বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: ভোটার কক্ষের পর্দাঘেরা গোপন স্থানে ইভিএমে ভোট দিচ্ছিলেন এক নারী। তখন সেখানে ঢুকে পড়েন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর কালাচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায়।
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে তেড়ে আসেন কাউন্সিলপ্রার্থী জাকির হোসেন ওরফে বাবুল। প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বললেন, আপনাদের এখানে কী কাজ? এগুলো বোঝেন না? নাকি বুঝায়ে দিতে হবে?
কেন্দ্রটিতে ভোটার উপস্থিতি বোঝাতে লোকজনকে দাঁড় করিয়ে রাখারও অভিযোগ করেন ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
সকাল আটটা ৪০ মিনিটে এই কেন্দ্রে আসেন তাবিথ আউয়াল। তখন কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের কোনো সারি ছিল না। কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলামের নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী লোকজন জটলা করে ছিলেন।
তাবিথ কেন্দ্রে ঢোকার পর নৌকার ব্যাজধারী ওই লোকজন ভোটার হিসেবে লাইনে দাঁড়ান। তারা নিজেদের ব্যাজ খুলে ফেলেন। ওই সময় পুরুষ ও নারী ভোটারদের দুই লাইনেই কিছু ভোটার দেখা যায়।
সাংবাদিকেরা কয়েকজনকে ভোটার স্লিপ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে আছে কিনা জানতে চাইলে তারা লাইন থেকে বেরিয়ে যান। এমনই একটি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল ১৩-১৪ বছরের এক কিশোরী।
তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে বলল ভোট কক্ষে গিয়ে ভোটার স্লিপ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দেখাবে। কিশোরীকে অনুসরণ করলে দেখা যায়, সে এক দরজা দিয়ে কেন্দ্রে ঢুকে অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তাবিথের অভিযোগ, এতক্ষণ এখানে কোনো ভোটার ছিল না। সাংবাদিকদের দেখে হঠাৎ একটি ভোটার লাইন তৈরি করা হয়েছে।
ওই কেন্দ্র থেকে সকাল নয়টার দিকে বেরিয়ে যান তাবিথ আউয়াল। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পর ওই কেন্দ্রে নৌকার ব্যাজধারী ৩০ জনের একটি দল ঢোকে।
এর মধ্যে কয়েক নারী ভোট কক্ষ ৭ ও ৮ নম্বরে ঢুকে পড়েন। তখন পর্দাঘেরা গোপন স্থানে এক নারীর ইভিএমে ভোট দেয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। ব্যাজধারীদের একজন সেখানে ঢুকে পড়েন।
তিন সাংবাদিক তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তেড়ে এসে বলেন, আপনাদের এখানে কী কাজ? এগুলো বোঝেন না? নাকি বুঝায়ে দিতে হবে?
এরপর ওই ব্যক্তি তিন সাংবাদিককে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেন। আশপাশের লোকজন তাকে বাবুল ভাই বলে ডাকছিলেন।
পরে আশপাশের পোস্টার ও ব্যানার দেখে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং এবার আওয়ামী লীগ সমর্থতি কাউন্সিলর প্রার্থী জাকির হোসেন ওরফে বাবুল।
তিনি যখন নারীদের কক্ষে ঢোকেন, তখন কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আজিজুল হক মাহমুদ। তিনি বললেন, উনি কাউন্সিলর প্রার্থী, আমি তো উনাকে মানা করতে পারি না।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে (ডিএনসিসি) নিজের ভোট দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি কেন্দ্রে ঢুকে বিরোধী দলের এজেন্টদের খোঁজ নেন।
শনিবার তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ইস্পাহানি বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে ভোট দেন। প্রায় ৪৫ মিনিট কেন্দ্রটিতে অবস্থান করে ভোটের চিত্র দেখেন মাহবুব তালুকদার।
তিনি একপর্যায়ে ৪ নম্বর বুথে ঢুকে প্রিজাইডিং অফিসার আবদুল কুদ্দুসকে পুরো কেন্দ্রে বিরোধী দলীয় মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট আছে কিনা তা খুঁজে দেখতে বলেন। নির্বাচন কমিশনার প্রিসাইডিং অফিসারকে বলেন, পুরো কেন্দ্রে বিরোধী দলীয় মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট আছে কি না খোঁজে দেখ।
বেশির ভাগ বুথ থেকে ঘুরে এসে তাকে জানানো হয়, বিরোধীদলের কোনো এজেন্ট নেই।
এরপর ওই কেন্দ্রে ভোট দেন মাহবুব তালুকদার। ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মাহবুব তালুকদার।
বিরোধীদলীয় প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো কোনো এজেন্ট খুঁজে পেলাম না, তাই বের করে দেয়ার কথা আসছে কেন? আপনারা বলছেন, সকালে এজেন্ট ছিল। এখন নেই। আপনারা খুঁজে বের করেন, কেন নেই?
উল্লেখ্য, এই কেন্দ্রে ৪ বুথে ১ হাজার ৮০৫ ভোটার রয়েছেন। দুপুর ১২টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ২২২টি।
বাংলা৭১নিউজ/এসআর