হামলায় নেতৃত্বদানকারী মূল হোতাদের গ্রেফতারসহ তিন দফা দাবিতে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় গ্রেফতারকৃত দুই শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পরিবহন শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের কারণে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বরিশাল থেকে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাটসহ দক্ষিণের ১৭টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা এবং পায়রা বন্দরে চলাচলকারী পরিবহনগুলো পড়েছে বেকায়দায়।
আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রক্তিম হাসান অমিতসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে রূপাতলী হাউজিং এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি মেসে হামলা চালানো হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মানিব্যাগ ও বিভিন্ন দামি মালামাল ছিনিয়ে নেয়া হয়। হামলায় অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের মধ্যে ১৩ জন শিক্ষার্থীকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
১৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ওই দিনরাত দেড়টা থেকে আন্দোলন শুরু করেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তিনদফা দাবি পূরণের শর্তে ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, হামলায় নেতৃত্বদানকারী মূল হোতাদের এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে চিহ্নিত হামলাকারীদের নামসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে মামলা দায়েরের জন্য অনুরোধ করে।
শিক্ষার্থী অভিযোগ- মঙ্গলবার মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলায় নেতৃত্ব দেন মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী তেল ব্যবসায়ী মামুন মিয়া। এছাড়া হামলায় আহত শিক্ষার্থীরাও বেশ কয়েকজনের নাম বলেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুক্রবার বিকেলে মারধরের একটি সাধারণ মামলা করেছে। এতে কোনো নির্দিষ্ট আসামির নাম উল্লেখ করেনি। বিষয়টি রহস্যজনক এবং অগ্রহণযোগ্য।
তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা ওই মামলা শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করে তিন দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নেমেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা মামলায় এমকে পরিবহনের সুপারভাইজার আবুল বাশার রনি (২৫) ও সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের হেলপার মো. ফিরোজকে(২৪) পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই দুই শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে সকাল ৯টা থেকে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। ফলে বরিশাল থেকে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট সহ দক্ষিণের ১৭ টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস জানান, হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি নুরুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত দুই শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। তবে গ্রেফতারের হাত থেকে রক্ষা পেতে হামলাকারীরা আত্মগোপন করেছেন। এ কারণে তাদের গ্রেফতারে সময় লাগছে। আশাকরি দ্রুত সময়ে হামলাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে