রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গে মৃত্যুর মিছিল আবার কমেছে। এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। এদের মধ্যে করোনা পজেটিভ ৬ জন, করোনা নেগেটিভ ৪ জন এবং করোনার উপসর্গে ৪ জন মারা যান। মৃতদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ এবং ৫ জন নারী। রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ নিয়ে জুলাই মাসের ১২ দিনে রামেক হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গে ২০৬ জনের মৃত্যু হলো। আর জুন মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩৫৪ জনের।
রামেক পরিচালক জানান, নতুন মৃতদের ৫ জন রাজশাহীর (পজেটিভ ২, নেগেটিভ ২ উপসর্গে ১), নাটোরের ৪ (পজেটিভ ১, উপসর্গে ২ ও নেগেটিভ ১) জন, নওগাঁ ২ (পজেটিভ) এবং পাবনা ১ (পজেটিভ) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ (নেগেটিভ ১, উপসর্গে ১) জন।
তিনি বলেন, আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত এ হাসপাতালের ৪৫৪ বেডের বিপরীতে করোনা ও উপসর্গের রোগী ভর্তি রয়েছেন ৫১৭ জন। গতকাল রবিবার ভর্তি ছিলেন ৫১৮ জন। অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রামেক হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে রাজশাহীর ৩০৪, চাপাইনবাবগঞ্জের ৪২, নাটোরের ৬৬, নওগাঁর ৪৪, পাবনার ৪৫, কুষ্টিয়ার ৭, চুয়াডাঙ্গার ৪, জয়পুরহাটের ৩, সিরাজগঞ্জের ১, নীলফামারীর ১ ও বগুড়ার ১ জন রয়েছেন। সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৬৪ জন। এদের মধ্যে রাজশাহীর ৩৩, চাপাইনবাবগঞ্জের ৩, নাটোরের ১০, নওগাঁর ৭, পাবনার ৮, জয়পুরহাটের ২, সিরাজগঞ্জের ১ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫৮ জন।
প্রতিদিন করোনা ও উপসর্গের রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ সামাল দিতে রামেক হাসপাতালের আরও দুইটি ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিটের জন্য প্রস্তুত করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ওয়ার্ড দু’টিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযোজনের কাজ চলছে।
রাজশাহীতে করোনার ফের উর্ধ্বমূখী
রামেক পরিচালক জানান, রাজশাহীতে রবিবার বেড়েছে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার। এদিন দুইটি ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৫১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা আগের দিনের চেয়ে ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। এদিনের করোনা শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এর আগের দিন শনিবার ছিল ২৫ দশমিক ০৫ শতাংশ। তারও আগের দিন শুক্রবার ছিল ৩৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, বৃহস্পতিবার ছিল ১৮ দশমিক ১৬ শতাংশ, বুধবার ছিল ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ, মঙ্গলবার ছিল ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ, সোমবার ২৯ দশমিক ০৩ শতাংশ, গত রবিবার ছিল ৩৪ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং শনিবার ছিল ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
ল্যাব সূত্র জানায়, রবিবার দিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) ভাইরোলজি ল্যাব এবং রামেক হাসপাতালের মলিকুলার ল্যাবে তিন জেলার ৬৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ এসেছে ১৮৬ জনের। রাজশাহী জেলা ছাড়াও চাঁপাইনবাগঞ্জের ১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় সবার নেগেটিভ এবং নওগাঁর ১৩৩ জনের নমুনায় ৩৪ জনের করোনা পজেটিভ হয়েছে।
গত ঈদ উল ফিতরের পর রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। শংক্রমণ ৬০ শতাংশ এর কাছাকাছি হলে গত ১১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। পরে দুই দফা বাড়িয়ে সর্বাত্মক লকডাউন ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর পর ১ জুলাই থেকে সারাদেশে নতুন করে সরকারি ঘোষিত দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শুরু হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ