নানা জটিলতায় আবারও বন্ধ হয়ে গেছে খুলনার ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ। ধীরগতি আর কয়েক দফা বন্ধ থাকায় ২০২১ সালে শুরুর পর এখন পর্যন্ত সেতুর কাজ হয়েছে মাত্র ৪.৫ শতাংশ। এখনও ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়া, নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকটে কাজ করতে পারছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে দ্রুত জটিলতা কাটিয়ে কাজের গতি বাড়ানোর কথা জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী উপজেলা দিঘলিয়াকে শহরের সঙ্গে যুক্ত করতে ২০২১ সালে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ, কেডিএ থেকে অনাপত্তিপত্র না পাওয়াসহ নানা জটিলতায় কাজে ছিল ধীরগতি। সম্প্রতি সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের ভূমি অধিগ্রহণ হলেও হয়নি শহর প্রান্তের ভূমি অধিগ্রহণ কিংবা রেলওয়ের সঙ্গে জমি হস্তান্তর চুক্তিও। অন্যদিকে ধীরগতিতে চলমান কাজও পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে।
আর তাতে দুই বছরেরও বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত সেতুর মূল অবকাঠামোর অগ্রগতি মাত্র ৪.৫ শতাংশ। সেতুর ৩০টি পিয়ারের মধ্যে মাত্র তিনটিতে থমকে আছে নির্মাণকাজ। ৩০৮টি সার্ভিল পাইলের মধ্যে নির্মাণ হয়েছে ৪৬টি। নির্মাণে ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ নদীর দুই পাড়ের মানুষ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ফেরি কিংবা ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে পার হতে হয় তাদের।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘শহরে যেতে আমাদের এ নদী পার হতে হয়। এ জন্য এখানে সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু দু-বছর ধরে কিছুটা কাজ হয়ে আবার বন্ধ হয়ে যায়। এটা খুবই অগ্রহণযোগ্য।’
মোটরসাইকেলে দিঘলিয়া থেকে প্রতিদিন শহরে কাজে বের হন মোতালেব মিয়া। কিন্তু এ নদী পার হতেই দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাকে। ট্রলারে মোটরসাইকেল পার হতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। আর তা না হলে আধা ঘণ্টার বেশি অপেক্ষায়ও পাওয়া যায় না ফেরি। তিনি বলেন, ‘এ নদীতে সেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেতু নির্মাণে কোনো অগ্রগতিই দেখছি না। যারা দায়িত্বে আছে, তাদের এ বিষয়ে আরও তদারকি করা উচিত, যাতে সময়মতো সেতুর কাজটা শেষ হয়।’
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা আর নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে কাজ বন্ধের কথা জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন।
প্রকল্প কর্মকর্তা এসএম নাজমুল বলেন, ‘আমাদের এখনও ভূমি বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। আমরা কাজ করব কীভাবে? যেসব জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছে, সেসব জায়গায় কাজ চলছিল। তবে সম্প্রতি রডের ক্রাইসিস হওয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। আশা করি দু-এক দিনের মধ্যেই আমরা রড পেয়ে যাব। এরপরই কাজ আবার শুরু করতে পারব।’
খুলনার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণে বেশ কয়েকটি সভা হয়েছে। সভায় ইতিবাচক ফল এসেছে। এখন শহর প্রান্তের ভূমি অধিগ্রহণ আমরা দ্রুতই করে ফেলব। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও আমরা তাগিদ দিচ্ছি যাতে কাজের গতি বাড়ে।’
ভূমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য জটিলতা কাটিয়ে কাজের গতি বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন। তিনি বলেন, ‘রেলওয়ের সঙ্গে জমি হস্তান্তর চুক্তি আর শহর প্রান্তের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা ছিল। সেসব জটিলতা কাটানোর জন্য আমরা অন্তত তিনটি সভা করেছি। সভায় ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই সব জটিলতা দূর হয়ে যাবে।’
খুলনা ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১.৩১৬ কিলোমিটার; ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা।
বাংলা৭১নিউজ/এবি