বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের অসংলগ্ন কথাবার্তায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নৌমন্ত্রীকে ধমকের শুরুই বলেছেন-আপনার কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তিনি নৌমন্ত্রীকে সংযত হয়ে কথা বলার নির্দেশ দেন।
আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে ডেকে নিয়ে তিনি তার ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এই নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রী আজ বাংলা৭১নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল রবিবার দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কথা বলেন নৌমন্ত্রী।তিনি হাসতে হাসতে ভারতের মহারাষ্ট্রে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন নিহত হওয়ার সঙ্গে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে তুলনা করেন। তার হাস্যজ্জ্যেল বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে মিডিয়াতে প্রচার হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ কারণে বিব্রতকর অবস্থায় মুখোমুখি হয় সরকার।
জানা যায়, এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুদ্ধ হন িএবং বিষয়টি নিয়ে তিনি সিনিয়র কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে কথাও বলেন। একপর্যায়ে তিনি নৌমন্ত্রী শাজাহান খানকে ডেকে তার ক্ষোভের কথা জানান এবং আরও সংযত হয়ে কথা বলার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘সরকার বিব্রত হয় এমন যেকোনও মন্তব্য ভবিষ্যতে পরিহার করতে হবে। কথা বলার সময় আরও সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে সড়ক দুর্ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ না করে মহারাষ্ট্রের সড়ক দুর্ঘটনার রেফারেন্স দেওয়া ঠিক হয়নি।’
শাজাহান খান যা বলেছিলেন
রবিবার সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মোংলা বন্দরের জন্য একটি মোবাইল হারবার ক্রেন ক্রয়ের বিষয়ে চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শাজাহান খান বলেন, ‘ভারতের মহারাষ্ট্রে এক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা গেছে, তা নিয়ে কোনও হইচই নেই। অথচ বাংলাদেশে সামান্য কোনও ঘটনা ঘটলেই হইচই শুরু হয়ে যায়।’
মহারাষ্ট্রের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে কুর্মিটোলার সড়ক দুর্ঘটনাকে স্বাভাবিক বলছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘আগে চুক্তিটা হোক, তারপর বলছি।’ চুক্তি শেষে তিনি এ বিষয়ে আর কোনও কথা না বলে বেরিয়ে যান।
নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
এদিকে একইসঙ্গে এই ঘটনায় এমন আচরণ ও আপত্তিজনক মন্তব্য করায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ ও ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সচিবালয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ সমাধান নয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করাই প্রধান কাজ। সরকার সেটাই করবে।’
সোমবার বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরমধ্যে রয়েছে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ক্ষমাপ্রার্থনা, বাসচালকদের গ্রেফতার, লাইসেন্সবিহীন চালকদের গাড়ি চালানো বন্ধ ইত্যাদি। এসব দাবি বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দিয়েছে তারা।
রবিবার রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র্যাডিসন হোটেলের উল্টো দিকে) বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর সড়কের বাঁ-পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো দিয়া আক্তার মীম ও আব্দুল করিম সজীব। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। পথচারীরা সঙ্গে সঙ্গে আহতদের নিকটস্থ কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে ভর্তি করা হয়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা জাবালে নূর পরিবহনের ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় ও শতাধিক বাস ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস