বাংলা৭১নিউজ, এম, এম হায়দার আলী, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: বন্যা কবলিত সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় বছরের একটি মাত্র ফসল ইরি-বোরো ক্ষেতে চিটা ভর্তি সাদা ও কালো স্পট বর্ণের শুকনো ধানের শীষ ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে। ফলে বছরের খোরাকি ঘরে তোলার আশায় নানান প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ধান আবাদ করা শত, শত প্রান্তিক চাষি রীতিমত হতাশ হয়ে পড়েছেন। একই সাথে এবছর ধান উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত না হবার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে ও তালা উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, কৃষি বান্ধব বর্তমান সরকারের সময়ে ধান-চালের মূল্য সন্তোষ জনক হওয়ায় এখানকার হাজার হাজার কৃষক এচাষের প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হয়ে আশায় বুঁক বাধেন। ফলশ্রুতিতে গত বারের তুলনায় উপজেলায় এবার ২ হাজার হেক্টর বেশি অর্থাৎ চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ১৯ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। যা সুষ্ঠুভাবে উৎপাদন শেষে প্রতি বিঘা জমিতে গড় ২০ মণ হিসেবে ধান, চাষীরা তাদের বাড়ীতে তুলতে পারলে উৎপাদিত ধানের পরিমান গিয়ে দাড়াবে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টণে।
কিন্ত চলতি মৌসুমের শুরুতেই প্রচণ্ড শীতে বীজ তলা নষ্ট, শ্রমিক সংকট, গবাদি পশু বিক্রি, চড়া সুদে ঋণ নেয়া, বাকিতে অধিক দামে কৃষি পন্য কেনা সহ নানান প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে উক্ত জমিতে ধান চাষ সম্পন্ন করে। যে সপ্নের ফসল নিয়মানুযায়ী আর মাত্র মাস খানেক পরেই বাড়ী-ঘরে বা গোলায় ওঠানোর কথা। কিন্ত বিধিবাম আবাদকৃত অধিকাংশ ক্ষেতে চিটা ভর্তি সাদা ও কালো স্পট বর্ণের শুকনো ধান শীষ দেখা দেয়ায় ভূক্তভোগী চাষীদের লালিত সপ্ন এখন ফিকে। আশা-নিরাশার দোলাচলে দোলা ঋণের বেড়া জালে আটকা পড়া ক্ষতিগ্রস্থ সাধারন চাষীরা এক্ষুনি সংসার চালানোর চিন্তায় ভেঙ্গে পড়েছেন। অথচ অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি সঠিকভাবে দেখভাল করার মত যেন কেউ নেই।
উপজেলার যুগীপুকুরিয়া গ্রামের ক্ষুদ্র চাষী মুক্তার আলী সরদার (৩৫) জানান, পরের ক্ষেতে একদিন শ্রম বিক্রি না করলে আমার সংসার চলেনা। এবছর লোকের কাছ থেকে শুধু ইরি ধান করার জন্য ১ বিঘা জমি ৭ হাজার টাকা হারি হিসেবে নিয়ে ৪ বিঘা জমিতে ঋণ করে অনেক কষ্টে ধান চাষ করেছি। কিন্ত পুরো ধান ক্ষেতেই সাদা ধানের শীষে ভরে গেছে, যাতে শুধু চিটা। ধান না হলে পাওনাদারদের টাকা পয়সা কিভাবে দেব ঠিক বুঝতে পারছি না। প্রত্যেক বছর কোন না কোন সমস্যা দেখা দেয়, ইরি ধান আর করার ইচ্ছা নেই।
একই গ্রামের কৃষক আঃ মান্নান সরদার (৫০) ক্ষোভের সাথে জানান, এবছর আর ধান কাটতে বিলে যাওয়া লাগবে না। অনেক সমস্যার মধ্যেও প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ইরি ধান লাগাইছি কিন্ত ধানের শীষ যা বেরুচ্ছে সব চিটে। কারো কাছ থেকে যে পরামর্শ নেবো সেরকম লোক এখন খুঁজে পাবো কোথায়। সবমিলে এপর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকার মত খরচ হয়ে গেছে। ধান করতে যেয়ে এবছর বড় ধরনের একটা ক্ষতি হয়ে যাবার লক্ষন বুঝা যাচ্ছে।
এ ধরনের অভিযোগ উপজেলার পাটলেঘাটা থানার দক্ষিন বিলে আবাদকৃত অধিকাংশ ইরি-বোরো চাষীরাসহ ভূক্তভোগী বহু কৃষকের।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সামছুল আলম জানান, গত বছরও এই ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছিল। এই রোগের কারনেই ধানে চিটা হয়ে যায়। এ রোগের প্রতিকার হিসেবে আমরা টাটাভো, নাটিভো, ট্রুপার ও ধুমকেতু সহ ৮-৯ প্রকারের ্্ঔষধ উল্লেখ পূর্বক লিফলেট তৈরি করে তা বিভিন্ন সভা সেমিনারে কৃষকদের মাঝে বিতরন করেছি। এটা থোড় মুখে বা শীষ বের হওয়ার প্রাক্কালে ব্যবহার করলে ওই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে কৃষি প্রধান এদেশের আপামর জনগনের রুটি রোজগারের একমাত্র অবলম্বন ধান উৎপাদন খাতকে আরো বেশি উন্নতিকল্পে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য স্থানীয় অভিজ্ঞ মহল সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস