টানা দুদিনের ভারি বর্ষণে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। রায়েন্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদের খাদ্য গুদামে পানি উঠে প্রায় ২০০ বস্তা ভিজিডি চাল ভিজে নষ্ট হয়েছে। ভেজা চাল নিয়ে বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। রায়েন্দা পাইলট হাই স্কুলের কেন্দ্রিয় খেলার মাঠ পানিতে টইটুম্বুর। দেখলে মনে হয় মাঠ নয় এটা পুকুর।
এ ছাড়া রায়েন্দা শহরের ফলপট্টি, কাচা বাজার, পূর্ব মাথা, টিএন্ডটি, সরকারি খাদ্য গুদাম এলাকা, শহরতলীর উত্তর কদমতলা, জিলবুনিয়া এবং সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, গাবতলা, উত্তর সাইথখালী, দক্ষিণ সাউথখালী, বকুলতলা এলাকার অন্তত তিন হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বহু মাছের ঘের, পুকুর তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে।
আজ মঙ্গলবার (১৯অক্টোবর) সকাল থেকে ঘুরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিন সকাল ১০টার দিকে রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের খাদ্য গুদামে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে বৃষ্টির পানির স্রোত বইছে। বালতি দিয়ে সেচে সেই পানি সরানোর চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না। প্রবল বৃষ্টিতে আশপাশের পানি সরতে না পারায় তুলনামূলক নিচু এই খাদ্য গুদামে এসে সমস্ত পানি জমা হচ্ছে।
তবে, কার্তিকের শুরুর এই বৃষ্টি রোপা আমনের জন্য অনেকটা আশির্বাদ স্বরূপ। কারণ উপজেলা কিছু কিছু এলাকায় আমনের ক্ষেতে মাজরা পোকার উপদ্রব দেখা দিয়েছেলি। বৃষ্টির ফলে প্রকৃতিকভাবেই পোকা দমন হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কে এম মিজানুর রহমান জানান, ৬০০ বস্তা ভিজিডি চাল রয়েছে গুদামে। এর মধ্যে নিচ থেকে ২০০ বস্তা চাল সম্পূর্ণ ভিজে গেছে। সকাল থেকে শুকনা চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ভেজা চাল থেকে পঁচা গন্ধ ছড়াচ্ছে। উপকারভোগীরা এই চাল নিতে চাচ্ছে না। বাইরের পানি এসে ঢুকছে গুদামে। সেচ দিয়েও কমানো যাচ্ছে না। ভেজা চালের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
শহরতলীর উত্তর কদমতলা এলাকার বাসিন্দা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম জীবন জানান, বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় তার এলাকার রাস্তাঘাট, অসংখ্য ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে।
সাউথখালী ইউপির চেয়রম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের দুই সহস্রাধিক পরিবারের বাড়িঘর তলিয়ে রয়েছে। বহু ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
রায়েন্দা ইউনিয়নের সদর ওয়ার্ডের মেম্বর জালাল আহমেদ রুমি জানান, রায়েন্দা বাজারসহ তার ওয়ার্ডে এক হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পান নামতে পারছে না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ জানান, অতিবৃষ্টিতে উপজেলা বিভিন্ন এলাকার ৫৪০টি মাছের ঘের, পুকুর ডুবে ১৩ মেট্রিক টন নানা প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। প্রাথমিকভাবে জরিপ করে দেখা যায়, অবকাঠামো ও ভেসে যাওয়া মাছের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ লাখ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম উদ্দিন জানান, এই বৃষ্টি আমনের তেমন ক্ষতি হবে না। বরং উপকার হবে। এতে সার, ওষুধ কম ব্যবহার হবে। পোকার উপদ্রব কমবে। সমস্ত স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে, বৃষ্টিপাত দীর্ঘমেয়াদী হলেক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ