সুন্দর এক কন্যা শিশু। বয়স দুই বছর। শিশুটির বয়স দুই বছরেই থেমে গিয়েছিল। শিশুটি জীবিত নয় মৃত।
কবে মারা গেছে শুনলে আরো অবাক হবেন! শিশুটি মারা গেছে ১০০ বছর আগে। তবুও দেখলে মনে হবে একটি ছোট্ট পুতুল ঘুমিয়ে আছে। কারণ শিশুটিকে মমি করে রাখা হয়েছে। বলা হয় থাকে এটি সবচেয়ে নিঁখুতভাবে সংরক্ষিত দেহ।
কন্যা শিশুটির নাম রোজালিয়া লোম্বার্দো। দুঃখজনকভাবে ১৯২০ সালে তার দ্বিতীয় জন্মদিনের ঠিক আগে নিউমোনিয়ার আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সম্ভবত স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সময় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল শিশুটি। দক্ষিণ ইতালির সিসিলির পালেরমোতে অবস্থিত ভুগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্র ক্যাপুচিন কনভেন্টে ৮০০০ টি অন্যান্য মমির সঙ্গে রাখা হয়েছে রোজালিয়া লোম্বার্দোর মমি। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ তার সংরক্ষিত দেহ দেখতে আসে।
রোজালিয়া লোম্বার্দো
এতো নিখুঁত অবস্থায় কীভাবে রাখা হয়েছিল তা পুরোপুরি কেই জানে না । শিশুটির স্বর্ণকেশী চুল এবং ত্বক এখনও সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে। রহস্যের কোন কিনারা না পেয়ে কেউ কেউ দাবি করেছিল এটি আসলে একটি মোমের পুতুল। এসব দাবি প্রমানের জন্য মমিটির বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছিল। এবং পরীক্ষায় ওই সব পক্ষের দাবি ভুল প্রমানিত হয়। এটি আসলেই কন্যা শিশুর মমি। শুধু তাই নয় এক্স-রে করে দেখা গেছে মমিটির হাড়, মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গর কোনো ক্ষয় হয়নি। এতোটাই সুন্দর ভাবে তাকে মমি করে রাখা হয়েছিল। শুধু মমিটি ৫০শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। শিশুটির মমি নিয়ে নানা অদ্ভুত কথাও প্রচলিত হয়েছিল। অনেকে নাকি দেখেছেন মমিটি চোখের পাতা নড়িয়েছে। যেটা পরে ভুল প্রমানিত হয়।
রোজালিয়া লোম্বার্দোর পরিবার সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি তবে ধারানা করা হয় শিশুটি ধনী সম্ভ্রান্ত জেনারেল মারিও লোম্বার্দোর কন্যা ছিলেন। শিশুটির নাম অনুসারে এটি ধারনা করা হয়ে থাকে। তার কন্যাকে তিনি এতটাই ভালোবাসতেন যে তিনি শিশুটিকে কবর দিতে চাননি। এর পরিবর্তে তার দেহ সংরক্ষণের জন্য বেছে নিয়েছিলেন।
মমির গায়ে লেখা একটি বার্তা থেকে জানা যায়, শিশুটিকে মমি করেছিলেন আলফ্রেডো সালাফিয়া নামে একজন। যিনি চর্ম বিশেষজ্ঞ এবং লাশ সংরক্ষণে পারদর্শী। তিনি একটি ফর্মুলা ব্যবহার করেছিলেন। যেখানে ছিল গ্লিসারিন, ফরমালিন জিঙ্ক সালফেট, ক্লোরাইড, অ্যালকোহল এবং স্যালিসিলিক অ্যাসিড।
আলফ্রেডো সালাফিয়া
রোজালিয়া লোম্বার্দোরকে বর্তমানে একটি কাঁচের কফিনে রাখা হয়েছে। বাইরে থেকে কোনো ব্যাকটেরিয়া বা জীবানু কফিনে ঢুকতে পারে না। ফলে বাইরের পরিবেশের কারণে মমিটি নষ্ট হবে না।
সূত্র : ইউনি ল্যাড।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ