কলকাতা থেকে আনুমানিক ৬২ কিলোমিটার দূরের অশোকনগর এলাকাটিতে মূলত বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষেরই বসবাস বেশি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত শহর বনগাঁ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের এ এলাকায় থাকার সুবিধা হচ্ছে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসা। খুব সহজেই দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগও করা সম্ভব। এসব কারণেই পি কে হালদার ঘাঁটি গাড়েন এ এলাকায়।
প্রথমে তার ভাই প্রীতেশ এবং প্রাণেশ হালদারের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েন। এরপর তাদের আত্মীয়স্বজনের নামেও প্রাসাদসম বাড়ি করা হয়; কেনা হয় জমি, পুকুরসহ অনেক কিছু।
সুকুমার মৃধার মেয়ের বাড়িতেও সেদিন অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বাড়িটি এখন বন্ধ রয়েছে। এ বাড়িতে সুকুমার মৃধার বড় মেয়ে থাকতেন। গোয়েন্দারা বলছেন, ২০২১ সালে বাবার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়ার পর অদিতি মৃধাকে রাজসাক্ষী করার প্রস্তাব দিলে তিনি অশোকনগরের বিশাল সম্পদের খবর ফাঁস করেন। আর প্রাসাদসম এই বাড়ি দেখে ভয়ে অনেকেই বাড়ির লোকদের সঙ্গে কথা বলতেন না।
সেখানকার এক প্রতিবেশী বলেন, ‘উনি এখানে নির্দিষ্টভাবে থাকতেন না, তবে ওনার বড় মেয়েজামাই এখানে থাকতেন।’ আরেক প্রতিবেশী বলেন, ‘এসব মানুষের সঙ্গে কথা বলা তো আমাদের মানায় না।’
অশোকনগরের বিল্ডিং মোড় থেকে প্রায় তিন-চার কিলোমিটার ভেতরে দক্ষিণ পল্লিতে রয়েছে প্রাণেশ হালদারের বাড়ি। ভাইয়ের নামে কেনা হলেও এখানেই মূলত থাকতেন পি কে হালদার এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘এখানে প্রাণেশ হালদার বসবাস করতেন। তার মা থাকতেন। তারপর আমরা দেখেছি তার মা চলে গেলেন। তারপর প্রাণেশ চলে গেলেন।’ আরেকজন বলেন, এই একটা বাড়ি আছে, ওদিকে আরও আছে।
আরেক স্থানীয় বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এসেছে। সবাই বলে প্রচুর টাকা নিয়ে এসেছে। শুনেছি, ওখানে বড় ব্যবসা করে। আগে এখানে আমাদের মতো পুরোনো বিল্ডিং বাড়ি ছিল, পরে ওগুলো ভেঙে নতুন বাড়ি করে। তারপর তারা এখানে এসে ওঠে।’
একই এলাকার দক্ষিণ পল্লি থেকে কিছুটা এগিয়ে ৮ নম্বর স্কিম ভারতি ক্লাবের পাশে সুকুমার মৃধার দুই ভাগনে স্বপন এবং উত্তম মিত্রের বাড়ি রয়েছে। বাকি বাড়িগুলো যখন মাথা নিচু করে রয়েছে, সেখানে সুবিশাল এই বাড়ি মাত্র তিন বছর আগে রাতারাতি তৈরি করা হয়, যা দেখে কৌতূহল হলেও ভয়ে মুখ খোলেননি প্রতিবেশীরা। তবে সবাই জানতেন, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর টাকা নিয়ে এসেছেন স্বপন ও উত্তম মিত্র। এই দুই ভাইকেও পি কে হালদারের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে।