প্রথম টেস্টের পর দ্বিতীয় টেস্টেও ভারতের কাছে হারের তিক্ত স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের অধীনে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দুটিতেই বাংলাদেশকে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল টিম ইন্ডিয়া। কানপুর টেস্টের প্রথম দিন খেলা হয় মাত্র ৩৫ ওভারের। পরের দুই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পরও বাংলাদেশকে ভারত হেসেখেলে হারিয়েছে।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল হতাশাজনক। বাজে শট সিলেকশন করে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন টাইগার ব্যাটাররা।চেন্নাইয়ে অসহায় আত্মসমর্পণের পর কানপুরে বৃষ্টিও মান বাঁচাতে পারেনি বাংলাদেশের। প্রায় আড়াই দিন খেলা না হলেও শেষ দেড় দিনেই বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিল রোহিতরা।
পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। টাইগারদের এমন জয়ের পর সবাই আশায় বুক বেঁধে ছিল, ভারতের বিপক্ষে কখনো টেস্ট জিততে না পারা বাংলাদেশ এবার হয়তো পাবে জয়ের স্বাদ। তবে ভক্তদের নিরাশ করে ভারতের কাছে প্রথম টেস্টে ২৮০ রানের হারের পর দ্বিতীয় টেস্টে ৭ উইকেটে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে নাজমুল শান্তর দল।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) কানপুর টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ৪৭ ওভারে ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। যার ফলে জয়ের জন্য ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৯৫। তবে এই ছোট লক্ষ্য তাড়া করে জিততে হলে রান তাড়ায় নতুন রেকর্ড গড়তে হতো ভারতকে।
কেননা গ্রিন পার্কে এর আগে আগে চতুর্থ ইনিংসে ৮২ রানের বেশি করে যে জিততে পারেনি কোনো দল। তবে ভারত ১৭ ওভার ২ বল খেলেই ৩ উইকেট হারিয়েই পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করার ম্যাচে ভারতের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সওয়াল। প্রথম দুই ওভারেই তারা তুলে নেন ১৮ রান। তবে এর পরেই ওভারেই ঘটে ছন্দপতন। মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান রোহিত শর্মা। তার বিদায়ে ১৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় ভারত।
রোহিতের পর শুবমান গিলকেও ফেরান মিরাজ। মিরাজের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান গিল। আউট হওয়ার আগে করেন ১০ বলে ৬ রান।
এই দুই ব্যটারের বিদায়ের পর জুটি গড়েন যশস্বী জয়সওয়াল ও বিরাট কোহলি। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল। তবে অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পর সাজঘরে ফিরে যান তিনি।
তাইজুলের বলে কাভারে সাকিবের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান জয়সওয়াল। তার বিদায়ে ভাঙে ৫৮ রানের জুটি।
জয়সওয়ালের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন ঋষভ পান্ত। ঋষভ পান্ত শেষ পর্যন্ত নিলেন উইনিং রান। ব্যাটিং-বোলিং আর মাঠের বাইরের প্ল্যানিং– সবখানেই দাপট দেখিয়ে ভারত টেস্ট জিতল ৭ উইকেটের ব্যবধানে। সঙ্গে ম্যান ইন ব্লুদের বিপক্ষে বাংলাদেশেরও টেস্ট ফরম্যাটে জয়ের অপেক্ষা বাড়ল আরও কিছুদিনের জন্য।
এর আগে আজ মঙ্গলবার কানপুরে গতকালের (সোমবার) দুই উইকেটে ২৬ রান নিয়ে আজ পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। পঞ্চম দিনেবাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার মুমিনুল হক ও সাদমান। তবে দিনের শুরুতেই ভেঙে যায় এই জুটি।
৮ বলে মাত্র ২ রান করে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া মুমিনুল।
মুমিনুলের বিদায়ের পর জুটি গড়েন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাদমান ইসলাম। এই জুটতে ভর করে ভারতের ৫২ রানের লিড টপকে নিজেরাই লিড নিতে থাকে বাংলাদেশ।
তবে এই জুটিও বেশিদূর যেতে ব্যর্থ হন। দলীয় ৯১ রানে শান্ত ফিরে গেলে ৫৫ রানে ভেঙে যায় এই জুটি। ৩৭ বলে ১৯ রান করে রবীন্দ্র জাদেজার বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান শান্ত।
শান্তর বিদায়ের পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে যেতে থাকে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপ। শান্তর পথ ধরে সাজঘরে ফিরে যান লিটন, সাকিব ও সাদমান। লিটন ৮ বলে ১, সাকিব ২ বলে শূন্য রান করে ফিরে যান। অন্যদিকে স্রোতের বিপরিতে দাঁড়িয়ে অর্ধশতক তুলে নেওয়া সাদমান ফিরে যান ৫০ রান করে। এই তিন ব্যাটারের দ্রুত বিদায়ে মাত্র ৯৪ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসেছে বাংলাদেশ।
৯৪ রানে ৭ উইকেট হারানোর জুটি গড়েন মুশফিক ও মিরাজ। এই জুটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ভক্তরা। তবে ভক্তদের নিরাশ করে দ্রুতই সাজঘরে ফিরে যান মিরাজ। ১৭ বলে মাত্র ৯ রান করে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে ঋষভ পান্তের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান লিটন। তার বিদায়ে ভাঙে ২৪ রানের জুটি।
মিরাজের বিদায়ের পর তাইজুলকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মুশফিক। তবে তাইজুলও ব্যর্থ হন। ১৩ বলে শূন্য রান করে বুমরাহর বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ফিরে যান তাইজুল। তার বিদায়ে ১৩০ রানে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শেষ উইকেটে খালেদ আহমেদের সঙ্গে অনেকটা সংগ্রাম চালিয়ে যান মুশফিকুর রহিম। স্ট্রাইক নিজেই রেখেছেন। খালেদকে খুব একটা স্ট্রাইকে আনেননি।
তবে লাভের লাভ খুব একটা হয়নি। দলীয় ১৪৬ রানে বুমরাহর ইনসুইং ডেলিভারিতে বোল্ড হলেন মুশফিক। যার ফলে জয়ের জন্য ভারতের দরকার মাত্র ৯৫ রান।
এর আগে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ২৩৩ রানে অলআউট করে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। ব্যাটিংয়ে নেমেই বাংলাদেশের বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালাতে থাকেন ভারতীয় ব্যাটাররা। তবে সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে ভারত। যার ফলে প্রথম ইনিংসে ভারতের লিড ৫২। ৫২ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ দিনশেষে ১১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৬ রান তোলে বাংলাদেশ।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ