বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ নিয়ে। ব্যাপক আর্থিক সঙ্কটের কবলে পড়া তোসিবার দরপত্র অযোগ্য করা নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার গড়িমসির কারনে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মাতারবাড়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। ‘অত্যাধুনিক’ এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এই প্রকল্পের মোট বিনিয়োগের ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপানের উন্নয়ন সাহায্য সংস্থা জাইকা।
এমন পরিস্থিতিতে যদি আর্থিক সঙ্কটে জর্জড়িত প্রতিষ্ঠাণ জাপানের তোসিবা কোম্পানিকে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের কাজ দেয়া হয়; তাহলে মাতারবাড়ি প্রকল্পটির দশাও আইসোলেক্সের মত হয় কীনা-তানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কোল পাওয়ার জেনারেশন অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম। স্পেনের আইসোলেক্স আর্থিক দূরাবস্থার কারণে বাংলাদেশে পাওয়া তিনটি প্রকল্পের কাজ ঠিকমত করতে পারছে না। এতে করে ১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ আটকে রয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মে তোসিবা কর্পোরেশন তাদের গত আর্থিক বছরের আয় ব্যয়ের হিসেব ঘোষনা করে। টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জে দেয়া তাদের হিসেবে দেখা যায়, ৩১মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত তাদের নিট সম্পদ মাইনান ২৬০ বিলিয়ন ইয়েন বা ১৮ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। অর্থাৎ তাদের মোট দেনা হতে মোট সম্পদের পরিমাণ ১৮ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা কম।
এই হিসাব আবার তোসিবা নিয়োজিত অডিট কোম্পানি কর্র্র্তৃক নিরীক্ষিত নয়। কোম্পানির ব্যাপক আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে তাদের নিয়োজিত অডিট কোম্পানি এই হিসাব নিরীক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সঠিক নিরীক্ষা হলে তোসিবার আর্থিক দূরাবস্থা আরও করুণ হবে বলে মাতাবারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মকর্তারা মনে করেন। ইতোমধ্যেই তোসিবার মালিকানাধীন আমেরিকান কোম্পানি ওয়েস্টিন হাউজ দেউলিয়া হয়ে গেছে।
এমতাবস্থায় জাপানের জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ি ১২শ’ মেগাওয়াট প্রকল্পে সুমিতোমো-তোশিবার দর গ্রহণ করা হলে তা হবে দরপত্রের শর্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ি এবং জাইকার গাইড লাইন অনুযায়ি, নেতিবাচক নীট সম্পদের কোন কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এরপরও রহস্যজনক কারণে সুমিতোমো-তোশিবার দরপত্রকে এখনও অযোগ্য ঘোষনা করা হয়নি।
মাতারবাড়ী প্রকল্প নিয়ে দরপত্র জমা দেয়া দু’টি কোম্পানি-মারুবিনি এবং অপর কোম্পানিটি হচ্ছে তোশিবা ও সুমিতোমো জেভি। তোশিবার আর্থিক দুরবস্থার ব্যাপাওে ইমোমধ্যেই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় খোঁজ নিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, জাপানি কোম্পানি তোশিবার আর্থিক অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে। টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেটে কোম্পানিটির অবস্থা একেবারেই খারাপ। এই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে এ নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
তোশিবার এমন আর্থিক দুরবস্থার কারণে মিয়ানমার সরকারও প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করছে। জানা গেছে, মিয়ানমারের মোন প্রদেশে ১২৬০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তোশিবার সাথে আলোচনা করছিল ওই দেশটির সরকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক দুরবস্থার কথা জানতে পেরে মিয়ানমার এখন তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথেও আলোচনা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মাতারবাড়ী প্রকল্পের দরপত্র নিয়ে সরকার কোন দিকে এগোবে তার ওপর নির্ভর করছে এর ভবিষ্যৎ।
উল্লেখ্য, ঠিকাদার নিয়োগে সিপিজিসিবিএল ২০১৫ সালের ৪ জুন এ প্রকল্পের জন্য প্রি-কোয়ালিফিকেশন (পিকিউ) আহ্বান করে। তাতে দু’টি কোম্পানি চূড়ান্ত হয়। প্রি-কোয়ালিফিকেশন মূল্যায়ন কমিটি পরে ওই দু’টি কোম্পানিকে মূল দরপ্রস্তাব দাখিলের আহ্বান জানায়। জানা গেছে, ৩১ জানুয়ারি কোম্পানি দু’টি দরপ্রস্তাব জমা দেয়। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে জাইকার ক্রয় নীতিমালার প্রাক-যোগ্যতাসম্পন্ন দরদাতাদের দরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতির সেকশন ৩.২-এর ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, ‘প্রাক-যোগ্যতাকালীন সময়ে দরতাদাদের দেয়া তথ্য দরপত্র মূল্যায়নকালে যাচাই-বাছাই করতে হবে এবং কোনো দরদাতার যোগ্যতা বা সম্পদ সন্তোষজনকভাবে চুক্তি বাসবতবায়নের জন্য যথেষ্ট না থাকলে সেই দরদাতাকে কাজ দেয়া হবে না।’ কাজেই জাইকার ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ পেতে হলে আর্থিকভাবে শক্তিশালী থাকতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এ্সএইচবি