দেশের ফুটবলের দীর্ঘ দুই দশকের ট্রফি খরা ঘুচিয়ে সাফ শিরোপা জেতানো বাংলাদেশ নারী দল ২০ লাখ টাকার জন্য অংশ নিতে পারেনি অলিম্পিকের বাছাইপর্বে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পরিচালকদের কড়া সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। জানিয়েছেন, সংস্থাটির যে পরিচালক যারা আছেন, তাদের একদিনের খরচই তো ২০ লাখ টাকা।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের চতুর্থ দিনে ৭ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সেখানে প্রসঙ্গ উঠে আসে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন, পাপনকে খোঁচা দেয়ার বিষয়টি।
দেশের ক্রিকেটে ছোটখাটো যে কোনো সমস্যার খবর পাপনের কাছে শুনলেই সমাধানে নেমে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সুযোগ থাকার পরেও কেন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন না সালাউদ্দিন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, ‘সবার পারসোনালিটি তো এক না। আমি তো পাবলিকলি দেখিয়ে ফোন করব না যে, এই দেখো, প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছেন। আই অ্যাম নট দ্যাট। আমি এটা করতে পারি না। কারণ আমি ফুটবল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই এসেছি। স্বাধীনতা থেকে শুরু করে আজ অবধি। আমি তো এই নাটক করতে পারব না। আমি প্রধানমন্ত্রীকে তার প্রাপ্য সম্মান দেব এবং সবাই তাকে সম্মান করে। কিন্তু আমি তো পাবলিকলি সেটা দেখাতে পারব না। স্যরি, মাই ক্যারেক্টার।’
সালাহউদ্দিনের সে কথার উত্তর দিয়ে পাপন বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন করলে আমি যেখানেই থাকি, যে অবস্থায় থাকি ফোন ধরবই। আমি জানি না এটা নিয়ে কেন বলেছে। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। আমি বলছি এ কারণে-এটার সঙ্গে ওটার কী সম্পর্ক আমি জানি না। আমার মনে হয় সমস্যাটা আপনাদের, আপনারা এত বাজে প্রশ্ন করলেন কেন। আপনারা হিসাব চাচ্ছেন, টাকা কী করছে। এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে যান কেন। এটা করলে তো উনার মাথা খারাপ হবে এটা সবাই জানেন। এমন প্রশ্ন করেন কেন। করলে মাথা ঠিক থাকবে?’
ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে সালাহউদ্দিন সমালোচনা করায় পাল্টা সমালোচনা করেছেন পাপনও। তিনি বলেন, বলেন, ‘ সব জায়গাতেই সবরকমের জিনিস আছে। যেমন ধরেন ব্যাকগ্রাউন্ড। এখন সব ফুটবলার…ফুটবল ব্যাকগ্রাউন্ড মানেই কী নির্লজ্জ, বেহায়া, অহংকারী এটা বলা যাবে? তো? ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক কী আমি জানি। এটা ব্যক্তির ব্যাপার। তবে আপনারা এসব প্রশ্ন না করাই ভালো। যে যত কথাই বলুক- আমার এগুলো নিয়ে প্রশ্নই উঠে না মন খারাপ হওয়ার, চিন্তা করার। কে বলছে সেটা আসলে বড় কথা। এ ধরনের লোক বললে কিছু যায় আসে না।’
তবে এসব আলোচনা-সমালোচনার পেছনে মূল বিষয়টা ছিল নারী দলের অর্থ যোগানের ব্যর্থতা। পাপন জানান, যে অর্থের দোহায় দিয়ে মেয়েদের অলিম্পিক বাছাই খেলতে পাঠানো হয়নি, সে পরিমাণ অর্থ বাফুফের একেকজন পরিচালকের দৈনিক খরচের সমান। বাফুফে সহযোগিতা চাইলে সেটা ক্রিকেটারদের যে কেউ একজনেই দিয়ে দিতেন বলেও জানান তিনি।
বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘যেটা গুরুত্বপূর্ণ, মেয়েরা যেতে পারল না। মাত্র ২০ লাখ টাকার জন্য। এর চেয়ে দুঃখ, কষ্ট…মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী কষ্টটাই না পেয়েছেন। বিশ্বাস করেন আমি কারো সঙ্গে কথা বলিনি, আমাদের প্লেয়াররা দিয়ে দিতো। খালি বলতো একবার। এত গোপনে জিনিসটা রেখে, যে প্রসেসে করেছে এটা খুব দুঃখজনক। আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ে ফুটবল বোর্ডে যে পরিচালকরা আছে…অবিশ্বাস্য। ২০ লাখ টাকা দিতে পারে না। প্রতিদিন এদের খরচই তো ২০ লাখ টাকা। আমার কাছে এটা খুব আশ্চর্য লাগে। ’
বাংলা৭১নিউজ/এবি