নির্বাচনী ট্রেন থেকে ছিটকে পড়েছেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদ। রওশন এরশাদ ও তার অনুসারী নেতাদের দাবি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর ষড়যন্ত্রে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন তারা।
যদিও মহাসচিব চুন্নুর দাবি রওশন এরশাদের জন্য মনোনয়ন রাখা হয়েছিল। তিনি নেননি। রওশন জাতীয় পার্টির কেউ না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশও করেন রওশন এরশাদ। পাশাপাশি জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো জোট না করার অনুরোধও জানান তিনি।
এদিকে, নিজে ও ছেলে বঞ্চিত হওয়ায় মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছেন রওশন। বার্ধক্যজনিত নানা অসুখেও তিনি ভুগছেন। তবে জানা গেছে নির্বাচনের পরে তিনি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রওশনপন্থি নেতারা ভোটের পর কাউন্সিল করার কথা ভাবছেন। নির্বাচনে কেউ কেউ লাঙ্গলের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
রওশন এরশাদ বলেছেন, নির্বাচনের পর পার্টির একটা বিহিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীকে সব অবগত করা হয়েছে। নির্বাচনের পর তিনি কিছু একটা করবেন বলে আশা দিয়েছেন। আমরা ধৈর্য ধরছি।
তিনি আরও বলেন, জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নু সহযোগিতা না করায় নির্বাচনে আসতে পারিনি। রাঙ্গাসহ দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে রয়েছেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ, জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর ১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে ট্রাক মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি।
এর আগেও ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন রাঙ্গা। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। তাকে ছাড় দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন মো. আসাদুজ্জামান। তিনি গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
রাঙ্গা বলেন, জীবনের অর্ধেক সময় জাতীয় পার্টিকে সমুন্নত রাখতে কাজ করেছি। অথচ দলটির দায়িত্বে যারা আছেন তারা আমার প্রতি অবিচার করেছেন। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে জাপার এই অবিচারের জবাব দেবে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠ সুষ্ঠু আছে। এলাকার মানুষের জন্য অনেক উন্নয়ন করেছি। জীবনে প্রথম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রচারণা শুরু করেছি ।এর আগে তিনবার লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছিলাম। এলাকার মানুষ ভোট দিলেই আমি জয়ী হবো। গঙ্গাচড়ার অধিকাংশ উন্নয়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্শীবাদে করতে পেরেছি। এজন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।
এসব বিষয়ে কথা হয় রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ’র সঙ্গে। গোলাম মসীহ বলেন, রওশন এরশাদের আসনে আরেকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারা (জিএম কাদেরপন্থিরা)। সাদ এরশাদের আসনে জি এম কাদের নিজে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। এখানে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। জি এম কাদেরপন্থিরা আমাদের নির্বাচনের বাইরে রাখতে বাধ্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, রওশন এরশাদ আবার নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে জাতীয় পার্টি শুরু করবেন। এখন একটা কাউন্সিলে যেতে হবে, কাউন্সিলে কার মেজরিটি সেটা প্রমাণ করতে হবে। গঠনতন্ত্র, প্রসেসের মধ্য দিয়ে সব এগোবে।
রওশনপন্থি আরেক নেতা ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, আমাদের কাউন্সিল হলে তো এই সমস্যা হতো না।কাউন্সিল তো ওপর মহলের নির্দেশে হলো না। এখন আমরা দ্রুত কাউন্সিল সেরে ফেলবো।
তিনি বলেন, ভোট যাক। ভোটের পর ঘুর দাঁড়াতে হবে। ম্যাডাম একটু অসুস্থ। উনার নির্দেশনায় আবার সব শুরু করবো। এখন তো আর বসে থাকার সুযোগ নাই। তিনি বলেন, কুমিল্লা-৪ আসনে আমার সমর্থন ভালো। সেখানে তো এবার ভোট করতে পারছি না। সেখানে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করছি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ