বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
হাসিনার দালালরা অপকর্মের ফাইল পুড়িয়ে দিল: সারজিস ৪০ কোটির মধ্যে ৩০ কোটি বই ছাপানো বাকি কর্ণফুলীতে ভেসে উঠলো নিখোঁজ দুই পর্যটকের মরদেহ ফায়ার সার্ভিস কর্মীকে চাপা দেওয়া ট্রাকচালক ধরা পড়ল শিক্ষার্থীদের হাতে সিরিয়ায় আসাদপন্থিদের ‘অতর্কিত হামলায়’ ১৪ নিরাপত্তা সদস্য নিহত ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচিবালয় এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার, দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন আট-নয় তলার নথিপত্র সব পুড়ে গেছে বলে ধারণা ফায়ার ডিজির পঞ্চগড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ ভারতের মহারাষ্ট্রে ১৭ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও দেশকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে ভেতরে প্রবেশ করছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লামায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ড. ইউনূসের নিন্দা আগুনের সূত্রপাত কীভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি : ফায়ারের ডিজি সচিবালয়ের আগুন ৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে সড়কে পড়ে আছে ফায়ারকর্মী নয়নের হেলমেট ও তাজা রক্ত সচিবালয়ে আগুন: যে হুঁশিয়ারি দিলেন আসিফ মাহমুদ আগুন ৬ তলায় লেগে উপরে গেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সবাই একসঙ্গে শান্তিতে থাকতে চাই : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সাক্ষাতকারে বিআরইবি চেয়ারম্যান: ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ স্বপ্ন পূরণের লড়াই চলছে

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ৪ আগস্ট, ২০১৭
  • ৪৯২ বার পড়া হয়েছে
মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন।

বাংলা৭১নিউজ, সাখাওয়াত হোসেন বাদশা: দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাকাকে সচল রাখতে হলে সরকারকে মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। শহরকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ সুবিধাকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠির দোরগোড়ায় নিতে হবে। এই স্বপ্নকে সামনে রেখেই সরকার গ্রামভিত্তিক উন্নয়নের যে রোডম্যাপ এঁকেছে-তাতে প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকার প্রথমেই রাখা হয়েছে। আর এই লক্ষ্য পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)।

একের পর এক সাফল্যের সিঁড়ি স্পর্শ করলেও প্রতিষ্ঠানটির ভেতরকার সঙ্কটও কিন্ত কম নয়। ট্যারিফ সমন্বয় করতে না পারায় বিআরইবি’কে বছরে ৮৫০ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। এই লোকসানের পরিমান বাড়তেই থাকবে। গ্রামে বিদ্যুতের দাম বাড়লে এর প্রভাব যেমন গ্রামীণ অর্থনীতিতে আঘাত হানবে; তেমনি বিআরইবি বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি করায় যে লোকসানের কবলে পড়েছে-এর পরিমান ক্রমেই বাড়বে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান কাটিয়ে তুলতে সরকার ভর্তুর্কি দিতে পারে। ট্যারিফ সমন্বয় না করায় বিআরইবি’র লাভজনক অনেক সমিতিও এখন লোকসানের মুখে পড়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি এই লোকসান কমিয়ে আনতে সিস্টেম লস আরও কমানোর চেষ্টা করছে। চলছে ঘাটতি জনবল নিয়েই ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ- ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ শ্লোগান বাস্তবায়নের লড়াই।

বিআরইবি’র এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে ব্যক্তিটি নিরলসভাবে কাজ করছেন তিনি হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন।

আরইবি’র বর্তমান কার্যক্রম, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, সমস্যা, অঙ্গিকার সবকিছু নিয়েই বিআরইবি চেয়ারম্যান বাংলা৭১নিউজ-এর মুখোমুখি হন। নিম্নে তার সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো:

1490058413t
বাংলা৭১নিউজ: দেখুন সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যেমন পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, ওজিপিডো’র পাশাপাশি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবচেয়ে গুরু দায়িত্বটি পালন করছে বিআরইবি। এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসাবে দেশের ৪৬০টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে আপনি কি ধরণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন?

মে: জে: মঈন উদ্দিন: আপনি ঠিকই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ হচ্ছে- ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেয়া। এজন্য বিআরইবি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের ৪৬০টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের ১৬টি উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ধোধন করেছেন। আরও ৩৪টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এগুলো এখনও উদ্ধোধন হয়নি। চলতি মাস অর্থাৎ জুলাইয়ের মধ্যে আরও ৫০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন হবে। আর চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে আরও ১১২টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ। এ নিয়ে এবছর মোট ২১২টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসবে। বাকী উপজেলাগুলোর মধ্যে ২০১৮ সালের জুনে ১৩৭টি এবং ডিসেম্বর ২০১৮ সালের মধ্যে ১১১টি উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করা হবে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ইনশাআল্লাহ্ বিআরইবি ৪৬০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

বাংলা৭১নিউজ: শতভাগ বলতে কী আমরা দেশের সব এলাকাই বুঝবো? এছাড়া বিআরইবি’র ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে আর কি রয়েছে?

মে: জে: মঈন উদ্দিন: দেখুন, বর্তমানে দেশের ৭৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় রয়েছে। আর জাতীয় হিসাবে ধরলে এই পরিসংখ্যান আরও কিছুটা বাড়বে। আমরা শতভাগ হিসাব ধরেছি, ৭ ভাগ অর্থাৎ ১০২৭টি গ্রামকে গ্রীড সুবিধার আওতার বাইরে রেখে। এগুলো আমাদের কাছে অফগ্রীড এলাকা। তারমানে এই নয় যে, এসব এলাকার মানুষ বিদ্যুৎ পাবে না। এদের জন্য সরকারের সোলার প্রকল্প রয়েছে। অবশিষ্ট ২০ ভাগ এলাকার জন্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্প আগামী ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে দিয়েই আমরা আমাদের শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন করবো। বিআরইবি’র নতুন ও পুরাতন মিলে ৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ২টি প্রকল্পের কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা যদি মোট ৪ লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করতে পারি তাহলে আমরা শতভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ দিতে পারবো। বর্তমানে আমাদের ৩ লাখ ৫১ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন রয়েছে। আরও ১ লাখ ২০ হাজার কিলোমিটার লাইন নির্মাণের কাজ চলছে।

বাংলা৭১নিউজ: একনজরে আপনাদের কার্যক্রমগুলো কী?

মে: জে: মঈন উদ্দিন: একনজরে বলতে গেলে আমরা সারাদেশে ৮০টি পল্লী বিদু্যুৎ সমিতির মাধ্যমে কাজ করে থাকি। বর্তমানে ৩ লাখ ৫১ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন ও ৮ হাজার ৭৩০ এমভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন ৭৮৮টি বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে দেশের ৬৯ হাজার ৭৭২টি গ্রাম বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ। আমাদের সেচ গ্রাহকের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৪ হাজার। বিদু্যুৎ সুবিধাভোগির সংখ্যা ৭৩ ভাগ। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, ১৯৭৮ থেকে ২০০৮ এই ৩০ বছরে বিদু্যুতের যে অবস্থা ছিল; আমরা সেখান থেকে মাত্র ৮ বছরে একটি বড় ধরণের পরিবর্তন এনেছি। ওই সময় গ্রাহক সংযোগ ছিল ৭৪ লাখ, বিদ্যুৎ সুবিধাভোগি ছিল শতকরা ৩৬ ভাগ, সিস্টেম লস ছিল প্রায় ১৭ ভাগ আর মাসিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ছিল ২৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে বিআরইবি মাসিক বিদ্যুৎ বিক্রি করে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক এর আওতায় তিনটি প্রকল্প চালু রয়েছে। এসব প্রকল্পে সাব ষ্টেশন আপগ্রেডেশন, নতুন সাব স্টেশন নির্মাণ, ৩৩কেভি লাইন নির্মাণ ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন হলে বিআরইবি আরও ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়ার সক্ষমতা যেমন অর্জন করবে, তেমনি নতুন গ্রাহক সংযোগ দেয়ার সক্ষমতাও তৈরি হবে।

sss1

বাংলা৭১নিউজ: তাহলে বিআরইবি’র বর্তমান সক্ষমতা কত মেগাওয়াট? আর যে পরিমান বিদ্যুৎ আপনারা পাচ্ছেন তা দিয়ে গ্রামাঞ্চলের চাহিদা মেটানো সম্ভব কীনা? এছাড়াও রাজধানীর তুলনায় গ্রাম পর্যায়ে েেলাডশেডিংয়ের ভয়াবহতা নিয়ে যেসব অভিযোগ আসছে তা কতটুকু সঠিক?

মে: জে: মঈন উদ্দিন: দেখুন, বর্তমানে বিআরইবি’র বিদ্যুৎ নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে ৮ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট। আর বিআরইবি’র বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরিতে বিদ্যুৎ পাচ্ছে ৪ হাজার ৪৯১ মেগাওয়াট। এই পরিমান বিদ্যুৎ দিয়ে চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা হয়না। যদিও প্রায় ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থেকে যায়। এই ঘাটতি মেটাতে লোডশেডিংয়ের আশ্রয় নিতে হয়। এতে করে অনেক এলাকায় লোডশেডিং করতে হয়। এছাড়াও ১০৭ মেগাওয়াট ওভারলোডিং সমস্যা রয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধার হয়ে যাবে। সিস্টেম লস ১ দশমিক ০৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশে। যার সুফল গ্রাহকরা পাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিস্টেম লস আরও কমিয়ে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশের নিচে রাখতে। এটা করতে পারলে রাজধানীর সাথে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুৎ সুবিধার পার্থক্যটা আরও কমে যাবে। যদিও বর্তমানে যে পার্থক্য রয়েছে তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার মত কিছু নেই।

বাংলা৭১নিউজ: বিআরইবি’র গ্রাহকদের জন্য আর কী ধরণের পরিকল্পনা নিয়েছেন?

মে: জে: মঈন উদ্দিন: আমাদের এখন অন্যতম কাজ হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে আরও বেগবান করা। আমরা ই-জিপি’র মাধ্যমে ২০৩০টি দরপত্র সম্পন্ন করেছি। বিআরইবি আইএসও (আইএমএস) এবং বিআরইবি’র ১৬টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আইএসও (কিউএমএস) সনদ অর্জন করেছে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪০ লাখ গ্রাহককে সংযোগ দেয়া হবে। এছাড়াও ৫০ হাজার কিলোমিটার লাইন এবং ১০০০ এমভিএ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। আরও ২৫টি সমিতির আইএসও অর্জন এবং ৫টি সোলার চাজির্ং স্টেশন স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যেই ৫টি সোলার চার্জি স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতিটি সোলার স্টেশন থেকে দিনে ১০০টি ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিক্সা চার্জ নিচ্ছে। গাড়ী প্রতি ৪০ টাকায় এসব স্টেশন থেকে ব্যাটারি চার্জ করা হয়। এধরণের কার্যক্রম বিদ্যুৎ চুরি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

বাংলা৭১নিউজ: জনবল ঘাটতি নিরসন ও ট্যারিফ সমন্বয় করার প্রস্তাব নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কীনা?

মে: জে: মঈন উদ্দিন: জনবল ঘাটতি নিরসনে সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বিআরইবি’র কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধিসহ আর্থিক সুুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। যাতে এখানে কর্মরতরা আরও একাগ্রতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে গ্রাহকদের সেবক হয়ে কাজ করতে পারে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির জনবল ঘাটতি কমাতে ইতোমধ্যে ৪৭৪টি পদেও সেটাপ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। এরপরও বিআরইবি’র লোকসান রয়েছে। এই লোকসান কাটাতে আমরা ট্যারিফ সমন্বয়ের প্রস্তাব রেখেছি।

বাংলা৭১নিউজ: ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রস্তাবনা কীভাবে রেখেছেন এবং এর মাধ্যমে কী পরিমান লোকসান কাটিয়ে উঠা সম্ভব?

মে: জে: মঈন উদ্দিন: দেখুন আরইবি’র ৯০ শতাংশ গ্রাহকই আবাসিক। এছাড়াও আমাদের ৩ লাখ ৮৪ হাজার সেচ গ্রাহক রয়েছে। আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে আমরা ইউনিট প্রতি ৩৯ পয়সা লোকসান দিচ্ছি। এতে বছরে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য বিআরইবি’কে লোকসান দিতে হচ্ছে ৮৮০ কোটি টাকা। আমরা বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি করায় এই লোকসানের কবলে পড়তে হয়েছে।

মে: জে: মঈন উদ্দিন আরও বলেন, বিদ্যুৎ ক্রয়, হুইলিং ও সিস্টেম লস্ এবং অন্যান্য মিলিয়ে আমাদের ইউনিট প্রতি ক্রয় মূল্য দাঁড়ায় ৬ টাকা ৭৮ পয়সা। এর বিপরিতে আমরা আবাসিক গ্রাহকদের কাছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করি ৬ টাকা ৩৯ পয়সা। এতে করে ইউনিট প্রতি লোকসান দিতে হয় ৩৯ পয়সা। গত বছর বিআরইবি ২ হাজার ৫৯৬ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ ক্রয় করেছে। এই হিসাবে লোকসান গুনতে হয়েছে ৮৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লোকসান ছিল সেচ খাতে।

sehkhas

মে: জে: মঈন উদ্দিন জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি সেচ খাতে বিআরইবি’কে অনেক বেশি ভর্তুকি মুল্যে বিদ্যুৎ দিতে হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৬ টাকা ৭৮ পয়সা দরে ক্রয় করে সেচ পাম্প গ্রাহকের কাছে বিআরইবি বিক্রি করে ৩ টাকা ৮০ পয়সা। এতে ইউনিট প্রতি লোকসান দিতে হচ্ছে ২ টাকা ৯৮ পয়সা। এছাড়া বিআরইবি’কে সেচ মৌসুমে অতিরিক্ত ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করতে হয়। তিনি বলেন, মোট লোকসানের অর্ধেকই সেচ খাতে। অর্থাৎ সেচ খাতে বছরে লোকসানের পরিমান ৪শ’ কোটি টাকা। এছাড়াও রয়েছে লাইফ লাইনের গ্রাহক।

মে: জে: মঈন উদ্দিন আরও জানান, বিআরইবি’র ৯০ ভাগ আবাসিক গ্রাহকের ৫০ ভাগই লাইফ লাইনের। এই লাইফ লাইনের গ্রাহকদের কাছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৩ টাকারও কম মূল্যে বিক্রি করতে হয়। এসব কারণে আমাদের লোকসান বেড়ে যাচ্ছে। আমরা যত বেশি সংযোগ দেব এবং আমাদের গ্রাহক সংখ্যা যত বাড়বে, ট্যারিফ সমন্বয় করতে না পারলে বিআরইবি’র লোকসানের পরিমানও ততটাই বৃদ্ধি পাবে। এজন্য আমরা ১১ শতাংশ ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রস্তাব রেখেছি। এতে করে ইউনিট প্রতি ৬৬ পয়সা মূল্য বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, সরকার ভর্তুকি দিলে বিআরইবি’র ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়বে না।

এছাড়াও সিস্টেম লস আরও ১ পার্সেন্ট কমানোর চেষ্টা চলছে। এটা করতে পারলে লোকসানের পরিমান আরও ১৫০ কোটি টাকা কমানো যাবে। এ প্রসঙ্গে বাংলা৭১নিউজ-কে মে: জে: মঈন উদ্দিন বলেন, স্ন্যাপশটের মাধ্যমে মিটার রিডিং ও বিলিং সেবা ময়মনসিংহ পবিস-২ এর ত্রিশাল সাব-জোনাল অফিসের গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল তৈরির ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সেবা দেশের সর্বত্র চালু করা গেলে ভূতুরে বিলের সম্ভাবনা থাকবে না, নির্ভূল বিল করা যাবে। সিস্টেম লসের সঠিক হার জানা যাবে, বিতরণ ট্রান্সফরমারের সঠিক লোডের ধারণা পাওয়া যাবে। সিস্টেম লস এবং ট্রান্সফরমার পোড়ার হার নিয়ন্ত্রন করা যাবে। সেইসাথে শ্রম, অর্থ ও সময় সাশ্র্রয় হবে।

images

বাংলা৭১নিউজ: বিআরইবি কোন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে কীনা?

মে: জে: মঈন উদ্দিন: আপনি ঠিকই বলেছেন। বিআরইবি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেবে। গ্রামীণ শিল্প বিকাশ ও গ্রামীণ অর্থনীতির ভীতকে আরও মজবুত করতে বর্তমান সরকার এই পরিকল্পনা নিয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ইতোমধ্যেই ৪২টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সেবা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে।

বাংলা৭১নিউজ: পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে। এই লোডশেডিংয়ের যাতনা কমাতে কী ধরণের পরিকল্পনা নিয়েছেন?

মে: জে: মঈন উদ্দিন: দেখুন, গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং কিন্ত সেভাবে নেই। দূর্যোগপূর্ন আবহওয়া ও প্রাকৃতিক কারণে হয়তো কোন এলাকায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে সার্বিক অর্থে লোডশেডিং নেই। বর্তমানে রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা, যশোর অঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে- সম্প্রতি ঝড়ে আশুগঞ্জ-সিদ্দিরগঞ্জ টাওয়ারটি ভেঙ্গে যাওয়ায় বিদ্যুৎ প্রবাহে বিঘœতার সৃষ্টি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মে: জে: মঈন উদ্দিন আরও বলেন, সারাদেশে বিআরইবি’র বিদ্যুৎ প্রবাহ দু’টি লাইনের মাধ্যমে চলে। এর একটি হচ্ছে-আশুগঞ্জ-সিদ্দিরগঞ্জ এবং অপরটি আশুগঞ্জ-ঈশ্বরদী। বর্তমানে আশুগঞ্জ-ঈশ্বরদী লাইন দিয়ে সারাদেশে বিদ্যুৎ প্রবাহের কাজ চলছে। আশা করি, আগামী ২ মাসের মধ্যে আশুগঞ্জ-সিদ্দিরগঞ্জ টাওয়ারটি ঠিক হয়ে যাবে। তখন বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি তেমন একটা থাকবে না।

বাংলা৭১নিউজ-কে সাক্ষাতকার দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। বিআরইবি চেয়ারম্যান মে: জে: মঈন উদ্দিনও বাংলা৭১নিউজ পরিবারকে ধন্যবাদ জানান।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com