গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা): গাইবান্ধার মহাসড়কে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে চলছে তিন চাকার যান। চালকদের দাবি, পুলিশকে টাকা দিয়ে মহাসড়ক ব্যবহার করছেন তারা। তবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ জানায়, রাজনৈতিক চাপের কারণে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছেনা।
জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম খান জানান, বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের চাপড়ীগঞ্জ দো-সিমানা থেকে ধাপের হাট দো-সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার মহাসড়ক গাইবান্ধার অংশ। এখানে দ্রুতগতির ট্রাক-বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে সিএনজি অটোরিকশা আর টেম্পু। সেই সঙ্গে চলছে ভয়ঙ্কর যান ট্রাক্টর। বাদ যায়নি ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ভ্যান।
হানিফ পরিবহনের চালক নান্নু মিয়া জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর এই মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা কমে গিয়েছিল। কিন্তু এই যানগুলো মহাসড়ক দখল করে নেয়ায় দুর্ঘটনা আবারও বাড়ছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহসিন আলী সরকার জানান, মহাসড়কে নসিমন-করিমন ও সিএনজি অটোরিকশাসহ ঝুঁকিপূর্ণ তিন চাকার যান চলাচল সরকার বন্ধ ঘোষণা করলেও তা মানছে না কেউই। বেপরোয়াভাবে এসব যান চলাচল করায় দুর্ঘটনা বাড়ছে।
সম্প্রতি উপজেলার কাটাখালী বালুয়া এলাকায় দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। নিহতরা হলেন- উপজেলার নাকাই হাট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শাহিন সরকার (৩৫), একই উপজেলার পোগইল গ্রামের আব্দুস ছাত্তার (৬৫) ও তালুককানুপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের সাত বছরের শিশু রিফাত।
সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপের হাট পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জালাল উদ্দিন মণ্ডল হীরু জানান, এই মহাসড়কের গাইবান্ধা অংশের ফাঁসিতলা, গোবিন্দগঞ্জ, কাটাখালী বালুয়াহাট, কালিতোলা, কোমরপুর, পলাশবাড়ী ও ধাপের হাটসহ ১০টি স্থানে সিএনজি স্ট্যান্ড রয়েছে।
এছাড়াও জেলার সাতটি উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজারে অন্তত ২০০টি সিএনজি স্ট্যান্ড আছে। প্রতিটি স্ট্যান্ডে গড়ে ১০০টি সিএনজি থাকলেও জেলায় মোট ২১০টি স্ট্যান্ডে ২১ হাজার সিএনজি রয়েছে। সিএনজির পাশাপাশি অটোরিকশা ও নসিমন-করিমনসহ তিন চাকার অন্তত অর্ধলক্ষাধিক যান চলাচল করে।
বালুয়া এলাকার সিএনজি চালক আশরাফুল ইসলাম জানান, বিকল্প পথ না থাকায় এই সড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। আর পুলিশ আটকালে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিলেই ছেড়ে দেয়া হয়।
তবে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফুয়াদ রুহানী টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিন চাকার যান আটকালে তা ছেড়ে দেয়ার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা চাপ দেন। অবৈধ যান ছেড়ে না দিলেই রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা মহাসড়ক অবরোধ করে। এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় যে, ‘ছেড়ে দে মা কাইন্দে বাঁচি’। এ কারণে মহাসড়কে অবাধে তিন চাকার যান চলাচল করলেও নীরব থাকতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১লা আগস্ট থেকে দেশের মহাসড়কগুলোতে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। এই নির্দেশনার পর সড়ক দুর্ঘটনা কমে গেছে বলে মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।