সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে বেশ আলোচনা দেশজুড়ে। কিন্তু এটি কারা নিশ্চিত করে? কোন পদ্ধতিতে করা হয়? সাধারণ মানুষ যদি অনিরাপদ মনে করে কোন খাবার তাহলে সেটা নিয়ে তারা কোথায় যাবে?
‘সব জায়গায় গেলে দেখা যায় বড় বড় সার্টিফিকেট, আইএসও, বিএসটিআই…কিন্তু আসলে এরা কি দেখেশুনে সার্টিফিকেশন করছে নাকি শুধু নামে মাত্র?’—বলছিলেন মেহেদী হাসান, বগুড়ার একজন ব্যবসায়ী। দিনের বেলা সাধারণত বাইরে রেস্টুরেন্টেই খেতে হয় তাকে। নিরাপদ খাদ্যের প্রসঙ্গটি তুলতেই এমন ক্ষুব্ধ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
শুধু মেহেদী নন সাধারণ ভোক্তাদের অনেকেই এখন নিরাপদ খাদ্য বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন দেখা যায়।
ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাকসুমা সুরভী যেমন বলছিলেন, খাওয়ার সময় একটু তো শঙ্কা থাকেই, কিন্তু উপায় কী বলেন? আর এসব নিয়ে কোথায় যাবো?
বাংলাদেশে যে কোন খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের। তবে সংস্থাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে বলতে গেলে।
২০১৩ সালে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন পাশ করে। এরপর ২০১৫ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সরকারের এই সংস্থাটি পুরোদমে কাজ শুরু করতে পেরেছে ২০২০ সাল থেকে।
এখনো নানা সীমাবদ্ধতার কথা বিবিসিকে বলছিলেন সংস্থাটির খাদ্যভোগ ও ভোক্তা অধিকার বিভাগের সদস্য মো: রেজাউল করিম। ‘আমাদের খুবই সীমিত লোকবল নিয়ে আমরা সারা বাংলাদেশে কাজ করার চেষ্টা করে চলেছি। প্রতিটি জেলায় আমাদের মাত্র একজন করে কর্মকর্তা রয়েছেন। তাকেই পুরো ফুড চেইনটা দেখতে হয়।‘
এই কর্মকর্তা বলছিলেন উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোগ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্য অনিরাপদ হতে পারে। আর এক্ষেত্রে তারা কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করে থাকেন।
*রাসায়নিক মিশ্রন-যেমন সার বা কীটনাশকের ব্যবহার
*জৈবিক বা অনুজীবের দূষণ-এটি পরিবেশ দূষণ থেকেও হতে পারে
*খাদ্য সংরক্ষণ-সঠিক তাপমাত্রায় সঠিক মোড়কে ঠিকঠাক সংরক্ষণ করা না হলে
*ভৌত দূষণ-যা মানুষের শারিরীক স্পর্শ বা স্থাপনা থেকেও হতে পারে
তবে খাবার উৎপাদন থেকে পরিবেশন ও গ্রহণ পর্যন্ত সবগুলো প্রক্রিয়ায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে তিনি সবচেয়ে বেশি গূরুত্ব দিচ্ছেন।
আর এসব ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করাই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রধান কাজ বলছেন মি. রেজাউল। ‘’আমাদের আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, যারা খাবার গ্রহণ করে-ভোক্তা, তাদের সচেতন করা, প্রশিক্ষিত করা, খাবার নিরাপদ করার ক্ষেত্রে যে সমস্ত সাধারণ নিয়মাবলী আছে সেগুলো জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা। আমরা সেগুলো করে যাচ্ছি।‘’
তবে শুধু ভোক্তারা সচেতন হলেই খাদ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না, বরং সরকারের আরো জোরালো ভূমিকা নেয়া দরকার বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।
“সচেতনতা তৈরী হলেই কি মানুষ বুঝবে যে এই খাবার নিরাপদ না নিরাপদ নয়? সরকারের যে সমস্ত সংস্থা যারা বিভিন্ন অনুমতি দিয়ে থাকে, তাদেরকে ঠিকমত কাজ করতে হবে। তখন হয়তো ক্রেতারা একটু নিশ্চিন্তে কিনতে পারবে” – বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন।
যদি কোন খাবার অনিরাপদ মনে হয়?
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খাদ্যভোগ ও ভোক্তা অধিকার বিভাগের সদস্য মো: রেজাউল করিম বলেন এক্ষেত্রে ভোক্তা চাইলে নিজ উদ্যোগে কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে খাবার পরীক্ষা করতে পারে।
এছাড়া তাদের অফিসে সরাসরি এসে কিংবা ইমেইলেও অভিযোগ জানাতে পারে। তাছাড়া সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাদের ফোনেও অভিযোগ জানাতে পারবে তারা। এর বাইরেও একটি কলসেন্টার গড়ে তুলতে কাজ করছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
খাবারের অভিযোগ গ্রহণ করে থাকে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও। তবে খাদ্যে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইনি বাধার কথাও বলছেন মি. রেজাউল।
‘বাংলাদেশে খাদ্য ব্যবসা করতে এখনো পর্যন্ত কোন লাইসেন্স বা রেজিট্রেশন সিস্টেম নেই। আমরা সেটা আইন সংশোধনের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটি করা গেলে আমাদের কাজ অনেক এগিয়ে যাবে।’
তবে মি. রেজাউল এটাও বলেন নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা শুধু আইনের বিষয় নয়, এটা একটি সংস্কৃতির বিষয়। আর সেই সংস্কৃতি গড়ে তুলতে খাদ্য উৎপাদক, ব্যবসায়ী, ভোক্তা সকলের অংশগ্রহণের তাগিদ দেন তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/সূত্র: বিবিসি অনলাইন