সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি চায় এনজিওগুলো: দেবপ্রিয় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আসিফ রহমানের সঙ্গে গোলাম পরওয়ারের সাক্ষাৎ প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত ম্যাক্রোঁর অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বানে চটেছেন নেতানিয়াহু কোটা উঠিয়ে লটারির মাধ্যমে রাজউকের প্লট বরাদ্দের প্রস্তাব গণপূর্ত উপদেষ্টার সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেনকে ১০ দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ চৌধুরী নাফিজ সরাফতের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আমি কোনো দুর্নীতি করিনি : মাদকের ডিজি শুধু মেগা প্রজেক্ট নয়, সবুজায়ন বাড়াতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা শেরপুরে কমছে নদ-নদীর পানি, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি কর্মচারী হত্যায় হাজী সেলিমসহ ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হলো করাচি বিমানবন্দরের পাশে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ২ চীনা নাগরিক পূজায় জঙ্গি হামলার শঙ্কা নেই: আইজিপি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, পিটিআইয়ের নেতাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা এস আলম পরিবারের ১৩ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে হত্যা মামলায় ওসি গ্রেপ্তার সিন্দুকের ভেতর শাশুড়ির মরদেহ, পুত্রবধূ আটক বাংলাদেশ রিটেইল অ্যাওয়ার্ড পেল বিকাশ

১৭ বছর পালিয়ে ছিলেন ‘জঙ্গিনেতা’ আব্দুল হাই

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপলোড সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০২২
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি নেতা আব্দুল হাই (৫৭) প্রায় ১৭ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে’র (হুজি-বি) প্রতিষ্ঠাতা আমির।

আশির দশকে ভারত-পাকিস্তানের মাদরাসায় পড়াশোনা করা আব্দুল হাই আফগানিস্তানে মুজাহিদ হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৯১ সালে দেশে ফিরে হুজি-বি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৯২ সালে কক্সবাজারের উখিয়ায় ট্রেনিং ক্যাম্পও চালু করেন হাই। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা অস্ত্র সরবরাহ করতেন। আব্দুল হাইসহ তিনজন সেখানে প্রশিক্ষণ দিতেন। প্রায় ৪ বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৬ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ওই ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, উখিয়ার ট্রেনিং ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হন জঙ্গি নেতা আব্দুল হাই। এরপর একে একে ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা, ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় জড়িত ছিলেন তিনি।

পলাতক জঙ্গি নেতাদের বিষয়ে নজরদারির ধারাবাহিকতায় অবশেষে বুধবার (২৫ মে) রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুফতি আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করা হয়।

তার বিরুদ্ধে সাতটি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, যার মধ্যে দুটি মৃত্যুদণ্ড ও দুটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। মোট তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ১৩টি।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটালীপাড়ায় জনসভার অদূরে জঙ্গি মুফতি আব্দুল হাইসহ তার সঙ্গী জঙ্গি সদস্যরা ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট মুফতি আব্দুল হাইসহ ১০ জন মৃত্যুদণ্ড ও চার জনকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন মৃত্যুবরণ করেন, আহত হন অনেকে। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন আব্দুল হাইসহ ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও প্রায় তিন শতাধিক গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও আব্দুল হাইসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। মুফতি আব্দুল হাই ওই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এছাড়া, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরে বৈদ্যের বাজারে জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচ জনকে হত্যা করে ও শতাধিক লোককে আহত করে। এ ঘটনায় মামলায় আব্দুল হাই চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি ও তার বিরুদ্ধে দুটি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

যেভাবে জঙ্গিবাদে জড়ান আব্দুল হাই

আব্দুল হাই নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ মাদরাসায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত হেফজ বিভাগে পড়ালেখা করেন। এরপর ১৯৮১ সালে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে দেওবন্দ দারুল উলুম মাদরাসায় লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেওবন্দে পড়ালেখা করে মাস্টার্স সমতূল্য দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে।

এরপর ১৯৮৫ সালের শেষে ওই দেশের নাগরিক হিসাবে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ১৯৮৬ সালে পুনরায় ভারতে ফিরে যান। সেখান থেকে পাকিস্তানি ভিসা নিয়ে করাচিতে গিয়ে একটি মাদরাসা থেকে দুই বছরের ইফতা কোর্স সম্পন্ন করে মুফতি টাইটেল অর্জন করে।

১৯৮৯ সালে ওই মাদরাসায় একাধিক বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি মিরানশাহ বর্ডার দিয়ে আফগানিস্তানে মুজাহিদ হিসাবে যান। সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি সদস্য ও ৩০-৩৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক একসঙ্গে হয়ে একটি ক্যাম্পে অবস্থান নেন।

পাকিস্তানি এক হুজি নেতা ও বাংলাদেশি এক জঙ্গির নেতৃত্বে ‘একে-৪৭’ ও ‘থ্রি নট থ্রি’ রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। পরে আফগানিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেন। আফগানিস্তানে থাকাকালীন ‘হুজি-বি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন মুফতি আব্দুল হাই। তিনি হুজি-বির আমির হিসেবেই বাংলাদেশে আসেন। ১৯৯১ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ নামে প্রচারণা শুরু করেন।

১৯৯২ সালের প্রথম দিকে আব্দুল হাই কক্সবাজারের উখিয়ার একটি মাদরাসায় গিয়ে ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। পার্শ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা ওই ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র সরবরাহ করতেন এবং মুফতি আব্দুল হাই ও তার দুই সহযোগী সেখানে প্রশিক্ষণ দিতেন। সেখানে তিনি চার বছর অবস্থান করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৬ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানে ওই ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার মুফতি আব্দুল হাই ‘জাগো মুজাহিদ’ মাসিক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৯১ সালে চালু হয়। তার অফিস খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায়। ২০০০ সালে সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে। মুফতি আব্দুল হাই ২০০০ সালে ওই পত্রিকার অফিস থেকে গ্রেফতার হন। দুই মাস কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পান।

যেভাবে ১৭ বছর আত্মগোপনে ছিলেন আব্দুল হাই

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন জঙ্গিবাদী ঘটনার সঙ্গে হুজি-বির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে ২০০৬ সালের পর মুফতি আব্দুল হাই আত্মগোপনে চলে যান। তার পরিবার তখনও নারায়ণগঞ্জেই বসবাস করতেন কিন্তু তিনি কুমিল্লার গৌরিপুরে তার শ্বশুরবাড়ী এলাকায় আত্মগোপন করেন।

গৌরিপুর বাজারে তার শ্বশুরের কেরোসিন ও সয়াবিন তেলের ডিলারশিপের ব্যবসা ছিল। তিনি সারাদিন ব্যবসা দেখাশোনা করে ওই দোকানেই রাত কাটাতেন। এভাবেই ২০০৯ সাল পর্যন্ত তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। গৌরিপুরে থাকা থাকাবস্থায় তিনি মাঝে মধ্যে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করে নারায়ণগঞ্জ যাতায়াত করতেন।

পরে কৌশলে মঈন তার পরিবারের সবার ঠিকানা পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জে ভোটার হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। স্থানীয় এলাকাবাসী যেন তার পরিচয় জানতে না পারে সেজন্য তিনি ঘর থেকে খুব কম বের হতেন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে তার বর্তমান ঠিকানার বাসাটি এলাকার লোকজনের কাছে তার বড় ছেলের বাসা হিসেবেই পরিচিতি করান। অবশেষে র‌্যাব-২ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের ওই বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com