বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। করোনার কারণে যে শিল্পখাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে পর্যটন অন্যতম। বাংলাদেশেও পর্যটনে শৃঙ্খলা ফেরাতে মহাপরিকল্পনা পিছিয়েছে করোনার কারণে। সুপরিকল্পিত পর্যটন বিকাশে এ খাতের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। ১৮ মাসে এ পরিকল্পনার কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেটি করোনার কারণে পেছানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ পরিকল্পনার কাজ শেষ হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এর কাজ শেষ হলে দেশের পর্যটনে আমূল পরিবর্তন হবে বলেও জানান তারা।
জানা যায়, দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে ৩০ বছর মেয়াদি এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করছে বিদেশি পরামর্শক সংস্থা আইপিই গ্লোবাল। সংস্থাটির সাথে ২০১৯ সালে চুক্তি করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। চুক্তি অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ২০২০ সালে মহাপরিকল্পনাটির প্রণয়ন কাজ শুরু হয় এবং ৩০ জুন ২০২০ সালে তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় এটির সময় ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ভ্যাট ও আইটিসহ এর চুক্তিমূল্য প্রায় ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
ট্যুরিজম বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি এই মহাপরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা হবে দেশের পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা, এর শক্তি কতটুকু, দুর্বলতা কোথায়, সম্ভাবনা কেমন, কোন ধরনের সংকট রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারণ করা হবে বাংলাদেশের পর্যটনের ভিশন, মিশন, স্ট্র্যাটেজিক অবজেক্টিভস, প্রায়োরিটিস এবং লিংকেজ। তৃতীয় পর্যায়ে জোন বা এরিয়া নির্দিষ্ট করে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে।
প্রোডাক্ট উন্নয়নের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বিনিয়োগের কৌশল অন্তর্ভুক্ত করে কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত এবং বিপণন ও প্রমোশনাল কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া মেলা, ফেস্টিভ্যাল, কার্নিভ্যাল, কালচারাল অনুষ্ঠান, ব্র্যান্ডিং, স্যোসাল মিডিয়ায় প্রচারণা, ভিডিও নির্মাণ, ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রদর্শনী ও ওশান ট্যুরিজমকে বেসরকারি উদ্যোগে চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। মহাপরিকল্পনা তৈরি করার পর স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে ন্যাশনাল ট্যুরিজম কাউন্সিল এটা চূড়ান্ত করবে।
আইপিই গ্লোবালের ডেপুটি টিম লিডার ঢাবির ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম নাজেম ইত্তেফাককে বলেন, ‘বর্তমানে পর্যটন খাতে তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, আমাদের লক্ষ্য সেটা ১০ শতাংশে নেওয়ার। সেজন্য অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের দেশে এখন ডোমেস্টিক ট্যুরিজম চলছে। ফরেন ট্যুরিজম নেই বললেই চলে। ফরেন ট্যুরিস্ট না এলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। তাদেরকে আনতে হলে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করতে হবে। কমিনিউকেশন, সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি, সি বিচে ময়লা—এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।’
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, আমরা মহাপরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে সভা করেছি। এই পরিকল্পনার কাজ শেষ হলে একটি সুপরিকল্পিত পর্যটন উপহার পাবে দেশ। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, এ মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা পর্যটনকে একটি সুপরিকল্পিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারব। এতে দেশের পর্যটন শিল্পের চিত্র পুরোপুরি বদলে যাবে ।
পর্যটন দিবসে কর্মসূচি: ‘পর্যটনে নতুন ভাবনা’—এ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালন করবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এ উপলক্ষে পর্যটন বোর্ড ও পর্যটন করপোরেশন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পর্যটন ভবনে সামনে থেকে শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা, রিকশা শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা অনুষ্ঠান হবে।
বিদেশি পর্যটকদের জন্য দুয়ার খুলল: করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বিদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ ছিল। অবশেষে গতকাল সোমবার থেকে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক আসার বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলো। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী গতকাল আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। পর্যটন শিল্পে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ও টেকসই পর্যটন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ