প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ বছর শুরুর মাস পেরিয়ে গেলেও সারা দেশে সব শিক্ষার্থীদের হাতে এখনও পৌঁছেনি বই। কিন্তু ঠিকই জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে সেই বিনামূল্যের বই পৌঁছে গেছে খোলা বাজারে।
সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা নস্যাৎ করার লক্ষ্যে কতিপয় অসাধু চক্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের পুস্তক অবৈধ মজুতদারির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রয় করছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে খোলাবাজার থেকে প্রায় ১০ হাজার বইসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকার সূত্রাপুরের বাংলা বাজার ইস্পাহানি গলির বিভিন্ন গোডাউনে অভিযান চালিয়ে এ সব বই জব্দ ও দুজনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের এসব বইয়ের বাজারমূল্য প্রায় আট লাখ টাকা।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন- সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বল (৫৫), দেলোয়ার হোসেন (৫৬)।
ডিবি বলছে, গ্রেপ্তার দুজন ছাড়াও এমন আরও বেশ কয়েকটি চক্রের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারে ডিবির তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছিল। ২০১০ সালের পর থেকে বই বিতরণের সেই উৎসবে ছেদ পড়েছে এবার। নতুন বছরের প্রথম দুদিনে ৪১ কোটি বইয়ের মধ্যে ১০ কোটি বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি।
বাকি বই ৩০ জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার আশা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সব বই না পাওয়া পর্যন্ত এনসিটিবির ওয়েবসাইটে আপলোড করা বইয়ের পিডিএফ কপি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বই সংকটের মধ্যেই জানুয়ারির শেষে এসে খোলাবাজার থেকে এই বিপুল পরিমাণ বই জব্দের তথ্য দিল ডিবি।
বৃহস্পতিবার(২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, একটি চক্র বাংলাবাজারের ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গোডাউনে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি পাঠ্যবই বিক্রয়ের উদ্দেশে মজুদ করেছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুই ট্রাক বই জব্দ করা হয়। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় ১০ হাজার বই রয়েছে।
জব্দ করা বইগুলোর বিষয়ে আদালতকে অবগত করা হবে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এনসিটিবিকে হস্তান্তর করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বইগুলো পরিবহনের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, একটা চক্র বইগুলো নিয়ে যায়। এরপর অতিরিক্ত বইগুলো এনে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয় বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।
অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১১৬টি প্রেসে বই ছাপানো হয়। ঢাকার বাংলাবাজার এবং ঢাকার বাইরেও কয়েকটি প্রেসে ছাপানো হয়। যারা সরকারি কার্যাদেশ পেয়ে থাকে। অতিরিক্ত বই ছাপানোর সুযোগ আছে কি-না বিষয়টা তদন্তাধীন। যদি অনুসন্ধানে পাই অতিরিক্ত বই ছাপানো হয়েছে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনসিটিবি অথবা মাউশির কেউ জড়িত কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনসিটিবির দুইটা গোডাউন রয়েছে একটা তেজগাঁও ও আরেকটা টঙ্গীতে। সেখানেই বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়, এর বাইরে কোথাও সংরক্ষণের সুযোগ নেই। ভেতরের কারও সংশ্লিষ্টতা থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গ্রেপ্তার সিরাজুল ইসলাম উজ্জল ১০ বছর আগে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জানিয়ে ডিবির নবনিযুক্ত কর্মকর্তা বলেন, এবার তার গোডাউন থেকেই বইগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। ১০-১২ টাকা করে বইগুলো কিনে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করে আসছিল উজ্জল। বিতরণ এবং পরিবহনের অনিয়মে কার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন আরও কিছু নাম আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া আরও কিছু জায়গায় বিনামূল্যের এসব বই বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও নিয়মিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তথ্য পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ