কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কের প্রায় ২০টি ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় এলাকাবাসীকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রায় দুই বছর ধরে ব্রিজ-কালভার্টগুলো ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এলজিইডি থেকে সেগুলো নির্মাণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডাকাতিয়া নদীবেষ্টিত সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কে চারটি ব্রিজ ও জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কে তিনটি ব্রিজ সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ ও কালভার্টগুলো দিয়ে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মালবাহী ট্রাক, পিকআপভ্যান, মোটরসাইকেলসহ ছোট-বড় যানবাহনকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
ডাকাতিয়া নদী ও শাখা খালের উপর নির্মিত বিভিন্ন সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ-কালভার্টগুলো যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজগুলোতে ব্রিজের রেলিং নেই, ব্রিজে যানবাহন উঠলে সেটি কেঁপে উঠে, কোথায়ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজে স্টিলের পাত উঠে গেছে, সিমেন্টের ঢালাই সরে গেছে, কাঠ ফেলে কোনভাবে যানবাহন যাতায়াতের উপযোগী করা হয়েছে। আবার কোন-কোন ব্রিজের উপর হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সেখানে আবার যাবনাহন উঠার ব্যবস্থাও নেই।
উত্তর সাতবাড়িয়া গ্রামের রমজান আলী, কবির আহম্মেদ, নাইয়ারা ও চৌকুড়ি গ্রামের ইসমাইল, আবদুল মতিন বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে উত্তর সাতবাড়িয়া ও নাইয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ দিয়ে ছোট, বড় যানবাহন দিয়ে এলাকাবাসী ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করছেন। ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনায় জীবনহানীর আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুত ব্রিজগুলো পুনর্নির্মাণের দাবি জানান তারা।
জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ-কালভার্টগুলো গত ২৫/৩০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। গত দু বছর ধরে ব্রিজ-কালভার্টগুলো ভেঙে পড়ায় এলাকাবাসীকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ইতিপূর্বে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) প্রধান কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ-কালভার্টগুলো নির্মাণে বার-বার তথ্য প্রেরণ করা হলেও দীর্ঘদিনেও সেগুলো পুনর্নির্মাণ করা হয়নি।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বক্সগঞ্জ-বড়কালী-সাতবাড়িয়া সড়কের ডাকাতিয়া নদীর শাখা খালের উপর সাতবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন উত্তর সাতবাড়িয়া ব্রিজ, সাতবাড়িয়া-চৌকুরী-শিহর বাজার সড়কের ডাকাতিয়া নদীর উপর সাতবাড়িয়া ব্রিজ, নাইয়ারা ব্রিজ, সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন সংলগ্ন ব্রিজ বেহালদশায় পরিণত হয়েছে।
এছাড়াও বাসডাঙ্গা ব্রিজ, ঘোড়াময়দান ব্রিজ, লুদুয়া পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন ব্রিজ, বাইয়ারা-মানিকমুড়া সড়কের দুয়ারিয়া নামকস্থানে খালের উপর ব্রিজ, একই সড়কে এক কিলোমিটার দূরে আরেকটি ব্রিজ, ঢালুয়া-চাঁন্দগড়া-চডিয়াবাজার সড়কে চাঁন্দগড়া ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে প্রায় ৮/১০টি ছোট কালভার্ট ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে মাহিনী-লক্ষ্মীপদুয়া সড়কের তালতলা কালভার্ট, উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের বটতলী-রাজারবাগ সড়কের কালভার্ট, মানরা-ভবানিপুর সড়কের মানরা বাজার থেকে পূর্ব দিকে কালভার্টসহ ৮/১০টি কালভার্ট দীর্ঘদিন থেকে ভেঙে যাওয়ায় ছোট-বড় যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. আশরাফুল হক বলেন, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে ডাকাতিয়া নদী ও শাখা খালের উপর উল্লেখিত প্রত্যেকটি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এলাকাবাসীকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছোট-বড় যানবাহনসহ এলাকাবাসীকে যাতাযাত করতে হচ্ছে।
ব্রিজ-কালভার্টগুলো নির্মাণ হলে যাতায়াত ব্যবস্থা সচল হবে।
উপজেলা ও গ্রামীণ সড়কে একশ মিটার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ব্রিজ-কালভার্টগুলো নির্মাণের জন্য প্রাক্কলন ব্যয় তৈরি করে এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ছোট-ছোট ক্ষতিগ্রস্ত কালভার্টগুলো উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এবি