বান্দরবানে আলীকদম-মিয়ানমার সীমান্ত থেকে মহিষ আনতে শ্রমিক হিসেবে ৩ হাজার টাকা চুক্তিতে রাজু তঞ্চগ্যাকে (৩৯) নিয়ে যান সাদ্দাম হোসেন। রাজুকে জিম্মায় রেখে মিয়ানমার থেকে ১১টি মহিষ আনেন সাদ্দাম। ওই মহিষগুলো বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু, মহিষ বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেননি তিনি।
২৪ দিন ধরে মিয়ানমারে চোরাকারবারিদের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন রাজু। রাজুকে শিকলে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, রাজু তঞ্চগ্যাকে শিকল পরিয়ে মারধর করা হচ্ছে। ভিডিওতে রাজু টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য সাদ্দাম ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালামের প্রতি আকুতি জানান। রাজুকে কালাম চেয়ারম্যান ও সাদ্দাম হোসেন গরু আনতে বর্ডার পার করে দিয়েছিলেন বলে ভিডিওতে জানানো হয়।
জিম্মি থাকা রাজু তঞ্চগ্যা আলীকদম সদর জলন্ত মনি পাড়ার আশ্রয় প্রকল্প এলাকার মৃত উথাইচিং তঞ্চগ্যার ছেলে। তিনি আলীকদম উপজেলায় পর্যটকদের গাইড হিসেবেও কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রাজুর স্ত্রী পরণ মালা তঞ্চগ্যা জানান, গত ১৩ আগস্ট পার্শ্ববর্তী আমতলী পাড়ার সাদ্দাম হোসেন মিয়ানমার থেকে মহিষ আনতে শ্রমিক হিসেবে তার স্বামী রাজুকে ৩ হাজার টাকা চুক্তিতে নিয়ে যায়। দুই দিন পর বিদেশি ফোন নাম্বার থেকে আব্দুল জলিল নামের এক ব্যক্তি জানান, সাদ্দাম ১১টি মহিষ নিয়ে ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।
বাকি ৫ লাখ টাকা মহিষ বিক্রির পর পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিয়ানমারের বুচিডং জেলার ঋষিডং এলাকায় রাজুকে জিম্মায় রেখে আলীকদম চলে আসেন সাদ্দাম হোসেন। এর পর থেকে সাদ্দামের মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বকেয়া ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে রাজুর পরিবারকে বলা হয়।
তিনি বলেন, আমার স্বামীকে জিম্মায় দিয়ে আসার ২৪ দিন পার হলেও সাদ্দাম সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
রাজুর শ্বশুর ওয়াধন তঞ্চগ্যা জানিয়েছেন, রাজুকে ছাড়িয়ে আনতে বললে সাদ্দাম তাতে অসম্মতি জানিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তাই, গত ২৯ আগস্ট আলীকদম থানায় সাদ্দামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার তবিদুর রহমান জানান, গত মাসের ২৯ তারিখে ওয়াধন তঞ্চগ্যা অভিযোগ জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তসাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন জানান, আগে মাঝে- মধ্যে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে বাংলাদেশে গরু-মহিষ এনে বিক্রি করতেন। সর্বশেষ ২৫ দিন আগে মিয়ানমার থেকে মহিষ এনেছেন। এর পর থেকে আর কোনো ব্যবসা করেননি।
রাজু তঞ্চগ্যার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজু আমার পরিচিত। তবে, তার সঙ্গে কোনো প্রকার ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই। রাজুকে কারও কাছে জিম্মায় রেখে আসিনি।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেছেন, জিম্মি থাকা রাজু ও অভিযুক্ত সাদ্দাম উভয়ই চোরাচালানে জড়িত। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিরুদ্ধেও চোরাচালানে জড়িত থাকার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ওই এলাকার চোরাচালানকারিদের আটক করতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।