শীত এলেই মৌলভীবাজারের বাইক্কাবিলে একটু উষ্ণতার জন্য আসে হাজারো পরিযায়ী পাখি। পাখিপ্রেমী আর দর্শনাথীদের প্রিয় জায়গা হয়ে ওঠে সংরক্ষিত এই জলাধার। পিয়ং, গিরি, বেলে, পাতি, পান সরালি, ধূসর, লালচে বক, রাজ সরালি, ফুলুরি, লেনজা হাঁস, পলাশি ফিস ঈগল, ভুবন চিল, নল ফুটকিসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির পাখি এসেছে বিলের জলে। সাথে আছে বক, শালিক, বেগুনি কালেম, ডাহুকসহ বিভিন্ন প্রজাতির স্থানীয় পাখি।
গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর সবচেয়ে বেশি পাখি এসেছে আড়াইশ একর আয়তনের এই অভয়াশ্রমে। তবে অভিযোগ উঠেছে শিকারীদের হাতে মারা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
২০০৩ সালে বাইক্কাবিলকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণার পর পর্যটকদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে। পাখিদের আবাস নির্বিঘ্ন করতে কয়েক বছর ধরে চলছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ। এতে সুফল মিললেও বিলের আশপাশে রয়েছে শিকারীদের দৌরাত্ম। অতিরিক্ত ঠান্ডা আর পাখি বসার স্থান ভলো থাকায় এবং এ বছর বিভিন্ন ধরনের মাছ জলজ উদ্ভিদ লতা গুল্ম জন্মানোর কারণে খাদ্য ভরপুর রয়েছে বাইক্কাবিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছ ও পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। মানুষের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণে রেখে স্থানীদের সংশ্লিষ্ট করে পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণ করা গেলে পাখির আনাগোনা আরও বাড়বে।
বাইক্কাবিলেই দেখা হয় পাখি গবেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা ফিরোজের সাথে। তিনি বলেন, জীববৈচিত্র ও পাখি ভালোবাসি। তাই ছুটে আসি। এখানে এ বছর নতুন করে গ্লোসি, ল্যাঞ্জা, পাইডেরিয়ার, প্রিন্টটাইল এই চার জাতের পাখির দেখা মিলেছে। বাইক্কাবিলে যদি মানুষের যাতায়াত কমিয়ে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পাখিদের অভয় দেওয়া হয় তবে পাখির আসা যাওয়া আরও বাড়বে।
বাইক্কাবিল ঘুরতে আসা দর্শনার্থী অহসান হাবিব ও মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবছরই বাইক্কাবিলে আসি পাখি দেখতে এবং ছবি তুলতে। খুব সুন্দর লাগছে পাখির এই অভয়াশ্রম দেখে। এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি পাখি এসেছে।
বাইক্কা বিলের বড়গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থপনা সংগঠনের সভাপতি আব্দুস ছুবান বলেন, জীববৈচিত্র রক্ষা করে পর্যটনবান্ধব এই স্থানটিকে নিরাপদ রাখতে পারলে সারা বছর এখানে পাখি থাকবে। এগুলোর দিকে প্রশাসনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করার দাবিও জানান তিনি।
মৌলভীবাজারের হাওর বাওড় ও বিলকে যথাযথভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাখির নিরাপদ আবাসস্থল করা গেলে বাড়বে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা এমনই মতামত প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মল্লিকা দে বলেন, বাইক্কা বিলে প্রচুর পদ্ম ফোটে। পাখি আসার পর খুব সুন্দর একটা পর্যটন স্পটে রূপান্তরিত হয়। আমরা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি যাতে এখানে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়।
বাংলা৭১নিউজ/পিকে