পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা কূটনীতিক হিসেবে চাকরিকালীন কোনো এক বিদেশি কূটনীতিক তার শারীরিক গঠন ও চেহারার আকৃতি দেখে তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে নয়, বরং ভিন্ন দেশের নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাইলে তিনি প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, আমি নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে ভিন্টেজ কনভেনশন হলে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মাতৃভাষার চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমি ওই কূটনীতিকের এমন প্রশ্নের আলোকে আরও বলেছিলাম, যদি আমাদের জীবনে ১৯৫২ ও ১৯৭১ না আসত তাহলে আমি এখন তোমাদের কেরানি হয়ে থাকতাম। স্বাধীনতা যুদ্ধ হওয়ার কারণেই আজ আমি তোমাদের মতো কূটনীতিক হতে পেরেছি। তাই আমি ধন্য যে আমি বাংলাদেশি।
তিনি আরও বলেন, সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আমাদের দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সুন্দর মন থাকতে হবে। সবারই নিজের এলাকার প্রতি মায়া থাকতে হবে। সবাইকে আঞ্চলিক প্রীতির মুহূর্তগুলো স্মরণে রাখতে হবে। তবেই আমাদের স্বদেশ প্রেমবোধের পূর্ণতা পাবে। নিজের ভাষা ও আঞ্চলিকতাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ রাখতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রায়ই বলেন লোক দেখানো কোনো কিছু করে নয়, বরং আমাদেরকে মনেপ্রাণে ভালোবাসা, সৌন্দর্য, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যই কাজ করে যাচ্ছি।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, মাতৃভাষার চলচ্চিত্র উৎসবে উৎসবে থাকছে সর্বমোট ১৫টি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে চাকমা, মারমা, ম্রো বম, গারো ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র রয়েছে। এ চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে দেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত হয়েছে ম্রো ভাষার চলচ্চিত্র ‘ক্লোবং ম্লা’। বাংলায় নামকরণ করা হয়েছে ‘গিরিকুসুম’।
থাকছে খেয়াং ভাষায় দেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত চলচ্চিত্র ‘খেতসু’ বা ‘প্রেয়সী’। বম ভাষায় দেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মুনখাত দুত হেন’, যার বাংলা নাম ‘বন্ধন’। আদিবাসী ভাষায় নতুন এ তিনটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন ডা. মং উষা থোয়াই এবং পরিচালনা করেছেন প্রদীপ ঘোষ।
বাংলা ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের নির্মিত ‘রক্তকরবীর খোঁজে নন্দিনী’। এ চলচ্চিত্রে নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেছে অবনী মিঠু। রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পোস্ট মাস্টার গল্প অবলম্বনে নূর আবসার প্রযোজিত ও শাঁওলি মজুমদার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ঘরে ফেরা’।
মৃত্তিকা রাশেদ পরিচালিত ‘কালারস অব হোপ’। উৎসবে থাকছে নজমুল মুহাম্মদ পরিচালিত ‘নেকলেস’, এস. এম. শাফিনুর আলম পরিচালিত ‘আচিক ঐক্য’, রাশেদুল ইসলাম রনি পরিচালিত ‘নো ল্যান্ড’স টক’, মোবারক হোসেন পরিচালিত ‘পৈতৃক ভিটা’, ফিদেল দ্রং পরিচালিত ‘ছাতা’, পার্থ ফোলিয়া পরিচালিত ‘আরও কিছু দিন’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, এ বি এম শামসুল হুদা, ডা. দিবালোক সিংহ, ডা. মুশতাক হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বান্দরবান জেলার চিকিৎসক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজক ডা. মং উষা থোয়াই।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে