পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে একটি ট্রেনে সন্ত্রাসী হামলার পর পরিচালিত উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযানে সব হামলাকারীকে হত্যা এবং সব জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে অভিযান শুরুর আগেই ২১ যাত্রী হামলাকারীদের হাতে প্রাণ হারান।
ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনসের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেন, এই জটিল অভিযানে পাকিস্তান বিমান বাহিনী (পিএএফ), স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ (এসএসজি), সেনাবাহিনী ও ফ্রন্টিয়ার কর্পস (এফসি) অংশ নিয়েছিল।
গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন হামলাকারী একটি রেললাইন উড়িয়ে দিয়ে জাফর এক্সপ্রেসে হামলা চালায়। ওই ট্রেনে চার শতাধিক যাত্রী ছিলেন।
ডিজি আইএসপিআর বলেন, অভিযানে ৩৩ সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে…ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের সময় কোনো যাত্রী হতাহত হননি। তবে তিনি জানান, মূল অভিযানের আগে সন্ত্রাসীরা ২১ যাত্রীকে হত্যা করে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী আরও জানান, গত ১১ মার্চ সন্ত্রাসীরা বোলানে রেললাইন উড়িয়ে দিয়ে ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে। তারা নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা যাত্রীদের আত্মঘাতী হামলাকারীদের সঙ্গে মিশিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর স্নাইপাররা তাদের চিহ্নিত করে নির্মূল করেছে।
ডিজি আইএসপিআর আরও জানায়, অভিযানের সময় সন্ত্রাসীরা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে আফগানিস্তানে অবস্থানরত তাদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল।
তবে মোট কতজন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে সেই তথ্য জানাননি তিনি।
অভিযানের প্রথম ধাপে ১০০ যাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়, পরে আরও অনেককে মুক্ত করা হয়।
বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ট্রেন ও আশপাশের এলাকা পরীক্ষা করছে।
ডিজি আইএসপিআর বলেন, এ ঘটনার মাধ্যমে খেলার নিয়ম বদলেছে। যারা এই হামলা চালিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী আরও জানায়, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, এই হামলার পরিকল্পনা আফগানিস্তান থেকে করা হয়েছিল এবং সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত হচ্ছিল।
পাকিস্তান সরকার আশা করছে, আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ভূমি সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের অনুমতি দেবে না।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি সফল অভিযানের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং নিহত ২১ জন বেসামরিক নাগরিক ও চার এফসি সদস্যের জন্য শোকপ্রকাশ করেছেন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, এই অভিযান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পেশাদারত্ব ও দক্ষ নেতৃত্বের প্রতিফলন। তিনি বৃহস্পতিবার বেলুচিস্তান সফরের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন।
মুক্ত হওয়া একজন যাত্রী ছিনতাই হওয়া ট্রেন থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং নিরাপত্তা অভিযানে সেনাবাহিনী ও এফসি সদস্যদের প্রচেষ্টার কথা স্বীকার করেন।
উদ্ধার হওয়া যাত্রী বলেন, গোলাগুলি হয়েছিল, কিন্তু আল্লাহর রহমতে সেনাবাহিনী ও এফসি সদস্যরা আমাদের নিরাপদে সরিয়ে এনেছেন।
ট্রেনে মায়ের সঙ্গে ভ্রমণ করছিলেন মুহাম্মদ বিলাল। তিনি এএফপিকে বলেন, আমরা কীভাবে পালাতে পেরেছি তা বর্ণনা করার মতো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। এটি ছিল ভয়াবহ।
এ ঘটনায় কোয়েটা থেকে পাকিস্তানের অন্যান্য অংশে চলাচলকারী জাফর এক্সপ্রেস ও বোলান মেইল ট্রেন তিনদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পাকিস্তানের জনগণ হতবাক ও মর্মাহত হলেও সরকার ও সেনাবাহিনী জোর দিয়ে বলছে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের অভিযান থামবে না।
সূত্র: জিও নিউজ
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে