বাংলা৭১নিউজ,মনিরুর ইসলাম দুলু: মংলা পোর্ট পৌরসভার শেষ প্রান্তের মংলা নদী সংলগ্ন মাছমারা খালের কাঠের ব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ ব্রিজটি এখন চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী। কোনো বাহন চলাচল তো দূরের কথা, এটি দিয়ে মানুষ পার হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এ ব্রিজ দিয়ে নারী, বয়স্ক ও শিশুদের চলাচলে চরম নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় অধিবাসীদের।
দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে ব্রিজটি সংস্কার না করায় মাছমারা খালের দুই পাশে পৌরসভা এবং উপজেলার চাঁদপাই ও সোনাইলতলা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ছাত্রছাত্রীসহ কয়েক হাজার মানুষকে নিত্যদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বছর দুই আগে এই ব্রিজ থেকে পড়ে গিয়ে এক বৃদ্ধা নিহত হন। এ ছাড়া প্রায় সময়ই দুর্ঘটনায় লোকজন আহত হলেও কাঠের ব্রিজটি সংস্কারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, মংলা পোর্ট পৌরসভার শেষ প্রান্ত (১নং ওয়ার্ড) মাছমারা খালের উপর কয়েক বছর আগে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন ব্রিজটি নির্মাণ করে।এরপর তারা একবার ব্রিজটি সংস্কারও করে দিয়েছিল। পরে ওই সংস্থা মংলায় তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিলে ব্রিজটি আর সংস্কার করা হয়ে ওঠেনি।
প্রতিদিন এ কাঠের ব্রিজ পার হয়ে উপজেলার চাঁদপাই ও সোনাইলতলা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ছাত্রছাত্রীসহ কয়েক হাজার মানুষ পৌর এলাকায় যাতায়াত করে থাকেন। অপরদিকে বিপুল সংখ্যক পৌরবাসী বিভিন্ন কাজে এ ব্রিজ পার হয়ে উপজেলার চাঁদপাই ও সোনাইলতলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে চলাচল করেন। বর্তমানে শোচনীয় অবস্থার কারণে এলাকাবাসীকে চরম ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটি পার হতে হচ্ছে। সরেজমিনে মাছমারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাঠের ব্রিজটির অধিকাংশ স্থানই ভাঙাচোরা। কাঠের পাটাতন নেই বললেই চলে। লোহার কাঠামোর সঙ্গে কোথাও মাঝখানে সরু একটি কাঠ, আবার কোথাও দুই পাশে দুটি সরু কাঠের ওপর দিয়ে প্রাণ হাতে নিয়ে লোকজন ব্রিজটি পার হচ্ছে।
কথা হয় মাছমারা গ্রামের সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শেফালী বিশ্বাস ও নারকেলতল গঠন এডুকেশন সেন্টারের প্রধান শিক্ষিকা প্রীতি বালার সাথে। তারা বাংলা৭১নিউজকে বলেন, পৌরসভা ও পার্শ্ববর্তী চাঁদপাই ও সোনাইলতলা ইউনিয়নের জয় খাঁ, পাকখালী, মাকঢ়ঢোন, মাছমারা ও নারকেলতলা গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার বাসিন্দা এ ব্রিজ পার হয়ে মংলা শহরে যাতায়াত করে। দুই বছর ধরে ব্রিজটির কোনো সংস্কার না করায় আমরা খুবই বিপদের মধ্যে আছি। এই ব্রিজের দুই পাড়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্রিজ পার হয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে আসা-যাওয়া করতে হয়। এই ভাঙাচোরা ব্রিজের কারণে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
স্কুলগামী শিশুরা ব্রিজটি পার হয় অত্যন্ত ভয় নিয়ে। গঠন এডুকেশন সেন্টারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জিয়ারুল শেখ, সৈকত আকন, মনিরুল, সুমন ফরাজীসহ প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী বলে, বাবা-মা বা অভিভাবক সঙ্গে না থাকলে তারা খুবই ভয়ে ভয়ে এই ব্রিজ পার হয়। একটু বৃষ্টি হলেই ব্রিজের ওপর এমন পিচ্ছিল হয় যে তাদের মতো শিশুরা তখন আর ব্রিজ পার হতে পারে না। পা ফসকে গেলেই খালে পড়ে প্রাণহানি ঘটার আশংকা থাকে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এই ব্রিজ দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে।
নারকেলতলা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক পবিত্র বৈরাগী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নির্মল রায় ও পাকখালী আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা দিনমজুর শাজাহান বলেন, ২০১৭ সালে এই ব্রিজ পার হওয়ার সময় কুলসুম বেগম নামের এক বৃদ্ধা পড়ে গিয়ে মারা যান। এটি এখন মানুষ মারার ব্রিজে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক দিন আগেও জনি বিশ্বাস নামের একজন মোটরসাইকেল নিয়ে ব্রিজ পার হতে গিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো প্রায়ই ঘটছে। তারা আরও বলেন, দিনের বেলায় কষ্ট করে পার হলেও রাতের বেলায় বৈদ্যুতিক বাতি না থাকায় ব্রিজ দিয়ে পার হওয়া অনেক ঝুঁকি। নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি।
নারকেলতলা গ্রামের মুদি দোকানি মাসুম শেখ ও তরকারী দোকানী রবার্ট হালদার বলেন, মংলা বাজার থেকে আমাদের পণ্য কিনে আনতে হয়। আর এই ব্রিজ দিয়ে পণ্য পরিবহনে আমাদের ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
জয় খা এলাকার সরকারী চাকরিজীবি এনায়েত শেখ ও এনজিও কর্মি ইস্তাফিন বলেন, ব্রিজ পার হয়ে প্রতিদিন অফিস করতে কষ্টের আর সীমা থাকছে না। এসব অধিবাসীরা অভিযোগ করে আরো বলেন, এত দিন ধরে সমস্যা চললেও পৌর কর্তৃপক্ষ এই ব্রিজটি মেরামতের কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করছে না।
মংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র আলহাজ জুলফিকার আলী বাংলা৭১নিউজকে বলেন, ব্রিজের এই দুরবস্থার কথা আমার জানা ছিল না। এলাকাবাসীও আমাকে এ বিষয়ে মৌখিক বা লিখিতভাবে কিছুই জানায়নি। মূলত ব্রিজটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন নির্মাণ করে দিয়েছিল। এরপর একবার তারা সংস্কারও করে দেয়। সে কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ এর সংস্কারকাজ করেনি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ ব্রিজটি সংস্কারের ব্যবস্থা নেবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি