বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। আজ তার ৭৬তম জন্মদিন। এ দিন উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদেরই হাতে গড়া নুহাশপল্লীতে এক হাজার ৭৬টি মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয়।
এতে পুরো নুহাশপল্লী আলোকিত হয়ে উঠে। পরে সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জন্মদিনের কেক কেটে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের কর্মসূচি শুরু করে। সকালে নুহাশপল্লীতে আসেন হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নিশাত। পরে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, তার ছেলে নিনিত ও শাওনের পিতা মোহাম্মদ আলী নুহাশপল্লীতে আসেন।
শাওন তার দুই ছেলে পিতা ও নুহাশপল্লীর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চির নিদ্রায় শায়িত হুমায়ূন আহমেদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া ও মোনাজাতে শরিক হন তার পরিবারের সদস্য এবং বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী।
সকাল ১১টার দিকে নুহাশপল্লীর হোয়াইট হাউজের সামনে দুই ছেলেকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের কেক কাটেন শাওন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘নুহাশপল্লীটা হুমায়ূন আহমেদ করেছিলেন গাছ লাগানোর জন্য। হুমায়ূন আহমেদ বলতেন বাংলাদেশের মাটিতে হয় এমন সমস্ত গাছ এখানে থাকবে।
গাছের প্রতি প্রেম ও ভালবাসার কারণে নুহাশপল্লীটা তৈরী হয়েছে। যখন যেখানেই দূর্লভ কোন গাছ পাওয়া যায় তা আমরা সংগ্রহ করে নুহাশপল্লীতে রোপন করি। গাছ দিয়েই নুহাশপল্লীর পরিচয় হচ্ছে গাছেনর মাধ্যমে। তাই নুহাশপল্লীকে নিয়ে নতুন করে কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।’
তিনি জানান, নুহাশপল্লীতে একটি স্যুটিং ফ্লোর ছিল সেটি এখন অচল হয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর কিছু কাজ ওই ফ্লোরে করা হয়েছিল। এখন সেটিতে কোন কাজ করা হয় না তাই এটি এখন অচল হয়ে পড়ে আছে।
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে হলুদ পাঞ্জাবী ও শাড়ি পড়ে একদল হিমু নুহাশপল্লীতে এসে হুমায়ূন আহমেদের কবরে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী এবং স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা নুহাশপল্লীতে আসেন।
১৯৪৮ সালের এই দিনে তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার ছায়া সুনিবিড় প্রত্যন্ত কুতুবপুর গ্রামে বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের কোলে জন্মগ্রহণ করেন।
তার জন্মস্থানের বিভিন্ন এলাকার নাম বারবার তার লেখার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। ছেলেবেলায় তার ডাকনাম ছিল কাজল। তার পুলিশ কর্মকর্তা বাবাও একজন লেখক ছিলেন। জনপ্রিয় দুই লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব তার ছোট দুই ভাই।
বাবা পুলিশ অফিসার হওয়ায় বদলিজনিত কারণে বিভিন্ন জেলায় পড়াশোনা করতে হয়েছে তাকে। সেজন্য তিনি সর্বশেষ বগুড়া জিলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করেন। ১৯৬৭ সালের এইচএসসি পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে।
এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে ডিস্টিংশন নিয়ে অনার্সসহ এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। সেখানে মাত্র ছয় মাস থাকার পরই তিনি চলে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে।
কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ছিলেন শিক্ষক, সমাজসেবী, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, চিত্রকর, চিত্রনাট্য লেখক, নাট্যনির্দেশক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রবন্ধকার ইত্যদি। সাহিত্যের সব জায়গায় ছিল তার সরব উপস্থিতি। কখনও আবার রং-তুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়েছেন ক্যানভাসের রংহীন সাদা স্থান। পিছিয়ে ছিলেন না নির্মাণেও। ছোটপর্দা, বড়পর্দায় তার নানা সৃষ্টি বাঙালির মনে দাগ কেটে থাকবে হাজার বছর।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণে করেন। পরে ২৪ জুলাই তাকে নুহাশপল্লীর লিচু তলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ