শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
হামলাকারীদের কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে দুটি নতুন ট্রেন লোহিত সাগরে হুথিদের হামলায় পিছু হটলো মার্কিন যুদ্ধজাহাজ অন্তর্বর্তীকালীন দা‌য়িত্ব পালনে ঢাকায় ট্র্যাসি জ্যাকবসন শ্রম আইনে পরিচালনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দু’পক্ষের হাতাহাতি পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে মায়ের জন্য বাসায় রান্না করা খাবার নিয়ে গেলেন তারেক রহমান বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র লেবানন-ইয়েমেনে ইসরায়েলের হামলা, গাজায় নিহত আরও ২১ সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুলসহ ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবিতে লিফলেট বিতরণ এবার কারও পক্ষ নিয়ে কাজ করলে অসুবিধা হবে : কর্মকর্তাদের সিইসি অল্প কিছুদিনের মধ্যে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল ইসলামী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা চুরি শেখ হাসিনার দুর্নীতি খুঁজে বের করতে টাস্ক ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত ডিএমপির ১২ ডিসিকে বদলি ‘বৃহত্তর ইসরাইলের’ মানচিত্র প্রকাশ, আরব দেশগুলোর কড়া প্রতিবাদ বিমানবন্দরে রক্তাক্ত সেই প্রবাসীকে জরিমানা, হতে পারে জেলও ৩০ জুনের আগেই মহার্ঘভাতা ঘোষণা

পবিত্র কোরআনে ইতিহাসচর্চায় যা বলা হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক:
  • আপলোড সময় রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

পবিত্র কোরআনে পূর্ববর্তী বহু জাতি-গোষ্ঠীর ইতিহাস ও বর্ণনা স্থান পেয়েছে। ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হওয়ার তাগিদও আছে তাতে। তবে কোরআনের ইতিহাস ও বর্ণনা মানবরচিত ইতিহাসগ্রন্থের মতো নয়। মহান এই গ্রন্থে ইতিহাসের সেই অংশটুকুই স্থান পেয়েছে, যা মানবজাতি ও মানবসভ্যতার জন্য অপরিহার্য, যা উপকারী ও কল্যাণকর।

ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুলদের সেসব বৃত্তান্ত আমি আপনার কাছে বর্ণনা করছি, যা দ্বারা আমি আপনার অন্তরকে দৃঢ় করে, এর মাধ্যমে আপনার কাছে এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য এসেছে উপদেশ ও সাবধান বাণী। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১)
ইতিহাসচর্চায় কোরআনের অনুপ্রেরণা : কোরআন মানবজাতিকে ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলি থেকে শিক্ষাগ্রহণের উপদেশ দিয়েছে। যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, তাদের নিন্দায় বলা হয়েছে, ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি ও দেখেনি তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল?’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ৮২)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি তাদের বৃত্তান্ত বিবৃত করুন, যাতে তারা চিন্তা করে। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৬)

ইতিহাসচর্চায় কোরআনের দৃষ্টিকোণ : ইতিহাসচর্চায় কোরআন উচ্চ দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে। কোরআনের দৃষ্টিতে ইতিহাস হলো মানুষের সত্যের পাঠগ্রহণের মাধ্যম। তাই মানুষ ইতিহাসের পাতায় কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর গৌরব-গরিমার চেয়ে সত্যের অনুসন্ধানই বেশি করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনার কাছে উত্তম কাহিনি বর্ণনা করছি ওহির মাধ্যমে আপনার কাছে এই কোরআন প্রেরণ করে, যদিও তার আগে আপনি ছিলেন অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৩)

আর সেই সত্য দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে। সর্বোপরি মহান আল্লাহর প্রতি তার ঈমান বৃদ্ধি পাবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুলদের সেসব বৃত্তান্ত আমি আপনার কাছে বর্ণনা করছি, যা দ্বারা আমি আপনার অন্তরকে দৃঢ় করে, এর মাধ্যমে আপনার কাছে এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য এসেছে উপদেশ ও সাবধান বাণী। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১)

ঐহিহাসিক বিবরণের প্রধান উদ্দেশ্য : কোরআনে ঐতিহাসিক বিবরণগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য সম্পর্কে শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘কোরআনে বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিক বিবরণ সেসব ঘটনা সম্পর্কে অবগত করা উদ্দেশ্য নয়, বরং এর দ্বারা মূল উদ্দেশ্য হলো শ্রোতার মনোযোগকে ঘটনার বিবরণ থেকে শিরক ও পাপাচারের ভয়াবহতা এবং মুশরিক ও অবাধ্যদের প্রতি আল্লাহর শাস্তির দিকে ফেরানো। এমনিভাবে মুমিনদের প্রতি আল্লাহর সাহায্য-সহযোগিতার প্রতি বান্দার আস্থা বৃদ্ধি করা। ’ (হুজ্জাতুল্লাহির বালিগাহ)

এই লক্ষ্য সামনে রেখে কোরআনে কিছু ঘটনার বিবরণ বারবার আনা হয়েছে এবং বহু ঘটনার উল্লেখ মাত্র একবার করা হয়েছে বা একেবারেই ত্যাগ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি এটা তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের শিক্ষাগ্রহণের জন্য দৃষ্টান্ত ও আল্লাহভীরুদের জন্য উপদেশস্বরূপ করেছি। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৬৬)

ইতিহাস বর্ণনায় অনুসৃত পদ্ধতি : কোরআনে ইতিহাস বর্ণনার প্রচলিত রীতি-নীতি ও নথি দীর্ঘ আলোচনা পরিহার করা হয়েছে, যেখানে মানুষের জন্য উপকারী ও ক্ষতিকর, সত্য ও মিথ্যা সব কিছুই স্থান পায়; বরং কোরআন প্রচলিত ‘তারিখ’ বা ইতিহাস শব্দের প্রয়োগ করার পরিবর্তে ‘নাবায়া’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২৭), ‘কিসসাহ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৩) ও ‘হাদিস’ (সুরা : নাজিয়াত, আয়াত : ১৫) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেছে।

কেননা এই শব্দগুলোতে সত্য, সত্যের অনুসরণ, বস্তুনিষ্ঠতা ও বাস্তবতার অর্থ পাওয়া যায়। যেমন কিসসা শব্দটি সত্যের অনুসরণ বোঝায়। আল্লাহ বলেন, ‘মুসা বলল, আমরা তো সেই স্থানটিরই সন্ধান করছিলাম। অতঃপর তারা নিজেদের (কাসাস তথা) পদচিহ্ন অনুসরণ করে ফিরে গেল। ’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৬৪)

নিম্নোক্ত আয়াত থেকে ইতিহাস বর্ণনায় কোরআনের অনুসৃত পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের বৃত্তান্তে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা। এটা এমন বাণী, যা মিথ্যা রচনা নয়। কিন্তু মুমিনদের জন্য তা পূর্বগ্রন্থে যা আছে তার সমর্থন এবং সব কিছুর বিশদ বিবরণ, পথপ্রদর্শন ও রহমত। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১১১)

যেসব ঘটনা স্থান পেয়েছে : শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহ.) কোরআনে বর্ণিত ঘটনাবলিকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন—এক. নবী-রাসুল ও সমসাময়িক মুমিন ও কাফিরদের বর্ণনা।

দুই. বিশেষ ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের বর্ণনা। যেমন—পুণ্যবানদের ভেতর মারিয়াম (আ.), লুকমান (আ.) ও আসহাবে কাহাফের যুবকরা এবং অবিশ্বাসীদের ভেতর কারুন ও আসহাবে ফিলের ঘটনা।

তিন. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা। যেমন—বদর, উহুদ, আহজাব, বনি কুরাইজা ইত্যাদি যুদ্ধের বিবরণ এবং জায়িদ বিন হারিসা (রা.) ও আবু লাহাবের ঘটনা। (উসুলুন ফি-তাফসির, পৃষ্ঠা ৫০)

যেসব বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে : কোরআনে যেসব ঐতিহাসিক ঘটনা ও বিবরণ স্থানে পেয়েছে, তাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে।

১. আল্লাহর প্রজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ : ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কাছে এসেছে সুসংবাদ, যাতে আছে সাবধান বাণী; তা পরিপূর্ণ জ্ঞান, তবে এই সতর্কবাণী তাদের (অবিশ্বাসীদের) কোনো উপকারে আসেনি। ’ (সুরা : কামার, আয়াত : ৪-৫)

২. আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতার প্রমাণ : ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের প্রতি জুলুম করিনি, কিন্তু তারাই নিজেদের প্রতি অবিচার করেছিল। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১০১)

৩. মুমিনের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের বর্ণনা : ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের ওপর প্রেরণ করেছিলাম প্রস্তর বহনকারী প্রচণ্ড ঝড়, কিন্তু লুত পরিবারের ওপর নয়, তাদের আমি উদ্ধার করেছিলাম রাতের শেষাংশে—আমার বিশেষ অনুগ্রহস্বরূপ; যারা কৃতজ্ঞ, আমি এভাবেই তাদের পুরস্কৃত করে থাকি। ’ (সুরা : কামার, আয়াত : ৩৪-৩৫)

৪. মুমিনদের ধৈর্য ও আনুগত্যে উৎসাহ দান : ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, তবে তাদের পূর্ববর্তীরাও তো মিথ্যারোপ করেছিল—তাদের কাছে এসেছিল তাদের রাসুলরা সুস্পষ্ট নিদর্শন, গ্রন্থাদি ও দীপ্তিমান কিতাবসহ। ’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৫)

৫. অবিশ্বাসীদের সতর্ক করা : ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি এবং দেখেনি তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছে? আল্লাহ তাদের ধ্বংস করেছেন এবং অবিশ্বাসীদের জন্য আছে অনুরূপ পরিণাম। ’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ১০)

আল্লাহ সবাইকে ইতিহাস থেকে যথার্থ শিক্ষাগ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলা৭১নিউজ/এসএন

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৫ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com