বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: ঢাকার চারপাশে বন্যা পরিস্থিতি শিগগিরই উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই। বরং দিন যত গড়াচ্ছে, বন্যার পানি আরো ফেঁপে উঠছে। আজ বুধবার রাজধানীর কাছের নদ-নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। এরই মধ্যে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কিছু এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়েছে।
ডেমরার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের নলছাটা, দুর্গাপুর, তাম্বুরাবাদ, ধিত্পুর, খলাপাড়া, ঠুলঠুলিয়া, আমুলিয়া-মেন্দিপুর এলাকার নিম্নাঞ্চল বালু নদের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। খিলগাঁওয়ের ডিএসসিসির ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর মধ্যে ইদারকান্দি, ফকিরখালী, দাসেরকান্দি ও গজাইরাপাড়ার রাস্তাঘাট ও নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। ওয়ার্ডের নিম্নাঞ্চলের কমপক্ষে তিন কিলোমিটার রাস্তা তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও কোমরপানি জমেছে। এ ছাড়া ওয়ার্ডের ত্রিমোহনী, লায়নহাটি, নাগদারপাড়, নাসিরাবাদসহ বেশির ভাগ এলাকার নিম্নাঞ্চল ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেড় শতাধিক ঘরে প্রবেশ করেছে বানের পানি।
এলাকাবাসী জানায়, ডিএসসিসির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণগাঁও, ভাইগদিয়া ও মানিকদিয়া খালের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এদিকে ডিএসসিসির ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের মাণ্ডা, কদমতলী, ঝিলপাড়া ও উত্তর মাণ্ডা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ খালের মাধ্যমে বালু নদের পানি ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। আর খালতীরবর্তী বেশির ভাগ বাড়িতেই পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া ডিএসসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মুগদাপাড়া খাল এলাকার নিম্নাঞ্চলেও বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে রাজধানীর সবুজবাগ, বাড্ডা, বেরাইদ, ডুমনি, সাঁতারকূল, দক্ষিণখান, টঙ্গী, গাজীপুরের কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জের দিকে প্রবাহিত বালু নদের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোও প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বালু নদ তীরবর্তী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শাখা নদের সংযোগ ও ছোট-বড় সংযোগ খালেও বানের পানি ঢুকেছে। বন্যার পানিতে ১৫ দিন ধরে ডুবে আছে রূপগঞ্জের নিচু এলাকা। শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের পানি গতকাল বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এদিকে উত্তরের ধরলা ও তিস্তার পানিও কমছে না। উল্টো আগামী ২৪ ঘণ্টায় ওই দুটি নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। নীলফামারী, লালমনিরহাটসহ উত্তরের জেলাগুলোতেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। তবে কিছুটা আশার খবর হলো, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে।
মৌসুমি বায়ু ফের সক্রিয় হওয়ায় গত সোমবার থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে দেশের প্রায় সব জেলাতেই। কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণও হচ্ছে। এতে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীলও আছে। চলমান বন্যা ঈদুল আজহা পেরিয়ে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর ও নওগাঁর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অন্যদিকে ঢাকার আশপাশের জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তিনি বলেন, তাঁদের পর্যবেক্ষণে থাকা ১০১টি পানির স্টেশনের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩টির পানি বেড়েছে, ৫৫টির কমেছে। তিনটির পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। বিপৎসীমার ওপরে নদীর সংখ্যা ১৮। বিপৎসীমার ওপরে স্টেশনের সংখ্যা ২৯।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বন্যাকবলিত জেলা ৩১টি। জেলাগুলো হলো—ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ।
বন্যাকবলিত উপজেলার সংখ্যা ১৫৩ এবং ইউনিয়নের সংখ্যা ৯০৮। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮১৯ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৭ লাখ দুই হাজার ১৭৯। বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এক হাজার ৬০৩টি। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত লোকসংখ্যা ৮৯ হাজার ৩০০। বন্যাকবলিত জেলায় এ পর্যন্ত মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে ৯০১টি এবং বর্তমানে চালু আছে ৩৮৫টি।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। ফলে ফেরিঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শ্রীনগরের ভাগ্যকুল পয়েন্টে পদ্মার পানি অপরিবর্তিত থেকে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপরে এবং লৌহজংয়ের মাওয়া পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের নদীর তীরবর্তী ১৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষাধিক পরিবার। অনেক গ্রামে বসতঘরের মধ্যেই কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও বুক সমান পানি। দিশাহারা লৌহজং উপজেলার মানুষ। শুধু নিম্নাঞ্চলই নয়, পানি ঢুকেছে উঁচু জায়গার বসতবাড়িতেও।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বন্যার পানির তোড়ে কাবাড়িয়াবাড়ী নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। গত সোমবার গভীর রাতে উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের ডোয়াইল পূর্বপাড়া এলাকায় ঝিনাই নদী রক্ষা বাঁধের ৩০ মিটার রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে ওই ইউনিয়নে নতুন করে বন্যার পানি ঢোকায় ২০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
যমুনা নদীর পানি গতকাল বিকেলে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্তমানে যমুনা নদীতে পানি কমতে থাকলেও কমছে না বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ। বন্যায় ছয় উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের তিন লাখ ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
গাইবান্ধায় গতকালও ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদের পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তার পানি সামান্য কমেছে। করতোয়ার পানি সামান্য বেড়েছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল। সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সাদুল্যাপুর, গোবিন্দগঞ্জ, সদর উপজেলাসহ ছয় উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেআই