজ বলে মনে করা হয়। সম্প্রতি তার হিফজ যাত্রার অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলে কাতার ভিত্কি সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা মুবাশির।
কথিত আছে, ‘তুমি তোমার সন্তানকে কোরআন শেখাও, কোরআন তাকে সবকিছু শেখাবে।
’ এ ভাবনা থেকেই তার বাবা আমজাদ শিশু সন্তান মাজেদকে পবিত্র কোরআনের হাফেজ বানানোর চেষ্টা করেন। তাই শিশু মাজেদের হিফজ যাত্রায় তার বাবা-মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল। গত বছরের আগস্টে শুরুর পর এক বছরের চেষ্টায় এ যাত্রা সম্পন্ন করে সে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনুস এলাকায় তাদের বসবাস। সেখানকার আল মুহাজিরিন আশ শরিয়াহ মাদরাসায় হিফজের পাঠ সম্পন্ন করে সে।
মাজেদের বাবা আমজাদ বলেন, ‘আমাদের ঘরে পবিত্র কোরআনকে মৌলিক বিষয় হিসেবে মনে করা হয়। আমার স্বপ্ন ছিল আমার ছেলে কোরআনের হাফেজ হবে। কিন্তু অল্প বয়স হওয়ায় তা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের ছিল। কিন্তু মক্তবে পড়াকালে শিশু বয়সে কোরআনের শেষ অংশ আমপারা মুখস্ত করার পর তার প্রখর স্মৃতিশক্তি আঁচ করতে পারি। তারপরও আমাদের কাছে তা কিছুটা কঠিন মনে হয়। কিন্তু হিফজ শুরুর পর আমরা তার প্রতিভা উপলব্ধি করি। ’
আমজাদ আরো বলেন, ‘আমি জীবনে কখনো এমন আনন্দ ও উচ্ছ্বাস লাভ করিনি। আমি নার্সিং বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছি এবং সেই সময় অনেক অনুষ্ঠান ও সমাবর্তনে অংশ নিয়েছি। কিন্তু মাজেদের এ সাফল্যের পর আজকের মতো আনন্দ ও গর্ব অনুভব করিনি। ’ সব বাবাকে তাদের সন্তানকে হাফেজ করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কোরআন হাফেজ হওয়া কোনো ভাবেই শিক্ষার পথে প্রতিবন্ধক নয়। বরং তা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে সত্যি কথা হলো, হিফজের যাত্রায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও ধৈর্যশক্তির প্রয়োজন আছে।
অল্প বয়সে হিফজ সম্পন্ন করে মাজেদ আবু আওদাহ ইসলামী শরিয়াহ নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, ‘পবিত্র কোরআন হিফজ করা কোনো কঠিন কাজ নয়। তবে সবচেয়ে কঠিন হলো, তার বার বার পাঠ করা এবং মুখস্ত রাখা। যখন থেকে আমি মাদরাসায় যাওয়া শুরু করি তখন থেকে আমি প্রতিদিন তিন পৃষ্ঠা করে মুখস্ত করতাম। আর ছুটির সময়ে পাঁচ পৃষ্ঠা করে মুখস্ত করতাম। পরবর্তীতে সুরা বাকারাহ শুরুর পর প্রতিদিন ১২ পৃষ্ঠা করে মুখস্ত করতাম।
আমি কোরআন পড়া শুরুর পর একদিনও কোরআন না পড়ে থাকিনি। প্রতিদিন পরিকল্পনা মতো একটি নির্দিষ্ট অংশ পাঠ করেছি। ’ ভবিষ্যতে সে পবিত্র মসজিদুল আকসার ইমাম হতে চায়। মাজেদের শিক্ষক তার মুখস্ত শক্তির প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘পবিত্র কোরআন হিফজ করলে মহান আল্লাহ তার কাছে সব ইলমের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। ’
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকায় পবিত্র কোরআনের অসংখ্য হাফেজ রয়েছেন। প্রতি বছর শিশুদের হিফজ সম্পন্নের পর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে তা উদযাপন করা হয়। হাফেজদের সম্মাননা দিতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দারুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহ। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী হিফজ সম্পন্ন করেছ। শিশু-কিশোরদের মধ্যে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের শিক্ষার প্রসার করতে তা প্রতিষ্ঠিত হয়। কাতারসহ বেশ কিছু দেশের সহায়তায় গাজা এলাকায় পবিত্র কোরআন হিফজের এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়।
সূত্র : আল-জাজিরা মুবাশির
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ