বাংলা৭১নিউজ, মাহবুব রহমান সুমন, ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি: এক সময়কার খরস্রোতা ধরলা নদী এখন শুকিয়ে বুকে চর জাগায় নালার মত প্রায়! এ নদী ভারতের কর্ণপুর হয়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের মোগলহাটে প্রবেশ করেছে। মাত্র ৫৫ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্য ধরলা নদীটি ফুলবাড়ী উপজেলার ছয়টির মধ্যে চারটি ইউনিয়ন-নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, ফুলবাড়ী ও বড়ভিটা মাঝ দিয়ে একেঁবেকেঁ দুই শতাধিক চর সৃষ্টি করে কুড়িগ্রাম সদরের অদুরে যাত্রাপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলে গেছে।ধরলা প্রতিবছর ফুলবাড়ীবাসিকে বর্ষায় প্লাবিত করে কাঁদায়, আর শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে তৃষ্টায় বুক ফাটিয়ে দেয় ।
ধরলা নদী এলাকা ঘুরে দেখা ও গত কয়েকদিন ধরে সংগ্রহ করা তথ্যে জানা যায়, বর্ষায় প্রমত্তা ধরলা নদী পানি শুকিয়ে নালার মত হয়েছে।প্রতিবছর ফাল্গুন মাস শুরু হলেই চরগুলো ভেসে ওঠতে। স্বাভাবিক জীবনযাপন দূর্বিসহ হয় ধরলার চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার মানুষের।নৌ-পথে চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।
ধরলার পানির স্তর নিচে নামায় কয়েক বছর ধরে উপজেলার সোনাইকাজী গ্রামে ধরলার পাড়ে বিএডিসি’র গভীর নলকূপটি দিয়ে এখন আর পানি উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় কৃষক মিঠু(৩২), ইলিয়াছ(৩৫) ও লায়ন(৪৫) জানান, ধরলায় এখন আর পানি নেই। প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত গভীর নলকূপটি এখন অকেজো।
শিমুলবাড়ীর যতীন্দ্রনারায়ন, চরের সুধীর চন্দ্র রায়(৫৫), চর-গোরক মন্ডপের সাহাদ আলী(৪৫) ও সাইদুল(৩৩) জানান, শুধু বর্ষা মৌসুমে ধরলার দাপট বোঝা যায়, এখন শুধু চর আর চর। আগে তবুও লম্বা দেশি জাতের বোরো ধানের চাষ করা যেত কিন্তু কয়েক বছর ধরে পানি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় তাও আর সম্ভব হচ্ছে না।
ধরলা পাড়ের নৌকা চালক আবুবক্কর(৫৫), শাহীন(৩২), সফিকুল(৩৫) জানান, শুকনা মৌসুমে নৌকা চালাতে কষ্ট হচ্ছে। পনের মিনিটের নদী এখন পারি দিতে সময় লাগচ্ছে আধা ঘন্টা। প্রতিবার পারাপারে নৌকা চরে আটকায়।
ধরলার পাড়ের জেলে খোকা(৪০), আনন্দ(৩৮) ও সুকান্ত(৩৭) জানান, ধরলা এখন প্রায় মরা। পানি আগের মত না থাকায় মাছের পরিমানও কম, জাতও কম। অনেক জাতের মাছ এখন আর পাওয়া যায় না। বর্তমানে ধরলা নদীতে সারাদিন জাল দিয়ে মাছ ধরে ৭০-৮০ টাকার মাছ পাওয়া যায় না।
কুলাঘাট খেয়াঘাটের মিনার(৫৯), আনছার মেম্বার(৬৫), আব্দুল(৪৫) ও আমিনুল(৪৮) জানান, এক সময়ে দেশের পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জের লোকজন বড় বড় নৌকা নিয়ে ব্যবসা করার জন্য এই এলাকায় আসতেন, কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় তারা আর এখানে আসেন না। আগের ব্যাবসাগুলোয় ভাটা পড়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার জানান, ধরলা নদীটি খনন করে এর গভীরতা বাড়িয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা গেলে নদীটি আবার তার খরস্রোতা ফিরে পাবে। এখনকার ধরলা নদী আসলে উন্নয়নের বড় অন্তরায়।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস