যশোরে চলতি মৌসুমের রেকর্ড ভাঙা সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় মরুর উত্তাপ বিরাজ করছে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এরআগে ২০০৯ সালে যশোরে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রের্কড করা হয়েছিল।
খুলনা বিভাগীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহ ধরেই যশোরে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে গত কয়েকদিন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করেছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে যশোরে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এরআগে সোমবার (২৯ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস চুয়াডাঙ্গায়। এদিন যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার দুপুরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে। গত বৃহস্পতিবারও যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া দপ্তর যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে, যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। খুলনায় ৪১.৫ ডিগ্রি, মংলায় ৪২ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ছিল ২৮ শতাংশ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মৃদু তাপপ্রবাহে তাপমাত্রা থাকে ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাঝারি তাপপ্রবাহে তাপমাত্রা থাকে ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তীব্র তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
অতি তীব্র তাপপ্রবাহে যশোরে মরুর উত্তাপ বিরাজ করছে। ঘরের বাইরে বের হলেই আগুনের হল্কা গায়ে লাগছে। শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। প্রচণ্ড গরমে গলে গেছে যশোরের বেশ কয়েকটি পিচঢালা সড়ক।
যশোর শহরের রেলস্টেশন এলাকার রিকশাচালক গফুর আলী বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে গায়ে যেন আগুনের ধাক্কা লাগছে। একটু রিকশা চালালেই ঘামে গা ভিজে যাচ্ছে। মাথা ঘুরে উঠছে। কিন্তু রিকশা না চালালে তো সংসার চলবে না।’
শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম জানান, প্রায় একমাস ধরে চাপকলে পানি উঠছে না। সাবমার্সিবলে বাসার ছাদের রিজার্ভ ট্যাংকে পানি তুললেই তা গরম হয়ে যাচ্ছে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত পানিতে হাত দেওয়া যাচ্ছে না।
শরবত বিক্রেতা জালাল উদ্দিন জানান, গরম বাড়ায় শরবত বিক্রি বেড়েছে। মানুষ পিপাসা মেটাতে ও একটু স্বস্তি নিতে ঠান্ডা লেবুর শরবত পান করছেন। কিন্তু শরবতের গাড়ি নিয়ে রোদে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। ছায়ায় দাঁড়ালেও গা পুড়ে যাচ্ছে বাতাসে।
এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে পানি সংকটে পড়েছে শহরের বাসিন্দারা। তারা বলছেন, যে টিউবওয়েলে সহসা পানি উঠতো, সেই টিউবওয়েলও অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
শহরের রেলগেট এলাকার বাসিন্দা আল-আমিন বলেন, ‘টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না, যা উঠছে তাতে আয়রন থাকছে। এ পানি পান করা যাচ্ছে না।’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ