মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ডের বিষয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ফ্রান্স ও জার্মানি।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন জা জানোভস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্সে’ (সাবেক টুইটার) দুই দেশের বিবৃতিটি পোস্ট করেছেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি আইনের শাসনের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল ফ্রান্স ও জার্মানি। বাকি বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানবাধিকারকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে।
আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে আদালত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে অনুশোচনা করি আমরা।
এতে আরও বলা হয়, এ পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং এ ঘটনা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব। আমরা স্মরণ করি, মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন অধিকারের পক্ষে আদিলুর রহমান ২০১৭ সালে ফ্রাঙ্কো-জার্মান প্রাইজ ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড রুল অব ল পুরস্কার গ্রহণ করেন। প্রতিটি সমৃদ্ধ জাতির জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয় হলো গতিশীল একটি নাগরিক সমাজ।
এর আগে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মোট ৭২টি মানবাধিকার সংস্থা একই দিনে আদিলুর ও এএসএম নাসিরউদ্দিনকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
এ ছাড়া আদিলুর ও নাসিরউদ্দিনের রায়ে অসন্তোষ ও উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এএসএম নাসিরউদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন।
মামলার রায় পড়ার সময় আদালতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেয় সংগঠনের নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হয় বলে দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য ওই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। শাপলা চত্বরে অভিযানের পর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ডিবির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশ- বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে। পাশাপাশি তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫০৫ সি ও ডি এবং ৫০৫ এ ধারায় অপরাধ।
আদিলুর রহমান খান পেশায় সর্বোচ্চ আদালতের আপিলেট ডিভিশনের আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বামপন্থি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আর পরিচালক নাসির উদ্দীন এলান অধিকারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/একে