সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে ক্রমশ বাড়ছে বাঘের সংখ্যা, এমনই দাবি পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রীর৷ তার বক্তব্য, বাংলাদেশ থেকে বাঘ ভারতে চলে যাওয়ায় সংখ্যা বাড়ছে৷ সত্যিই কি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশ থেকে ‘দেশান্তরী’ হচ্ছে?
সুজলা-সুফলা বাংলায় বাঘের উপস্থিতি অনেকটা কোহিনুরের মতো৷ ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে রক্ষা করতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের অংশে বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বেগে ছিলেন সেখানকার প্রকৃতিপ্রেমীরা৷
তাই বাঘ বাঁচাতে বেসরকারি উদ্যোগে সুন্দরবনে শুরু হয় ‘সেভ টাইগার, সেভ বেঙ্গল’ শীর্ষক সচেতনতামূলক প্রচার৷ এখন বাঘের সংখ্যা বাড়ছে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে৷ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বাঘও জুড়ছে, এমনটাই দাবি পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের৷
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা
ভারতীয় সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরে শুমারিতে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছিল ৯৬টি৷ চলতি বছরের শুমারির চূড়ান্ত ফলাফল যদিও এখনো আসেনি তবে পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী বলছেন, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে৷
ভারতের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন ‘‘গত বছরের শুমারি অনুযায়ী, এ রাজ্যের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৯৬৷ চলতি বছরের শুমারির তথ্য ও ছবি হায়দরাবাদে পাঠানো হয়েছে৷ তার রিপোর্ট এখনো আসেনি৷ তবে বাঘের সংখ্যা বাড়ার ঈঙ্গিত মিলেছে৷ নতুন ২৭টি রয়েল বেঙ্গলের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে৷’’
নতুন ২৭টি বাঘ বিবেচনায় নিলে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২৩-এ৷
দুই দেশ মিলিয়ে সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার৷ এর সিংহভাগ বাংলাদেশের অন্তর্গত৷ ছয় হাজার কিলোমিটার বাংলাদেশের অন্তর্গত৷ বাকি চার হাজার কিলোমিটার ভারতে৷
পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতের আরো কয়েকটি দ্বীপের বাঘের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন আধিকারিকরা৷
জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘সুমারি করার সময় রামগঙ্গা ও অন্যান্য অঞ্চলের পাঁচটি দ্বীপে বাঘের সন্ধান মিলেছে৷ এই দ্বীপগুলিকে বাঘ সংরক্ষণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে৷ এখানকার বাঘের সংখ্যাটাও যোগ হবে৷’’
খাবারের খোঁজে?
পশ্চিমবঙ্গে বন দপ্তর সূত্রের খবর, বাংলাদেশে বাঘের খাবার পর্যাপ্ত নেই৷ খাবারের টানে রয়্যাল বেঙ্গল ভারতীয় অংশে চলে আসছে৷ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অরণ্যে বাঘের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের জোগান রাখা হয়েছে যাতে চতুষ্পদরা গ্রামে ঢুকতে না পারে৷
বনমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘বাদাবনে বাঘের খাদ্যের যাতে টান না পড়ে, সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ গভীর জঙ্গলে হরিণ ও শূকর নিয়মিত ছাড়া হয়৷ বাংলাদেশের অংশে এই খাবারের অভাব রয়েছে৷ তাই বাঘ এদেশে (ভারতে) চলে আসছে৷’’
বিশেষজ্ঞদের ভিন্নমত
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন পরিবেশ আধিকারিক প্রণবেশ সান্যাল সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘কোভিডের জেরে বছর দুয়েক অরণ্যে মানুষের যাতায়াত কম ছিল৷ সেই সুযোগে বাঘের ছানা নিশ্চিন্তে বেড়েছে৷ তাই ঘন ঘন বাঘ দেখা যাচ্ছে৷ প্রাপ্তবয়স্ক বাঘের সংখ্যা সুন্দরবনে বেড়েছে৷ তার মানে বাংলাদেশের বাঘ চলে এসেছে, এটা ভ্রান্ত ধারণা৷’’
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরাও একই সুরে কথা বলেছেন৷ প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রায়মঙ্গল নদী দুই দেশের সীমান্তে রয়েছে৷ সেটা পার হয়ে বাঘ ভারতের দিকে চলে আসছে, এটা বলার মতো প্রমাণ আমাদের হাতে নেই৷ তবে বাঘ বাড়ছে, সেটা স্বাভাবিক নিয়মে যেমন বাড়ে৷’’
এদিকে ডবব্লিওডবব্লিওএফ-এর সুন্দরবন প্রোগ্রাম অধিকর্তা অনামিত্র অনুরাগ দণ্ড ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতীয় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা স্থিতিশীল৷ ৯৬টির ছবি উঠেছে৷ আরো কয়েকটা বেশি থাকতে পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশে খাবার অভাব বা সেজন্য বাঘের ভারতে চলে আসা, এটা ঠিক বলে মনে হয় না৷’’
পশ্চিমবঙ্গের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্তা শিবাজী ভট্টাচার্য বাঘের দেশান্তরের বিতর্ককে বিজ্ঞানের চোখে দেখছেন৷ তাঁর মতে, ‘‘বাঘ সীমান্ত বোঝে না৷ ওরা খাবার বা নিরাপত্তার খোঁজে অন্যত্র চলে যায়৷ প্রজননের সময় বাঘিনী অনেক দূরে গিয়ে পুরুষ সঙ্গীকে খুঁজে নেয়৷ এসব উদ্দেশ্যে যদি বাঘ এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলেও যায়, সেটাকে আমাদের মতো করে ভাবলে চলবে না৷ ওরা এলে, চলেও যেতে পারে৷ এতে বাংলাদেশের কোনো চিরস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে কি না, তা আমার জানা নেই৷’’
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ