প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১৩ জুন) দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এই পতনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ব্যাংক ও বীমা খাতের কোম্পানিগুলো।
এদিন লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই একের পর এক ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন হতে থাকে। যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ব্যাংকের মতো বীমা খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দরপতনের মধ্যে থাকে।
ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলোর একের পর এক দরপতন হওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব শেষ দিকে গিয়ে অন্যান্য খাতের ওপর পড়ে। ফলে লেনদেনের প্রথম সাড়ে তিন ঘণ্টা দাম বাড়ার তালিকায় থাকার পরও শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পতনের তালিকায় নাম লেখায়। অবশ্য পতনের বাজারেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
যার ফলে দিনের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে প্রথম মিনিটেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে প্রথম ২০ মিনিটের লেনদেন পার হওয়ার পর সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। অবশ্য সূচক ঋণাত্মক হলেও যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়, তার দ্বিগুণের দাম বাড়ে প্রথম ২০ মিনিটের লেনদেনে।
তবে এ সময় থেকেই একের পর এক ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির শেয়ারের দাম কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেন শেষে মাত্র পাঁচটি ব্যাংক দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩টি ব্যাংকের। অপরদিকে বীমা খাতের ১৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩টির।
ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলোর এই দরপতনের ফলে সব খাত মিলে ডিএসইতে ১৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯২টির। আর ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৩৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ১৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ছয় পয়েন্ট কমে এক হাজার ২৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
এই পতনের বাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এককভাবে দাপট দেখিয়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র একটির দাম কমেছে। বিপরীতে দাম বেড়েছে ৩২টির।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৬৯ কোটি সাত লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় দুই হাজার ৬৬৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৬০০ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
টাকার অংকে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ২১৮ কোটি ছয় লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন সুজ।
এছাড়াও লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, রিং সাইন টেক্সটাইল, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, লুব-রেফ বাংলাদেশ, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স এবং প্রগতী ইন্স্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক কমেছে ৫৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৯০ কোটি এক লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩২২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৬টির এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএফ