ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে ঈদ যাত্রার শেষ দিনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থল থেকে জন্মস্থানে ফিরছেন ঘরমুখী মানুষ। কিন্তু তাদের এই আনন্দে ‘হরিষে বিষাদ’ বাড়তি ভাড়ার ফাঁদ।
ঢাকায় অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থ সংকটের কারণে এ সময় ভালো মানের যাত্রীবাহী বাস বা ট্রেনে বাড়ি ফিরতে পারেন না। কারণ প্রতি ঈদেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। তাছাড়া নিম্ন আয়ের সাধারণ অনেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে অভ্যস্ত নন। তারা অল্প টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদ, ছোট-বড় ট্রাক; বিশেষ করে যেগুলো রাজধানীতে গরু রেখে ফিরে যায়, এমনকি ট্রেনের ছাদে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন। এতো চেষ্টার পরেও তাদেরও গুণতে হয় বাড়তি ভাড়া।
বুধবার (২৭ জুন) সকালে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের মুলিবাড়ী, কড্ডার মোড়, নলকা ও হাটিকুমরুল গোল-চত্বর এলাকায় কর্মস্থল থেকে ঘরে ফেরা অধিকাংশ যাত্রী কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। একইসঙ্গে এ সব এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থেকেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গাজীপুর চন্দ্রার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জ কড্ডার মোড়ে একটি লোকাল বাসে এসে নেমেছেন পোশাককর্মী আল-আমিন, রফিক ও শেফালী। তাদের কাছ থেকে ৮০০ টাকা করে ভাড়া নেয়া হয়েছে।
আল-আমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘চন্দ্রা থেকে কড্ডার মোড়ে মূল ভাড়া ৩৫০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে ৪৫০ বা ৫০০ নিলেও হতো। কিন্তু বাধ্য হয়ে ৮০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। কড্ডার মোড়ে এসে সিএনজি ভাড়াও ২০ টাকার জায়গায় ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। আমার বোনাসের অর্ধেক টাকা গাড়ি ভাড়াতেই চলে গেল!’
ঢাকা থেকে পিকআপে আসছিলেন বগুড়ার ধুনট এলাকার নাজমুল। এই পোশাককর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাস না পেয়ে পিকআপে আসছি। তারপরও ৬০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। কি করবো! বাড়ি তো যেতেই হবে।’
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পিপুলবাড়ীয়ার শিহাব ও রুবেলও একই অভিযোগ করেন। কড্ডা থেকে অটোরিকশায় তারা পিপুলবাড়ীয়া এসেছেন ১৫০ টাকা দিয়ে। অথচ সাধারণ সময়ে এই ভাড়া ৬০ টাকা।
পোশাককর্মী মনিরুল, আলম, সোহাগ, কাকুলী, রুবিনাসহ কয়েকজন জানান, তিন থেকে চারগুণ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তাদের বাড়ি যেতে হচ্ছে। পরিবহন শ্রমিকেরা তাদের জিম্মি করে বেশি টাকা নিচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে কয়েকজন বাস ও ট্রাক চালককে প্রশ্ন করা হলে তারা বিস্তারিত বলতে রাজি হননি। ট্রাক চালক বক্কার হোসেন, কেফাত আলী, ছামিদুল, সোহান খান ও চঞ্চল বলেন, ফিরতি পথে খালি গাড়ি যেতে হয়। তাই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। একই কথা বলেন, পিকআপ ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকেরাও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল কবীর বলেন, রাত থেকে মহাসড়কে গাড়ির চাপ অনেক বেড়েছে। ঈদের শেষ দিন হওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে গাড়ি কয়েকগুণ বেশি চলাচল করছে। আমরা যানজট নিরসনে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক প্রসঙ্গে এড়িয়ে বলেন, আশা করছি উত্তরবঙ্গের ঘরে ফেরা মানুষের গত ঈদের মতো এবারও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।
উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে সেতুর ওপর ও মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণে যানজট শুরু হয়। এ কারণে সেতুর পূর্ব পাড়ে যানবাহনের গতি ধীর। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আতিকুর রহমান বলেন, ঈদ যাত্রার শেষ দিন হওয়াতে মূল ভাড়ার চেয়ে একটু বেশি নেয়া হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন ঢাকা জেলার বাস-মালিক সমিতির নেতাকর্মীরা।
তাদের সঙ্গে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন বলে পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস