বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: নানা ঘটন আর অঘটনের মধ্য দিয়ে গেল বছর পর্দা নেমেছে রাশিয়া বিশ্বকাপের। ঘটনাবহুল বিশ্বকাপে বিশ্ব পেয়েছে ২০১৮ চ্যাম্পিয়ন। রূপকথার গল্প লিখে দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কবিতা-ছবির দেশ ফ্রান্স। এরই মাঝে শুরু হয়ে গেছে আগামী আসরের আনুষ্ঠানিক দিন গণনা। ২০২২ বিশ্বকাপ হবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ কাতারে। সেই বছরের ২১ নভেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ১৮ ডিসেম্বর। অর্থাৎ ২৮ দিনেই শেষ হয়ে যাবে বহুল আলোচিত কাতার বিশ্বকাপ।
আরব বিশ্বে প্রথম বিশ্বকাপ: এটি হবে বিশ্বকাপের ২২তম আসর এবং আরব বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বকাপ। কোনো মুসলিম অধ্যুষিত দেশেও প্রথম। সব মিলিয়ে এশিয়া মহাদেশে দ্বিতীয়বার। এর আগে ২০০২ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে। যৌথভাবে বেশ সফলতার সঙ্গে তা আয়োজন করে দেশ দুটি।
যত দলের অংশগ্রহণ: কাতার বিশ্বকাপে সোনালী ট্রফির লড়াইয়ে অংশ নেবে ৩২ দেশ। আপাতত এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত! তবে নড়চড়ও হতে পারে। মল্লযুদ্ধে নামতে পারে ৪৮ দেশও। সেবার না হলেও ২০২৬ বিশ্বকাপে এত দলের অংশগ্রহণ প্রায় নিশ্চিত!
৮৮ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ: বিশ্বকাপের পথচলা শুরু হয় ১৯৩০ সালে। তখন থেকে প্রতিবারই নির্ধারিত বছরের মে-জুন অথবা জুন-জুলাইয়ে বসে বিশ্ব আসর। এ যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কাতার সেই প্রথা ভাঙতে যাচ্ছে। মে-জুন কিংবা জুন-জুলাইয়ের পরিবর্তে সেখানে বিশ্বকাপ বসবে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। পর্দা উন্মোচন হবে ২১ নভেম্বর। আর ফাইনালি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে ১৮ ডিসেম্বর। ওই দিন কাতারের জাতীয় দিবস।
দুর্নীতির অভিযোগ: অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে কাতার। অভিযোগ আছে, ফিফাকে ঘুষ দিয়ে তা আয়োজনের দায়িত্ব হাতিয়ে নিয়েছে দেশটি। তবে ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা বরাবর তা অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু এখানেই বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটেনি। তা খতিয়ে দেখছে প্রধান অনুসন্ধানকারী মাইকেল জে গার্সিয়া।
শ্রমিক অধিকার ক্ষুণ্ন: বিশ্বকাপের প্রস্তুতিপর্বে নানা কাজে শ্রমিক খাটাচ্ছে কাতার। অত্যাধুনিক ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম তৈরিতে কাজ করছে হাজার হাজার শ্রমিক। যার অধিকাংশই প্রবাসী। অভিযোগ উঠেছে, সেসব শ্রমিকের নায্য পারিশ্রমিক দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক কল্যাণে ২০১৪ সালে একটি খসড়া প্রণীত হয়। তাতে শ্রমিকের নায্য পাওনা সময়মতো মিটিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার লিপিবদ্ধ ছিল। তবে না মানছেন না তারা। এমন অভিযোগে তাদেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন খোদ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
যেভাবে আয়োজক: চাইলেই বিশ্বকাপ আয়োজনের টিকিটি পেয়ে যায়নি কাতার। পোড়াতে হয়েছে বহু কাঠখড়। আসতে হয়েছে জটিল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ২০২২ আসরের স্বাগতিক দেশ নির্ধারণী প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি হতে জাতীয় দলগুলো স্বাগতিক হওয়ার জন্য তাদের আগ্রহ নিবন্ধন করে। প্রাথমিকভাবে ৯ দেশ নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। তবে পরবর্তীতে মেক্সিকো এই কার্যধারা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার নাম বাতিল করে দেয় ফিফা। কারণ তাদের সরকার এই নিলামকে সমর্থন প্রদানের চিঠি পাঠাতে ব্যর্থ হয়। এ প্রক্রিয়ায় ৪টি নন- উয়েফা দেশ (অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ক্রমান্বয়ে তাদের নাম প্রত্যাহার করে। অবশেষে এ আসরের নিলামের জন্য মাত্র ৩টি নাম অবশিষ্ট ছিল। সেগুলো হলো ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম/নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগাল/স্পেন।২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর জুরিখে ২২ সদস্যবিশিষ্ট ফিফা নির্বাহী পরিষদ সমবেত হয়ে এ নিলামে স্বাগতিক দল ঠিক করে। ওই নিলামে ভোটের দ্বিতীয় পর্বে কাতার জয়লাভ করে। ফলে বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে নির্বাচিত হয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি।
সঙ্কট: কাতার পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্র দেশ। এর আয়তন মাত্র ১১ হাজার ৫৮১ বর্গ কিলোমিটার (৪ হাজার ৪৭১ বর্গ মাইল)। জনসংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ ৪২ হাজার। প্রসিদ্ধ শহর মাত্র একটি- দোহা। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে সেখানে আগমন ঘটবে বিশ্বেও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শকের। ছোট এই শহরে আগত দর্শকদের এখানে তারা কিভাবে সঙ্কুলান ও আতিথেয়তা দেয় তাই দেখার। পাশাপাশি খেলোয়াড়সহ তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তো থাকছেই।
কোয়ালিফিকেশন: ২০২২ বিশ্বকাপের কোয়ালিফিকেশন প্রক্রিয়া এখনো ঘোষণা হয়নি/জানা যায়নি। বরাবরের মতো ফিফা সদস্যভুক্ত সব দেশের এতে প্রবেশাধিকার থাকবে। স্বাগতিক হিসেবে এমনিতে খেলার ছাড়পত্র পাবে কাতার। বাকি ৩১ দলকে আসতে হবে ’যুদ্ধ’ করে এবং নানা সমীকরণের বৈতরণী অতিক্রম করে। ৬টি কনফেডারেশনের হিসাব তো আছেই। কোয়ালিফিকেশন ড্র হবে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে।
স্টেডিয়াম: ৪ শহরের ৮ স্টেডিয়ামে হবে কাতার বিশ্বকাপ। সবটিই নতুন আঙ্গিকে বিনির্মিত। এগুলোতে থাকছে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। প্রতিটি স্টেডিয়াম হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, থাকবে সব ধরনের ক্রীড়াসুবিধা।
সম্প্রচার সত্ব: বিশ্বেও প্রতিটি দেশ থেকেই কাতারে প্রদর্শিত ফুটবলের শৈল্পিক প্রদর্শনী দেখা যাবে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন অঞ্চলের ক্যাবল মালিকদেও কাছে সম্প্রচার সত্ব বিক্রি করেছে কাতার। তারা সব ধরনের প্রস্তুতি সেরে ফেলছে।
দুই কিংবদন্তিকে চাই কাতার: আধুনিক ফুটবলের দুই ফুটবল মায়েস্ত্রো লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ক্লাব পর্যায়ে সব ধরণের শিরোপা জিতলেও এখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেননি তারা। ছোট ম্যাজিসিয়ানের বয়স ৩০ এবং সিআর সেভেনের ৩৩। আগামী বিশ্বকাপ আসতে আসতে বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে দুজনের ফর্ম পড়তির দিকে অগ্রসর হবে। তবু মনপ্রাণ থেকে সবাই চাইছেন তারা খেলুক ’২২ বিশ্বকাপে।
বাংলা৭১নিউজ/এস.বি