রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে।
বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টায় শহরের ৩০টি ওয়ার্ডের ১৫৫টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। একটানা ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণের শুরুতেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারের ভিড় দেখা গেছে।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারেরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। পুরুষদের একটি কক্ষে প্রথম ভোট দেন নাজির উদ্দিন নামে একজন। বেরিয়ে এসে তিনি জানান, ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। কেন্দ্রেই আগে ইভিএমে ভোট দেওয়ার নিয়ম বলে দেওয়া হয়েছিল।
এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার জহুরুল ইসলাম জানান, ইভিএম চালু করতে কোনো সমস্যা হয়নি। ভালোভাবেই সময় মতো ভোট শুরু হয়েছে।
এই নির্বাচনে ভোটের মাঠে রয়েছেন তিন জন মেয়রপ্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার (গোলাপ ফুল) এবং জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙল)। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুরশিদ আলম হাতপাখা প্রতীক নিয়ে এই নির্বাচনে অংশ নেন। তবে বরিশাল সিটি নির্বাচনে দলটির মেয়রপ্রার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে সেদিনই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। যদিও ইভিএমে আজ হাতপাখা প্রতীক আছে। ভোটাররা চাইলে ভোটও দিতে পারবেন।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ইভিএম নিয়ে আপত্তি রয়েছে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপনের। ইভিএমে ভোট সুষ্ঠু হবে না আশঙ্কা করে ইতিমধ্যে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রে। তবে কেন্দ্র থেকে তাকে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।
নির্বাচনে এবার মেয়র পদে তিন জন প্রার্থী ছাড়াও ১১২ জন কাউন্সিলর কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য ২৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট হচ্ছে। এছাড়া, ৩০টি ওয়ার্ডের জন্য সংরক্ষিত ১০টি নারী আসনেও ৪৬ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গত ২ জুন প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হয়েছিল। এবার ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৫৩টি ভোটকক্ষে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষের সংখ্যা ১৬২টি। ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টিকেই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটকেন্দ্রগুলো ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার অধীনে রয়েছে। ঢাকা থেকেই কমিশনের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। এছাড়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার পাশাপাশি ১০ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। ভোটকেন্দ্রগুলোতে মোট ৩ হাজার ৬১৪ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া, ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভোটের মাঠে রয়েছেন। আর প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকেই জেলা প্রশাসনের ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। তারাও ভোটের দিন দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে রয়েছে আনসার ও পুলিশ। আর স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে র্যাব ও বিজিবি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আয়তন ৯৬ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার। এই সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন। আর নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন। এছাড়া, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৬ জন। এই নির্বাচনে তৃতীয় লিঙ্গের একজন নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম