হায়া সোফিয়া এখনো সমুজ্জ্বল তার আপন সৌন্দর্যে। প্রতিবছর শুধু মুসলিমরাই নয় অন্য ধর্মেরও হাজার হাজার পর্যটক একবার হলেও ঢুঁ মারেন হায়া সোফিয়ায়। বহু ইতিহাসের সাক্ষী হায়া সোফিয়াকে সর্বশেষ মসজিদ হিসেবে চালু করা হয় ২০২০ সালের ২৪ জুলাই। ৮৮ বছর পর মুসল্লিরা এবার প্রথম তারাবি আদায় করেছেন সেখানে। পুরো রমজানে রঙিন চাদরে ঢাকা ছিল হায়া সোফিয়া। এই মসজিদের ভেতরে এক হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
এবারের রমজানে ৫০ বছর বয়সী ইব্রাহিম সেতিন প্রথমবারের মতো হায়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদে তারাবি পড়তে গিয়েছিলেন এবং তিনি বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, গত ৩০ বছর ধরে এই শহরে বসবাস করছি। কিন্তু প্রথমবারের মতো এখানে তারাবির নামাজ আদায় করতে পেরে তিনি বেশ খুশি। ইব্রাহিম বলেন, আমি খুব খুশি যে এটি আবারও মসজিদ হিসেবে চালু করা হয়েছে। তার কাছে এই মূহুর্তটি কী তা তিনি বর্ণনা করতে পারছিলেন না এবং তার চোখে পানি চলে আসে।
২০২০ সালের ১০ জুলাই তুরস্কের আদালত হায়া সোফিয়াকে জাদুঘরের মর্যাদা বাতিল করে মসজিদে রূপান্তরের আদেশ দেন। মসজিদ ছাড়া অন্যকিছু হিসেবে এটির ব্যবহারকে অবৈধ বলেও জানান আদালত। পরে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই স্থাপনাকে মসজিদে রূপান্তরে আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মসজিদটি খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
পবিত্র রমজান মাস জুড়েই হায়া সোফিয়ায় ছিল নানা আয়োজন। এর আগে নামাজ আদায়ের জন্য খুলে দেওয়া হলেও করোনা মহামারি শুরুর পর স্বাস্থ্যবিধির কারণে গত দুই বছর ওই মসজিদে তারাবি নামাজ আদায় করা বারণ ছিল। ফলে মুসল্লিরা অন্য সময় নামাজ আদায় করলেও তারাবি নামাজ আদায়ের সুযোগ পাননি। দীর্ঘ সময় পর তারা এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদে তারাবি আদায়ের সুযোগ পেলেন এবছর।
হায়া সোফিয়া ঐতিহাসিক যুদ্ধ ও পরিবর্তনের কেন্দ্রীয় প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। স্মৃতিস্তম্ভটি সম্রাট, সুলতান এবং আধুনিক দিনের রাজনীতিবিদদের দ্বারা বারবার পরিবর্তনের খাতায় নাম লিখিয়েছে। বারবার পরিচয় বদলালেও অবকাঠামো ঠিক আগের মতোই আছে, শুধু বদলেছে রঙের প্রলেপ।
অটোমান (ওসমান) বংশীয় সুলতান তৃতীয় মেহমেদ ১৪৫৩ সালে বাইজান্টাইন শাসকদের হাত থেকে ইস্তাম্বুল দখল করে নেন। এর আগ পর্যন্ত শহরটির নাম ছিল কনস্টান্টিনোপল। ইস্তাম্বুল দখলের পর বিজয়ী মুসলিম বাহিনী প্রথমবারের মতো গির্জার ভেতরে নামাজ আদায় করে। অটোমান শাসকরা এরপর হায়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করেন। মসজিদের চারপাশে চারটি মিনারও তৈরি করেন তারা। এর পরের কয়েকশো বছর ধরে হায়া সোফিয়া ছিল অটোমান মুসলমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু।
১৯৩৪ সালে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতা চালু করার প্রক্রিয়ায় মসজিদটিকে জাদুঘরে রুপান্তর করা হয়। হায়া সোফিয়া এখন তুরস্কের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান বলে স্বীকৃত। প্রতিবছর ৩৭ লাখের বেশি পর্যটক এটি দেখতে পাড়ি জমান তুরস্কে।
সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ