কভিড-১৯ এর কারণে মাঝে একটি বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সরাসরি যোগ দিতে পারেননি তিনি। এবার স্বল্প পরিসরে হলেও জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ কারণেই উৎসবের রঙ লেগেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। বিশেষ করে প্রিয় নেত্রীকে বরণ করে নেয়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের রাস্তা এখন প্রতিদিনই শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে তুলছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। চলছে একের পর এক প্রস্তুতি সভা। অন্যান্য স্টেট থেকেও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিউইয়র্কে আসার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অনেকেই ভাবছেন, দলীয় সভানেত্রী হিসেবে এবার হয়তো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পারেন শেখ হাসিনা। সেই প্রত্যাশায় অনেকে নিজেদের বিভিন্ন পদপ্রার্থী ভেবে এক ধরণের জনসংযোগও শুরু করেছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টায় জেএফকে এয়ারপোর্টে নামবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত থেকে প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এবার অনেক কর্মসূচিই হবে সীমিত আকারে। প্রধানমন্ত্রী তিন থেকে চারবার জাতিসংঘের ভেতরে যাবেন। সেখানেও তার সঙ্গী হবেন খুব অল্প সংখ্যক। ফলে এবার নেতাকর্মীরা সেই অর্থে হয়তো সরাসরি নেত্রীর সাক্ষাৎ পাবেন না। এরপরও তিনি আসছেন, এতেই আমরা খুব আনন্দিত।”
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে সরাসরি ভাষণ দেবেন। একইদিন তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেবেন। লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেল উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীরা বড় স্ক্রিনে বঙ্গবন্ধুকন্যার ভাষণ ও দিকনির্দেশনা শুনবেন বলে জানিয়েছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। একইসঙ্গে একটি সংবাদ সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তব্য রাখা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এবারও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে রোহিঙ্গা ইস্যুটি থাকতে পারে। তবে জোড়ালো হবে কভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন কার্যক্রম, টিকার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো। থাকবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলা সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অহবানও থাকতে পারে তার বক্তব্যে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেই প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপদেষ্টা ড. প্রদীপ কর বলেন, “কোন পক্ষ যদি অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে, তাহলে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। আইনের আওতায় থেকেই আমরা কাজ করবো। সবার প্রতি আহবান, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কিছু আপনারা করবেন না।”
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, “তিনি সবার প্রধানমন্ত্রী। সবারই উচিত প্রিয় নেত্রীর আগমণকে সফল করার জন্য কাজ করে যাওয়া। কোন পক্ষ যদি এ নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক কোন পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তা ঠেকানোর জন্য আমরাও সম্ভাব্য সবকিছু করবো”। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী যেদিন জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন, সেদিন সেখানে উপস্থিত থেকে শান্তি সমাবেশ করবেন তারা।
জানা গেছে, ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সপ্তাহখানেক থেকে লন্ডন হয়ে তাঁর বাংলাদেশে ফেরার কথা রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ