কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত শিশু রবিউলের (৮) স্বজনদের খোঁজ মিলেছে। ঢাকার শাহ আলী থানার মিরপুর-১ এর কমিউনিটি সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মিলন মিয়ার ছেলে রবিউল। তার বাবা সেখানে একটি কমিউনিটি সেন্টারে বাবুর্চির কাজ করেন। দুই বছর আগে তার মা মারা যান।
জানা যায়, ২৩ অক্টোবর সোমবার ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে চার বন্ধুর সঙ্গে সিলেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এগারসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনে ছাদে ওঠে রবিউল। ট্রেন ছাড়ার পর জানতে পারে যে তারা ভুল ট্রেনে উঠেছে। পরে ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ স্টেশনে পৌঁছালে আবার সেই ট্রেনে করেই তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ভৈরব স্টেশন থেকে ট্রেনটি যাত্রাবিরতির পর ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ঠিক তখনই বিপরীত দিক থেকে আসা কার্গোবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে পেছনের দুটি বগি উল্টে যায়। এ ঘটনায় ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারীরা যখন শিশু রবিউল ইসলামসহ আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসা দেওয়ার পর তার কোনো স্বজনের খোঁজ মেলেনি। তারপর উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশের পর বুধবার রাতে আহত রবিউলের বাবার খোঁজ মিলেছে।
আহত শিশু রবিউলের বাবা মিলন মিয়া বলেন, ২২ তারিখ দুপুরে রবিউলকে বাসায় রেখে আমি বাইরে যাই। তারপর কাজ শেষে রাতে বাসায় ফিরে শুনি আমার ছেলে বাসায় ফেরেনি। তারপর থেকেই বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি কিন্তু তার সন্ধান পাইনি।
তারপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহ আলী থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বাসায় গিয়ে জানান, আমার ছেলে ভৈরবের ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ভৈরবে ছুটে আসি। পরে জানতে পারলাম আমার ছেলে বাসা থেকে বের হয়ে কয়েকজনের সঙ্গে মিলে সিলেটে যাওয়ার জন্য ভুল করে কিশোরগঞ্জের ট্রেনে ওঠে। তারপর আবার সেই ট্রেনে ঢাকায় ফেরার পথে দুর্ঘটনায় আহত হয়।
হাসপাতালের সেবিকা জান্নাত আক্তার বলেন, দুর্ঘটনার দিন আহতদের মধ্যে হাসপাতালের এক পাশের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল শিশুটি। তখন তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তার শরীরের রক্তাক্ত কাপড় ছাড়িয়ে ওয়ার্ডে রাখা হয়। তখন তার স্বজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর থেকেই আমি শিশুটির সেবাযত্ন করতে থাকি।
তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি ঘটনার আগের দিন বাসা থেকে রাগ করে কাউকে না বলে বের হয়ে যায় শিশুটি। তারপর বিমানবন্দর স্টেশন থেকে কয়েকজনের সঙ্গে ট্রেনে ছাদে উঠে কিশোরগঞ্জে চলে আসে।
স্থানীয় একটি সংগঠনের কর্মী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, যখন শুনতে পারলাম ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত শিশুর স্বজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি তখনই হাসপাতালে ছুটে আসি। গত দুদিন আহত শিশুটির পাশে ছিলাম। তার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রেখেছি।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, মিরপুরের শাহ আলী থানার পুলিশের মাধ্যমে জেনে আহত রবিউলের বাবা মিলন মিয়া তার ছেলের সন্ধানে ভৈরবে আসেন। তারপর আমরা তার ছেলে কি না সেটা জানতে তার মুঠোফোনে থাকা তার পারিবারিক ছবি দেখে নিশ্চিত হই মিলন মিয়াই আহত শিশুর বাবা। আহত শিশুটিকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় তার বাবার কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি