সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
চাকরির বয়স ৩৫ আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল যমুনায় অটোমেটেড সেবা প্রতিরোধ করবে অপচয় ও দুর্নীতি : অর্থ উপদেষ্টা নেপালে বন্যা-ভূমিধসে ১৯২ মৃত্যু, উদ্ধারে হিমশিম আমরা প্রস্তুত, দীর্ঘ যুদ্ধেও বিজয়ী হবো: হিজবুল্লাহর উপপ্রধান এবি ব্যাংকের বন্ড ইস্যু পুনর্বিবেচনার আবেদন তেলবাহী জাহাজে আগুনের ঘটনায় ২ জনের মরদেহ উদ্ধার ৯৯৯-এর রেসপন্স টাইম আরো কমিয়ে আনা হবে : আইজিপি প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারে কমিটি, নেতৃত্বে ইমিরেটাস অধ্যাপক মনজুর হাসিনার পতনের পর গ্রামীণফোনের শেয়ারদর বেড়েছে ৫৩ শতাংশের বেশি স্বামীসহ গ্রেফতার সাবেক এমপি হেনরি যুবদল নেতা হত্যা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে সুলতান মনসুর মিরাজ-সাকিবের ঘূর্ণির পর ২৮৫ রানে ইনিংস ঘোষণা ভারতের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সুপারিশমালা দেবে বিএনপি সেপ্টেম্বরে নির্যাতনের শিকার ১৮৬ নারী-কন্যাশিশু জিয়াউর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলায় মামলা চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবি: পর্যালোচনা কমিটি গঠন ডিসি নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল: ১৭ উপসচিবকে শাস্তির সুপারিশ ঢাকাসহ ৯ অঞ্চলে মাঝ রাতের মধ্যে ঝোড়ো হাওয়ার আভাস বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্রে হেলেনের তাণ্ডবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯১

রামচন্দ্রপুর খালে উচ্ছেদ অভিযান, মীনা বাজার দু’দিন সময় নিয়েছে

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ২১৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দখল ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া শতবর্ষী রামচন্দ্রপুর খালটি উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আজ সোমবার সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।

রামচন্দ্রপুর খাল হিসেবে পরিচিত এই খালটি তুরাগ নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে রামচন্দ্রপুর হয়ে মোহাম্মদপুর, রায়েরবাজার বধ্যভূমি হয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়েছে। এছাড়া বাইক্কা খাল নামের আরেকটি খাল এর সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে নগরীর জলাবদ্ধতাসহ দূষিত পানি অপসারণে খালটির ভূমিকা অনেক। কিন্তু উদ্যোগের অভাবে এটি হারিয়ে যায়। অবশেষে খালটির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে এটি পুন:খননের পরিকল্পনা নিয়েছে পাউবো। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের ভাঙা মসজিদ থেকে চাঁদ উদ্যান বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার পর্যন্ত যত অবৈধ স্থাপনা রয়েছে তা উচ্ছেদ করে একে পুন:খননের মাধ্যমে সচল করা হবে বলে পাউবো কর্মকর্তারা জানান।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শনে যাওয়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, দখল হয়ে যাওয়া নদী-খালের পরিমাণ নির্ণয় করে তা উদ্ধারে দেশব্যাপী যে অভিযান চলমান রয়েছে তারই অংশ হিসাবে রামচন্দ্রপুর খালটি অবৈধ দখলমুক্ত করা হচ্ছে।

সচিব জানান, দেশের ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনর্দখল প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা মহানগরীর রামচন্দ্রপুর খালের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের নদী-খাল-বিলের দখলকৃত জায়গা উদ্ধারের বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী-খাল দখলমুক্ত করতে বারবার আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা প্রত্যেকটি আরএস, সিএস ধরে ধরে প্রত্যেক জেলায় কোথায় কোথায় আমাদের নদী-খাল দখল করা আছে সেটি নিরূপণ করেছি। পানি আইন ২০১৩ অনুযায়ী যেসব নদী-নালা, খাল-বিল দখলদারদের দখলে রয়েছে সেগুলো উদ্ধার এবং খনন কাজ হাতে নিয়েছি।

পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব বলেন, রামচন্দ্রপুর খালটি উদ্ধার কার্যক্রম শুরুর পূর্বে এখান থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও কোন আইনি ঝামেলা থাকলে তা আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে। ‘সারাদেশে ৪৪ হাজার জমি এভাবে দখলে রয়েছে বলে আমরা নির্ণয় করেছি। আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। যেকোনো মামলার বিষয় এলে আমরা তা মোকাবেলা করবো।’

সচিব আরও বলেন, ‘এখানে অবৈধ দখলদারদের কারণে রীতিমতো খালটি ভরাট হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হয়েছে, যার সবই উচ্ছেদ করব। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে আগেই নির্দেশনা রয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সিএস খতিয়ান ধরে আমাদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অভিযান চালাতে গিয়ে কতগুলো বিষয় আমরা নজর রাখছি- যেমন, আমরা চেষ্টা করছি যেখানে হতদরিদ্র মানুষ থাকে, নদীর বাঁধ ভাঙা মানুষ থাকে তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তারপর উচ্ছেদ করা। স্কুল-কলেজ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির থাকলে সেগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করা হবে।’

আজ রামচন্দ্রপুর খালের যে অংশে সাদেক এগ্রো ডেইরি ফার্ম রয়েছে সেটি উচ্ছে করা হয়। আবদুল আলিম তালুকদার এটি দখল করে এই প্রতিষ্ঠাণের কাছে জায়গাটি ভাড়া দেয়।

এ নিয়ে আবদুল আলিমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এখানে আমার জমি রয়েছে। তবে সরকারের হিসাবে যে অংশ বেশি রয়েছে তা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমি চাই রামচন্দ্রপুর খালটি সচল হোক। তিনি বলেন, শুধু আমাকে উচ্ছেদ করেই যেন অভিযান থেমে না যায়। তার মতে, রামচন্দ্র খালের অনেক জায়গা দখল করে রেখেছে মীনা বাজার।

মীনা বাজারকে কেন উচ্ছেদ করা হচ্ছে না জানতে চাইলে পাউবো কর্মকর্তারা জানান, তারা দু’দিন সময় নিয়েছেন।

জানা যায়, রামচন্দ্রপুর খালের মীনা বাজার অংশ প্রায় দুই বছর আগে দখল হয়ে যায়। স্থানীয়দের থেকে পাওয়া তথ্য মতে, খালের উত্তর পাশের কিছু অংশ মীনা বাজার কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সময় দখল করেছে এবং এখানে ইউল্যাব ইউনিভার্সিটি গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত: দক্ষিণ পাশের সাত মসজিদ হাউজিং গড়ে তোলার সময় দখল হয় খালের অনেকটাই। এলাকার অধিকাংশ বাড়ির ময়লা ফেলা হয় খালের এই অংশে। আর ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয় রামচন্দ্রপুর খাল দখলের অবৈধ প্রক্রিয়া। ২০১৬ সালের মধ্যে পুরো খালটি দখল হয়ে যায় এবং ময়লা ফেলে তা ভরাট করে ফেলা হয়।

 

উচ্ছেদ অভিযানে সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, জ্যামকন গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা বসে রয়েছেন। এ ব্যপারে মীনা বাজার প্রতিষ্ঠাণের জিএম কৃষœ কান্ত গুলদার জানান, আমরা দু’দিন সময় নিয়েছি। আমরাও চাই রামচন্দ্রপুর খালটি সচল হোক।

প্রতিষ্ঠানটির লিগ্যাল চীফ নজরুল ইসলাম বলেন, যদি আমাদের দখলে কোন জায়গা থাকে তবে আমরা তা অবশ্যই ছেড়ে দেব। তিনি বলেন, জ্যামকন প্রতিষ্ঠাণের নামে আমরা মোট ২৩ একর জমির আবেদন করি। সেখান থেকে সরকার আমাদের নামে ৯ একর জমি বরাদ্দ করেন। বরাদ্দকৃত জমিতেই আমরা রয়েছি।

আর ইউল্যাব ইউনির্ভাসিটির রেজিষ্টার আখতার আহমেদ বলেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি সকল নিয়ম কানুন মেনেই। আমাদের দখলে কোন অবৈধ জায়গা নেই। তবে ২০১০ সালে জয়দেব ডেইরি ফার্ম এই খালের জায়গাটি ভরাট করে সরু করে দেয়। এর পরই শুরু হয় একের পর এক দখল প্রক্রিয়া।

পাউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মতিন সরকার বলেন, যতবড় প্রভাবশালীই হোক না কেন সরকারের জায়গা কেউ অবৈধভাবে দখলে রাখতে পারবে না। আমরা রামচন্দ্রপুর খালটি অবশ্যই দখলমুক্ত করে তা খননের মাধ্যমে সচল করবো।

 

স্থানীয়দের মতে, কখনও ট্রাক স্ট্যান্ড, কখনও গরুর খামার, কখনও বা থানা ভবন নির্মাণের নামে ভরাট করে ফেলা হয়েছে খালের বিশাল অংশ। চলছে কয়েকটি হাউজিং কোম্পানির দখলবাজি। দু’দিক থেকেই ভরাট হয়ে যাওয়ায় খালটির এখন আর কোন অস্তিত্ব নেই।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ৩০/৩৫ বছর আগেও মোহাম্মদপুর ও রায়েরবাজারের পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম ছিল রামচন্দ্রপুুর ও কাটাসুরের দুই খাল। বসিলা এলাকায় খাল দু’টি সংযুক্ত হয়ে পশ্চিম দিকে তুরাগ নদীতে গিয়ে মিশেছে। কিন্তু নব্বই দশকের গোড়ায় পুরান ঢাকার বাবুবাজার থেকে লালবাগ, হাজারীবাগ, গাবতলী ও ধউর হয়ে উত্তরার আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করায় রামচন্দ্রপুর খাল দু’ভাগ হয়ে যায়।

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের পর রামচন্দ্রপুর খালের এক অংশ পড়েছে বাঁধের ভেতর মূল শহরের মোহাম্মদপুর-রায়েরবাজার এলাকায়। অন্য অংশ বাঁধের বাইরে বসিলা সংলগ্ন এলাকায় পড়েছে। শহরের ভেতর খালের প্রবাহ থেমে যাওয়ায় ঢাকা ওয়াসা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জানিয়ে দিয়েছে ‘এখানে একদা খাল ছিল’। এরপর ‘ভূমিদস্যু’দের আগ্রাসন শুরু হয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে প্রবহমান খালের ওপর। এই আগ্রাসনের মধ্যে দিয়েই খালটিকে গিলে ফেলা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বসিলা থেকে গাবতলীমুখী সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড। বছর তিনেক আগেও এই ট্রাক স্ট্যান্ডের পাশে ছিল রামচন্দ্রপুর খাল। এখন আর নেই।

এ ব্যপারে ট্রাক চালক আবদুল বাসেত জানান, ‘আশেপাশে কোথাও ট্রাক রাখার জায়গা নাই। আগে মোহাম্মদপুর আল-করীম মসজিদের সামনে ট্রাক রাখা হতো। সেখান থেকে বসিলায় পাঠানো হয়। বসিলায় কবরস্থান হওয়ায় ট্রাক স্ট্যান্ড পাঠানো হয়েছে এই জায়গায়। এই স্ট্যান্ডে প্রায় ২০০ ট্রাক থাকে।’ কারা তাদের এখানে পাঠিয়েছে জানতে চাইলে তার উত্তর দিতে পারেননি বাসেত।

ট্রাক স্ট্যান্ডের পশ্চিম দিকে খাল দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। এখানে খালের জমিতে বস্তিও নির্মাণ হয়েছে বিনা বাধায়।

ট্রাক স্ট্যান্ডের উত্তর পাশে রয়েছে জাকের ডেইরি ফার্ম। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ফার্মের মাধ্যমেই রামচন্দ্রপুর খালের দখল শুরু হয়। সামান্য জমির মালিক হয়ে ডেইরি ফার্ম মালিক দখল করেছেন খালের বিশাল অংশ। এ বিষয়ে ফার্ম মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘খালের কিছু জমি আমার দখলে আছে। সরকার চাইলে দিয়ে দেব।’

ডেইরি ফার্মের দখলের পর উত্তর দিকে খালের কিছু অংশ অবশিষ্ট ছিল। এটাও দখল হয়ে গেছে। বর্তমানে এই অংশে নতুন থানা ভবনের নির্ধারিত স্থান লেখা সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। এর পাশেই খাল ভরাট করে দোকানপাট নির্মাণ করেছেন এক প্রভাবশালী।

রামচন্দ্রপুর খালের পশ্চিম অংশে বাগান বাড়ির পর একটা ত্রিমোহনী রয়েছে। খালের দুটি শাখা একত্রিত হয়ে সোজা পশ্চিমে চলে গেছে তুরাগ নদীর দিকে। এই ত্রিমোহনী থেকে তুরাগ নদী পর্যন্ত খালের মরণ দশা চলছে। নবীনগর হাউজিং ও দয়াল হাউজিং কোম্পানির মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা চলছে খাল দখলের। রাবিশ মাটি ফেলে ১০০ ফুট প্রস্থের খাল এখন পুরোটাই ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে।

এ দু’টি কোম্পানি ছাড়াও খাল দখলে যোগ দিয়েছে চাঁদ হাউজিং, রাজধানী হাউজিং, বসিলা গার্ডেন সিটি ও চন্দ্রিমা হাউজিং।

উচ্ছেদের ভিডিও চিত্র:

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com