বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক : পাকিস্তানি চিত্রতারকার অভিনয় করা একটি ছবি সারাদেশে নিরাপদে মুক্তির ব্যবস্থা করতে বলিউডের একদল প্রযোজক ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন।
‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ নামের ছবিটিতে পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান একটি ছোট ভূমিকায় আছেন। আর সেজন্যই মহারাষ্ট্রের কট্টর হিন্দু এমএনএস হুমকি দিয়েছে, এই ছবিটি যে সব সিনেমা হলে মুক্তি পাবে সেখানেই তারা হামলা চালাবে।
ছবির পরিচালক করণ জোহর ইতিমধ্যে এক ভিডিও বার্তায় দেশবাসীর কাছে ছবিটির নিরাপদ মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন।
তবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপের পরও ছবিটির মুক্তি নিয়ে সংশয় কাটছে না।
বলিউডের চিত্রনির্মাতাদের একাংশ বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দাবি জানান, তাদের সিনেমাতে যদি কোনো পাকিস্তানি অভিনেতা থেকেও থাকেন তারপরও ছবিটির অধিকার আছে অবাধে মুক্তি পাওয়ার।
বলিউডের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন পরিচালক মুকেশ ভাট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে তিনি জানান, একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সুরক্ষিত থাকার অধিকার তার আছে, সরকারের কাছে সেই প্রত্যাশা তিনি করতেই পারেন।
মুকেশ ভাট বলেন, আসন্ন দীপাবলীতে সুস্থ বিনোদনমূলক ছবি যদি কেউ দেখতে চান, রাষ্ট্রের কর্তব্য তাকে নিরাপত্তা দেয়া এবং যারা বিনা কারণে এই ইস্যুতে হিংসা তৈরি করছে তাদের প্রতিহত করা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন বলে প্রযোজকরা জানিয়েছেন। তবে রাজনাথ সিং নিজে এখনও এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।
তবে বলিউডের ওই দলটিকে মন্ত্রীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন যিনি, সেই বিজেপিরই আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও গায়ক বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, ভারতে কারও অধিকার নেই আইন নিজের হাতে নেয়ার।
তিনি বলেন, ‘ছবিটি যে সব মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পাবে সেখানেই ভাঙচুর চালানো হবে, এটা বলার ক্ষমতা, অধিকার বা ঔদ্ধত্য এমনএনএস-কে কে দিয়েছে? এটা একটা গুন্ডাদের পার্টি। আগেও তারা ভ্যালেন্টাইনস ডেতে দম্পতিদের পিটিয়েছে, গ্রিটিংস কার্ডের দোকানে হামলা করেছে।’
যে ছবি নিয়ে এত গণ্ডগোল, সেই অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল মুক্তি পাওয়ার কথা আসন্ন দীপাবলীতে।
ছবিটিতে পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান আছেন একটি ক্যামিও রোলে। বলা হচ্ছে, ছবিতে তার রোল ১০ মিনিটের মতো।
তবে পরিচালক করণ জোহর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করে কার্যত মুচলেকা দিয়েছেন।
সেখানে তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছুতেই ছবিতে কোনো পাকিস্তানি অভিনেতাকে তিনি নিতেন না।
করণ জোহর বলেন, ‘গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে যখন আমি ছবিটা বানাই তখন কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য রকম ছিল। আমাদের সরকার তখন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টায় নিয়োজিত ছিল, আমিও সেই প্রয়াসকে সম্মান করেছিলাম। আজ দেশবাসীর যে অনুভূতি সেটাকেও আমি মর্যাদা দিই এবং পরিস্থিতি এ রকম হলে আমিও কিন্তু পাশের দেশের প্রতিভাদের কখনও কাজে লাগাতাম না।’
নিজেকে দেশপ্রেমী বলে পরিচয় দিয়ে এই ভিডিও পোস্টের পরও করণ জোহর যে ছবিটির নিরাপদ মুক্তি নিশ্চিত করতে পেরেছেন তা কিন্তু নয়।
মুম্বাই তথা মহারাষ্ট্রের বেশিরভাগ সিনেমা হল মালিক নিজে থেকেই ছবিটে দেখানোর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। আর মাল্টিপ্লেক্সগুলোও এমএনএসের হুমকির মুখে আছে।
এমএনএসের সিনেমা শাখার নেতা আমেয় খোপকার বলছেন, ‘পাকিস্তানি অভিনেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সিনে থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন যে গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও গোয়াতে তাদের সব সিনেমা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেজন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন জানাই। আর যেসব মাল্টিপ্লেক্স এখনও সিনেমাটা দেখানোর জেদ ধরে আছে তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই তাদের আসবাবপত্র, কাঁচ এগুলো কিন্তু দামী …। পাকিস্তানি শিল্পীদের যারাই কাস্ট করবেন তাদের আমরা পেটাব।’
এই ধরনের প্রকাশ্য হুমকির পরও পুলিশ বা প্রশাসন রাজ ঠ্যাকারের দলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা এখনও নেয়নি।
দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই বা ঠিক কী আশ্বাস দিয়েছেন তাও এখনও স্পষ্ট নয়। কাজেই ৫৫ কোটি রুপি খরচ করে বানানো ছবিটি নিয়ে করণ জোহরের মুশকিল রয়েই যাচ্ছে!
সূত্র- বিবিসি বাংলা