রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:২৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
স্বাস্থ্যসেবার আওতাধীন খাতে ইউজার ফি আদায়ে নীতিমালার সুপারিশ ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সহজলভ্য উৎস খোঁজার তাগিদ প্রতিমন্ত্রীর বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত সুইজারল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরেছেন স্পিকার জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে: আইজিপি টেকসই উন্নয়নে সময়োপযোগী আর্থিক ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে ইশরাক ১৬ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে পালানোর সময় জনতার হাতে ধরা পুলিশ কর্মকর্তা কঙ্গোতে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা বাবাকে খুঁজে পেতে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপির মেয়ে ডিবিতে কালশী ট্রাফিক বক্সে আগুন দিলো অটোরিকশাচালকরা কমলাপুর আইসিডি’র নিয়ন্ত্রণ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে নিতে সুপারিশ ভোট কম পড়ার বড় ফ্যাক্টর বিএনপি : ইসি আলমগীর অভিবাসী কর্মীদের টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করছে সরকার উপজেলা নির্বাচন : দ্বিতীয় ধাপে ৪৫৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন এখনো চলছে অটোরিকশাচালকদের বিক্ষোভ, ৩ বাস ভাঙচুর সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা: জেলেরা বলছেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ মেট্রোরেলে ভ্যাট বসানো এনবিআরের ভুল সিদ্ধান্ত : ওবায়দুল কাদের ভাঙ্গায় চেয়ারম্যানপ্রার্থীর উঠান বৈঠকে হামলা-ভাঙচুর

মধুমতীর ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে সড়ক

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় রবিবার, ৩ জুন, ২০১৮
  • ২২৬ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, নাজিম বকাউল, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী-রউফনগর সড়কের গন্ধখালী পূর্বপাড়া নামক স্থানে মধুমতীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। মধুমতী নদীর গর্ভে সড়কের একাংশ বিলিন হয়ে যাওয়ায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরে দর্শনার্থীদের যাতায়ত প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে ভারী বর্ষনে সড়কের একাংশ ভাঙ্গনের ফলে ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী পাঁচ গ্রামের মানুষের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা যায়, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কামারখালী বাজার থেকে রউফনগর বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর পর্যন্ত চলে গেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন কামারখালী-রউফনগর সড়ক। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে গন্ধখালী, রউফনগর, নাওড়াপাড়া, দয়ারামপুর, জারজারনগর, চর গয়াসপুরসহ আরো কয়েক গ্রামের মানুষ। ওই সড়কের গন্ধখালী পূর্বপাড়া এলাকায় এবং রউফনগর গ্রামে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর থেকে ৫শ মিটার দূরেও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনের ফলে ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

শহীদ ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের বড় বোন জোহরা বেগম বলেন, ডিসেম্বর মাস আসলেই অনেকে আসে, খোঁজ খবরও নেয়। কিন্তু ডিসেম্বর মাস চলে গেলে সারা বছরে আর কেউ খোঁজ নেয় না। তিনি বলেন, সরকার যেটুকু খোঁজ খবর রাখে তাতে ভালই চলে যাচ্ছে। কিন্তু বীরের বাড়ি পড়ে আছে অযতেœ অবহেলায় কেউ তার দিকে একটু খেয়াল করে না। একটি জাদুঘর তৈরি করে দিয়েছে, সেখানে আসার রাস্তা নাই, মধুমতিতে ভাংতে ভাংতে শেষ হয়ে গেছে।  তিনি বলেন, রউফনগর গ্রামে বীরের জাদুঘরে আসার রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরেই ভাঙ্গনের শিকার। রাস্তাটি সংস্কার ও মধুমতীতে বাধ দিয়ে সড়ক রক্ষার দাবী জানান সরকারের কাছে তিনি।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গন্ধখালী পূর্বপাড়া এলাকায় ওই সড়কের ত্রিশ ফুট প্রস্থ এবং তিনশ ফুট দৈর্ঘ্যরে এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ওই জায়গায় আশেপাশের বাড়ি ঘর এলাকাবাসীকে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। ভারী বর্ষনে এখন চলাচলই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

এলাকাবাসী জানায় গত কয়েক বছর ধরে এ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ওই এলাকার আকিদুল ইসলাম, ইউনুস আলী মৃধা, মতিয়ার মোল্লা ও সরোয়ার মৃধা তাদের বাড়ি ঘর সরিয়ে নিয়েছেন। ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে আরও ১৭টি পরিবারের বাড়ি ঘর।

ওই এলাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন, ফাতেমা খাতুন, জুবায়ের খানসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, সড়কটি নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়ায় তাদের এলাকাবাসীর বাড়ি ঘরের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ভ্যানচালক মোতালেব মোল্লা বলেন, এই রাস্তা দিয়া ভ্যান চালাইয়া কয়ডা পয়সা রোজগার করে পরিবারের সদস্যদের নিয়া খাইতাম। এখন আর সে সুযোগ নাই। বাঁচার উপায় নাই।

এদিকে রউফনগর গ্রামে মিরাজ খাঁর বাড়ির নিকট গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকায় আনুমানিক ৪০ ফুট প্রস্থ ও এক হাজার ফুট দৈর্ঘ্যরে আকারে বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকার জাকির মৃধা, তনু মৃধা, খালেক মোল্লা, কোববাত মৃধা, তোতা শেখ, রাজিব মুন্সী তাদের বাড়ি ঘর সরিয়ে নিয়েছে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে আরও ২৩টি পরিবারের বসতভিটা ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদীর ভাঙ্গন ওই বিদ্যালয়ের ৩০ ফুট এবং যাদুঘরের ৫শ মিটার দূরে রয়েছে।

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজামউদ্দীন মোল্লা বলেন, দুই বছর আগে ৩০ শতাংশ জমির উপর এ বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা শতাধিক। নদীর ভাঙ্গনের কারনে আমরা আতংকের মধ্যে আছি। জানিনা ভাগ্যে কি রয়েছে।

কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান বাবু বলেন, ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার সমন্বয় সভায়ও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সবাই শুধু মুখে বলে কিন্তু কেউই বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ বিষয়টি বিভিন্ন দপ্তর ও উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি কোনো লাভ হয়নি।

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরের লাইব্রেরিয়ান সাইদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও গ্রন্থাগার ও যাদুঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছি। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরেই সড়কের বেহাল দশা। ভাংতে ভাংতে এই সড়ক দিয়ে এখন আর যাতায়াত করা যায় না। তিনি আরো বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় বাইরের দর্শনার্থীরা এখন আর তেমন আসেনা।

মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা মনোয়ার বলেন, বিষয়টি নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে এর আগেও সড়কটি সংস্কার করা হয়। কিন্তু প্রবল বর্ষনের ফলে সড়কটি এখন আগের অবস্থায় পরিনত হয়েছে। তিনি বলেন, সাময়িকভাবে নদীর বাধ নির্মানে নদী গবেষনা কাজ শুরু করবে বলে শুনেছি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মধুখালী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, কামারখালী থেকে রউফনগর পর্যন্ত সড়কটি এলজিইডি নির্মান করে। মধুমতির ভাঙ্গনের ফলে সড়কটির কয়েকটি জায়গায় ধ্বসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীতে বাধের কাজ সম্পন্ন না করলে আমরা সড়কটি সংস্কার করতে পারছি না।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, সাময়িকভাবে মধুমতিতে বাধ নির্মানের জন্য ১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। যা নদী গবেষনা কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে। তিনি আরো জানান, স্থায়ীভাবে বাধ নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রনালয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে ওই এলাকাবাসীর দূর্ভোগ লাঘব হবে।

প্রসঙ্গত, শহীদ ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৮ এপ্রিল রাঙ্গামাটির মহালছড়িতে পাক হানাদারদের ছোড়া মর্টারের গোলায় বাংলা মায়ের এই বীর সন্তান শাহাদাৎ বরণ করেন। ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ তার কোম্পানির মেশিনগানার হিসেবে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি বুড়িঘাটা নৌপথে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে দায়িত্বরত ছিলেন। শত্রুর মর্টারের একটি গোলা তাঁকে আঘাত করলে তিনি ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। পরে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার চিংড়িখালের পাড়ে তাকে সমাহিত করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানী বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ১ মে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের মধুমতি নদীর তীরের ছোট্ট গ্রাম সালামতপুরে (বর্তমানে রউফনগর) জন্মগ্রহণ করেন।

বিগত ২০০৮ সালের ২৮ মে তার নিজ গ্রাম সালামাতপুরের নাম রউফ নগর রাখা হয়। ওই বছরেই তার নামে নিজ গ্রাম রউফনগরে স্থানীয় সরকার সমবায় মন্ত্রণালয় ফরিদপুর জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থগার নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া তার নামে এলাকায় কামারখালী বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারি করেছেন। গন্ধখালী বীরশ্রেষ্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়, সাভারে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ গেট, ঢাকায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ রাইফেলস স্কুল অ্যান্ড কলেজ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com