রাজধানীর ওয়ারীতে গত ২৯ এপ্রিল দিনগত রাতে রিকশাচালক সিজার হোসেনকে (২১) রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে তার রিকশা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৬ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ।
গ্রেফতাররা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মো. বায়েজিদ (২২), মো. রাসেল (২৪), হৃদয় হাওলাদার ওরফে সাইদুর (২৩), হুমায়ুন কবির (৩৫), মো. হৃদয় (১৭) ও মো. সেলিম (৩০)।
ডিবি পুলিশ বলছে, চক্রটি নিয়মিত ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত ছিল। বিশেষত রাতে যারা রিকশা চালান তারা অত্যন্ত গরিব মানুষ। তাদেরই টার্গেট করতো ছিনতাইকারী চক্রটি।
সোমবার (৮ মে) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গত ৩০ এপ্রিল কদমতলী থানাধীন শ্যামপুর শিল্প এলাকার কদমতলী স্টিল মিলস প্রাইভেট লিমিটেডের সামনে থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। পরে মরদেহ শনাক্ত হলে নিহতের বাবা মো. রবিউল ইসলাম বাদী কদমতলী থানায় মামলা করেন। মামলা নং-৪৪। মামলাটি গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনাল টিম ছায়াতদন্ত শুরু করে।
তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতারে গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনাল টিম অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুলের নেতৃত্বে একটি দল হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানা ও বরিশাল জেলার কাজিরহাট থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গা এবং ঢাকা শহর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে।
গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, গ্রেফতাররা গত ২৯ এপ্রিল রাতে পরিকল্পনা করে ওই রাতে যে রিকশাটিই পাবে সেটিই ছিনিয়ে নেবে। এজন্য ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য হৃদয়কে নাজিরা বাজার পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সিজারের চালিত অটোরিকশাটি ভাড়ায় ডেকে নিয়ে আসে হৃদয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে কদমতলী থানাধীন শ্যামপুর শিল্প এলাকায় বসে অপেক্ষায় থাকেন বায়েজিদ ও রাসেলরা। রিকশাচালক সিজার হোসেন সেখানে পৌঁছাতেই রিকশাটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
তিনি জানান, বাধা পেয়ে রিকশাচালক সিজারকে লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে হত্যা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এবং স্মার্ট মোবাইল ফোন ছিনিয়ে পালিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। অটোরিকশাটি নিয়ে তারা চলে যায় কদমতলী চিটাগং রোডে। সেখানে চক্রের সদস্য সেলিমের কাছে মাত্র ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।
ডিবিপ্রধান আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানায়, এর আগেও চক্রটি একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনিয়ে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। অধিকাংশ সময় চালকের হাত-পা বেঁধে রিকশা ছিনতাই করতো তারা। ওই রাতে বাধা পাওয়ায় রড দিয়ে আঘাত করা হয় রিকশা চালককে। চক্রের আরও এক সদস্য পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, অধিকাংশ ক্লু লেস ঘটনায় সাক্ষী-প্রমাণ থাকে না। তখন আসামি ধরা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এ ঘটনায় আরও একজন পলাতক আছে। এ ধরনের ঘটনা সাধারণত রাতে ঘটে। এজন্য সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনায় থানায় জিডি বা মামলা করা হয় না। আমার অনুরোধ, এমন ঘটনা ঘটলে থানায় অভিযোগ করুন, তাতে আমরা ডিবি পুলিশ তথ্যটি পাবো ও অভিযান অব্যাহত রাখবো।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ