রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামি ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাতেই কার্যকর হতে পারে। এ জন্য রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রস্তুত করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। ফাঁসি কার্যকরে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ৮ জল্লাদকে।
গত মঙ্গলবার মহিউদ্দিনের স্বজনেরা যখন শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করেন তখন কারা কর্তৃপক্ষ তাদের একটি চিঠি দিয়েছে। এই চিঠি বাড়ি নিয়ে গিয়ে খুলতে বলা হয়। চিঠিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তারিখ ও সময় লেখা ছিল। সে অনুযায়ী, আজ রাত ১০টা ১ মিনিটে রায় কার্যকর হবে।
তবে এসব নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ কোনও তথ্য জানায়নি। তারা বলছে, জেল কোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগে কোনও তথ্য জানানোর নিয়ম নেই।
কারাগারের একটি সূত্রমতে, কারা কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর এক সপ্তাহ আগে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করে। কারাগারের পূর্ব দিকের দেওয়ালের পাশে এ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, যে দড়িতে ঝুলানো হবে তাতে আসামিদের তিন গুণ ওজনের বস্তু বেঁধে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ফাঁসির দড়ি প্রস্তুত করা হয়েছে।
সূত্রমতে, ফাঁসি কার্যকর করতে ৮ জনের একটি জল্লাদ টিম গঠন করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর তাদের প্রশিক্ষণ ও ফাঁসি কার্যকরের একাধিক মহড়া দেওয়ানো হয়। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জল্লাদদের মধ্যে টিম প্রধান হ্যান্ডেল টেনে ফাঁসি কার্যকর করবেন। এ সময় তার সঙ্গে একজন সহযোগী থাকবেন। বাকি ছয়জনের মধ্যে চারজন দুই আসামিকে ধরে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাবেন। আর দুজন তাদের কালো কাপড়ের জম টিপু ও গলায় দড়ি পরিয়ে দেবেন।
সূত্রমতে, এক মঞ্চে একসঙ্গে একই সময় দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হবে। মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের বাম পাশে থাকবেন জাহাঙ্গীর আলম। ১০টা ১ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট তাদের দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হবে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাদের হাত-পা ও ঘাড়ের রগ কাটা হতে পারে। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে পাঠানো হবে। জাহাঙ্গীরের লাশ পাঠানো হবে নগরীর মতিহার থানার খোঁজাপুরে। আর মহিউদ্দিনের লাশ পাঠানো হবে ফরিদপুরের ভাঙ্গায়।
কারাগার সূত্রমতে, রাত ৯টার দিকে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি দুই আসামিকে জানানো হবে। এরপর তাদের গোসল করিয়ে খাবারের বিষয়ে শেষ ইচ্ছা আছে কি না জানতে চাওয়া হবে। পরে কারা মসজিদের ইমাম তাদের তওবা পড়াবেন। এরপর ১০টার আগেই তাদের ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।
ফাঁসি কার্যকরের সময় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন, সিনিয়র জেল সুপার ও জেলার ছাড়াও জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন, মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। কারাগারে প্রস্তুত রাখা হবে লাশ বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স। এছাড়াও নিরাপত্তা জোরদার কারা হবে কারাগারের আশপাশের।
গত ২৫ জুলাই দুই আসামির পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাত করেছেন। জাহাঙ্গীরের পরিবারের ৩৫ সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন। আর মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে তার পরিবারের তিন সদস্য। এরপর তাদের পরিবারের আর কেউ দেখা করতে পারেনি।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ। একদিন পর ৩ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক এস তাহের আহমেদের গলিত মরদেহ। ওইদিন রাতে তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে।
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, তার ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালাম। তবে বিচারে খালাস পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিন মুন্সি।
পরবর্তীতে সাজাপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন।
সর্বশেষ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। সে আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি। গত ৫ জুলাই সেই চিঠি রাজশাহী কারাগারে পৌঁছায়। এরপর থেকে তাদের ফাঁসি কার্যকর করার প্রস্তুতি শুরু হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি