সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
এস আলম পরিবারের ১৩ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে হত্যা মামলায় ওসি গ্রেপ্তার সিন্দুকের ভেতর শাশুড়ির মরদেহ, পুত্রবধূ আটক বাংলাদেশ রিটেইল অ্যাওয়ার্ড পেল বিকাশ ২০ বছরের ছোট সারার সঙ্গে রণবীরের রোমান্স, হতাশ নেটিজেনরা রনি হত্যা : ৩৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি নুর ইসলাম গ্রেপ্তার রূপালী সঞ্চয়-ঋণদান সমবায় সমিতির এমডি-ম্যানেজার গ্রেপ্তার মুক্তাকিম বিল্লাহ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন সেতু বিভাগের সচিব হলেন ফাহিমুল ইসলাম ইসরায়েলি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ প্রথম মাসের বেতন ত্রাণ তহবিলে দিলেন আসিফ মাহমুদ ধামরাইয়ে ৯ দাবিতে আকিজ ফুড শ্রমিকদের বিক্ষোভ নারায়ণগঞ্জে বাজারে আগুন, ৩০ দোকান পুড়ে ছাই পদ্মার চরে পানি, হতাশ চাষিরা এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান গ্রেফতার সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণে বদ্ধপরিকর: প্রধান উপদেষ্টা আজ থেকে শুরু হচ্ছে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ব্রাজিলের ‘হেক্সা’ দিল্লির সুপারশপে দেখা মিললো সাবেক এসবিপ্রধান মনিরুলের

রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে জার্মানির সমস্যা কোথায়?

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২
  • ৪০ বার পড়া হয়েছে

ইউক্রেনে বর্বর যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় বিশ্ব আশা করেছে যে জার্মানি, ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং একটি রাজনৈতিক হেভিওয়েট দেশ হিসেবে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন ও বন্ধ করার লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু ইউক্রেনকে সমর্থন করার ব্যাপারে জার্মানি আসলে কতটা সিরিয়াস?

২৭ ফেব্রয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ সোলজ একটি ‘ঐতিহাসিক পরিবর্তন’ ঘোষণা করেছিলেন। ব্যাপকভাবে সমর্থিত বক্তৃতায় সোলজ জার্মানির পররাষ্ট্রনীতি উলটে দেন। শোলজ বলেছিলেন, সংকটপূর্ণ অঞ্চলে অস্ত্র না পাঠানোর অবস্থান পরিত্যাগ করে জার্মানি এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে রক্ষার জন্য অস্ত্র পাঠাবে।

জার্মানি তার সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে তুলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সোলজের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস দলের বিরুদ্ধে প্রচারণাও চালিয়েছিল। বলা হয়েছিল, এটি রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে লক্ষ্যবস্তু করবে, নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করবে, এমনকি সুইফট ব্যাংকিং সিস্টেমে রাশিয়ার প্রবেশাধিকার অস্বীকার করবে। সোলজ রাশিয়া থেকে বিতর্কিত নর্ড স্ট্রিম-২ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের সমাপ্তি বন্ধ করে দিয়েছেন, যা রাশিয়ার ওপর জার্মানির শক্তিনির্ভরতা নিশ্চিত করবে।

এই পদক্ষেপগুলো ছিল জার্মানির ‘ওয়ান্ডেল দুর্খ হান্ডেল’ অথবা ‘বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন’-এর দীর্ঘস্থায়ী নীতি থেকে ১৮০ ডিগ্রি সরে যাওয়ার ঘোষণা। ঐ দীর্ঘস্থায়ী নীতির মাধ্যমে রাশিয়াকে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক একীকরণের সুযোগ ছিল। প্রতিবেশী দেশগুলো এবং বিদেশি সমালোচকেরা জার্মানির এই নীতিকে রাশিয়ার ওপর ঝুঁকিপূর্ণ নির্ভরতা হিসেবে দেখেছিল। জার্মানিতে ক্ষমতায় আসা সরকারগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে আরো ভালো সম্পর্ক স্থাপন হিসেবে দেখেছিল।

তার পরও সোলজের ঐতিহাসিক ঘোষণার প্রায় দুই মাস পরে, এই ফ্রন্টগুলোর কোনোটিতেই খুব বেশি কিছু ঘটেনি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং তার নিজস্ব মন্ত্রীদের সমালোচনা সত্ত্বেও জার্মান সরকার ইউক্রেনের প্রতি তার সমর্থনের ব্যাপারে ধীরগতিতে হাঁটছে।

জার্মানির পক্ষ থেকে সামরিক সাহাঘ্য এখনো দেওয়া হয়নি। এস্তোনিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র জার্মানির চেয়ে অনেক ছোট দেশ হয়েও যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জার্মানির চেয়ে বেশি অস্ত্র ইউক্রেনকে দিয়েছে। ট্যাংক, আর্টিলারি বা উন্নত বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মতো ভারী অস্ত্র একেবারেই সরবরাহ করা হয়নি।

ইউক্রেনের ডোনবাস অঞ্চলে নতুন রুশ আক্রমণ শুরু হলেও এবং জনবহুল কেন্দ্রগুলোতে নির্বিচারে গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটলেও জার্মান সরকার নড়েনি। পরিবর্তে, জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখট ঘোষণা করেছিলেন যে ইউক্রেনকে আরো অস্ত্র সরবরাহ করা জার্মানির প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে ক্ষুণ² করবে।

গত সপ্তাহে সোলজ ঘোষণা করেছিলেন যে জার্মানি ইউক্রেনকে ১ বিলিয়ন ডলার দেবে। এটি সংসদীয় অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এই সিদ্ধান্ত জুন পর্যন্ত বিলম্বিত করা হয়েছে। অথচ রাশিয়া এখনো তার তেল ও গ্যাস বিক্রির মাধ্যমে জার্মানি ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ থেকে প্রতিদিন বিলিয়ন ডলার পায়। জার্মানি বাকি ইউরোপের তুলনায় রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের ওপর বেশি নির্ভরশীল, তাই তার নির্ভরতা বন্ধ করা ইউক্রেনের প্রতি বিশ্বাসযোগ্য অঙ্গীকারের একটি শক্তিশালী সংকেত হবে। এ ছাড়া, এটি জার্মানির জন্য অগত্যা ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিণতি ঘটাবে না।

একটি পরিসংখ্যানে দেখায়, জার্মানির জনসাধারণ ইউক্রেনে সামরিক ও আর্থিক উভয় সহায়তা পাঠাতে সমর্থন করে, বেশির ভাগই সোলজের নীতিতে পরিবর্তনকে সমর্থন করে। যদিও জার্মানরা রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে চিন্তিত, ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যাপক হওয়া সত্ত্বেও।

তাহলে কি জার্মানি রাশিয়ার ব্যাপারে পূর্বের অবস্থান থামাচ্ছে? অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহাঘ্যের স্থবিরতা, জনসমর্থনের অভাব, জার্মান অর্থনীতির সম্ভাব্য ক্ষতি, এমনকি সরকারি জোটের রাজনীতি দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। এটি কোনো নাৎসি উত্তরাধিকারের ওপর জার্মান অপরাধবোধের প্রশ্নও নয়।

জার্মান রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি অবিচল মনোভাবের উদাহরণ রয়েছে যে ‘রাশিয়া ছাড়া ইউরোপে শান্তি থাকতে পারে না।’ এটি জার্মানির ভাবনার ব্যর্থতা।

এই ভাবনা বাস্তবে রাশিয়ান স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া। কয়েক দশক ধরে জার্মান অভিজাতরা তাদের আশপাশের ছোট দেশগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থকে বাতিল করে দিয়েছে, যেমনটি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

অনেক রাশিয়ান ও জার্মান নেতাদের বিভক্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে ইউক্রেন, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র এবং বাল্টিক রাজ্যগুলোর মতো জায়গাগুলো কেবল ‘মাঝের ভূমি’— উন্নয়নমুখী এই দেশগুলোর স্বার্থকে ততটা গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত নয়। জার্মানি পুতিন সম্পর্কে তাদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে এবং নর্ড স্ট্রিম ২-এর প্রতি তাদের বিরোধিতা প্রত্যাখ্যান করে। ইউক্রেন এখন একটি কঠিন সমস্যা তৈরি করেছে :রাশিয়া যখন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় পরিচয়কে আক্রমণ করে মুছে ফেলার জন্য নরক বানিয়ে ফেলেছে, তখন রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্বের ন্যাঘ্যতা ধরে রাখা কঠিন।

জার্মান ও রাশিয়ান রাজনৈতিক উচ্চমহলের মধ্যে রাশিয়ার সম্পর্কে, রাশিয়ার প্রতি এই সম্মান রাশিয়াকেই শক্তিশালী করে। সম্ভবত সবচেয়ে কুখ্যাতভাবে সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোডার অফিস ছেড়ে যাওয়ার পরে দ্রুত রাশিয়ান সংস্থা রোসনেফেটর বোর্ডে একটি আসন লাভ করেন এবং তারপর রাশিয়ান স্বার্থের জন্য উদ্যমী হয়ে লবিং করেন। রাশিয়ান আক্রমণের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে শ্রোয়েডারকে নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইনের জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কোম্পানি গ্যাজপ্রমের বোর্ডে যোগদানের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।

অন্যান্য রাজনীতিবিদও যৌথ জার্মান ও রাশিয়ান স্বার্থকে রক্ষা করেছেন। ফ্রাংক-ওয়াল্টার স্টেইনমায়ার, জার্মানির প্রেসিডেন্ট, গত বছর নর্ড স্ট্রিম-২কে ‘রাশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে শেষ সেতুগুলোর মধ্যে একটি’ হিসাবে রক্ষা করেছিলেন এবং রাশিয়ান আগ্রাসন সত্ত্বেও যুক্তি দিয়েছিলেন যে ‘আমাদের বৃহত্তর স্বার্থটি হারাতে হবে না।’ প্রাক্তন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক নেতা ও জ্বালানিমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ান আক্রমণের পরে ‘ইউক্রেনের ফেডারেলাইজেশন’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যা ইউক্রেনে স্থায়ী রাশিয়ান ভূমিকার অর্থ।

এমনকি স্কোলজ, বর্তমান চ্যান্সেলর, পূর্বে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চেয়েছিলেন, যখন ২০০৮ সালে পুতিনের জর্জিয়া আক্রমণ এবং ২০১৪ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন উপেক্ষা করেছিলেন। অনেক জার্মান অভিজাতের জন্য রাশিয়াকে সন্তুষ্ট করাকে জার্মানির অর্থনৈতিক স্বার্থ হিসাবে দেখে, তার সঙ্গে জড়িত বলে মনে করে। শুধু অ্যানার্জি নয়, রাশিয়ান ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের দ্বারা জার্মান রিয়েল এস্টেট ও শিল্পে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢুকে গেছে।

এই মানসিকতায় প্রথমে রাশিয়ান স্বার্থ বিবেচনা না করে ইউক্রেনের টিকে থাকার কথা বলা প্রায় অসম্ভব। সর্বোপরি, শোলজের পূর্বসূরি, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেলও ‘রাশিয়ার জন্য শত্রুতা কতটা সহনীয় তা মনে রেখেছিলেন’, তার শীর্ষ বিদেশনীতি উপদেষ্টাদের একজন এ কথা বলেছিলেন।

জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নেতা। তবু বারবার এটি পিছিয়েছে এবং রাশিয়ার স্বৈরাচারী সরকারের কাছে দাসখত দিয়েছে। যদি একটি সার্বভৌম ইউরোপীয় দেশের ভয়ংকর আক্রমণ বার্লিনে রাজনীতিবিদদের মন পরিবর্তন করতে না পারে, তবে জার্মানি কেবল তার নৈতিক বাধ্যবাধকতাই ব্যর্থ করছে না, বরং পুতিনের কাছে নিজেদের সরকারের খ্যাতিও ডুবিয়ে দিচ্ছে।

লেখক: আনা গ্রজিমালা-বুস, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক

লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস থেকে অনূদিত

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com