বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দেশে শিশুদের প্রতি সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, শিশু গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা ও অপহরণের পর হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ দিনে ১৩ শিশু ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে।
সর্বশেষ ঘটনায় গত বুধবার নীলফামারিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুল ছুটির পর শ্রেণিকক্ষে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হবার পর এখন আপোষ রফার চেষ্টা চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১১ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৩টি শিশু নির্যাতন, দুটি শিশু ধর্ষণ এবং একটি শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।
আর ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে শিশু গণধর্ষণ বেড়েছে ৩৪ ভাগ, শিশুহত্যা বেড়েছে ২৩ ভাগ, অপহরণের পর হত্যা বেড়েছে ১৯ ভাগ, শিশু আত্মহত্যা বেড়েছে ৪০ ভাগ।
২০১৮ সালে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করেছে বেসরকারি পর্যায়ে ২৬৯টি উন্নয়ন সংস্থার মোর্চা সংগঠন ‘বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম’ (বিএসএএফ)।
এছাড়া বাংলাদেশের কন্যাশিশুরা গণধর্ষণ, বখাটেদের হামলায় জখম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পর্নোগ্রাফির শিকার হচ্ছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসময় ও বিচারহীনতার সংস্কৃতিই এই অবস্থার জন্য মূলত দায়ী।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর পরিচালক নাসিরুদ্দিন এলান বলেন, একটি অস্থির সমাজ ব্যবস্থায় নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে এসব অপরাধ বাড়ছে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ও অপরাধীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার সাথেও এরকম অপরাধের যোগসূত্র রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে প্রচলিত ফৌজদারী আইনের প্রয়োগের দুর্বলতা অপরাধীকে নিবৃত্ত করতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সমাজে শাস্তির দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে। তাছাড়া, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে অপরাধীরা যাতে অপরাধ করে পার পেয়ে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন, শিশুদের সুরক্ষায় অনেক আইন রয়েছে কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই এবং আইন থাকলেও অনেকাংশেই তা উপেক্ষিত। অপরাধ করার পরও অপরাধী আইনের আওতায় না আসা, অর্থের বিনিময়ে আপোশ করা ও মামলার ধীরগতির কারণে শিশু সহিংসতার ঘটনা সমাজে বাড়ছে।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুস সহিদ মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, শিশুদের প্রতি বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন বাড়ছেই। কোনো একটা কারণে এটা বাড়ে না। এটা একটা সামাজিক সমস্যা এবং সেটা অনেকগুলো কারণের সমষ্টি।
তিনি বলেন, শিশু নির্যাতন অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের বেলায় দেখা যায়, অভিভাবক অসচেতন বা আর্থিকভাবে দুর্বল, ফলে তারা আইনের আশ্রয় না নিয়ে অনেক কিছু ভাগ্যের ওপর সঁপে দেয়, আর আইনের আশ্রয় নিলেও বিচার পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় বলে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে সমাজের পেশিশক্তি ও প্রভাবশালীদের কারণে ভিকটিমকে সুবিচার পাওয়া থেকে সরে আসতে হয়। তাছাড়া, আমাদের দেশে সাক্ষী সুরক্ষা দেওয়ার কোনো আইন নাই।
তিনি মনে করেন, শিশু হত্যা, ধর্ষণ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্র যদি রাষ্ট্রের দিক থেকে তাগাদা থাকতে, তবে কাঙ্ক্ষিত বিচার পাওয়া সহজ হতো।
বাংলা৭১নিউজ/বিকে